ইতিহাস বলছে ১০০ বছর পরপর ঘুরে আসে মহামারি। এ বছর বিশ্বে দেখা দিল নভেল করোনাভাইরাস(কভিড-১৯) মহামারি। ১৯২০ সালে এসেছিল স্প্যানিশ ফ্লু, ১৮২০ সালে কলেরা আর ১৭২০ সালে প্লেগ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব মহামারি বদলে দিয়েছে সমাজ ও রাজনীতির সমীকরণ।
করোনাভাইরাস ২০২০ সালে বিশ্বে মহামারি ঘটালো। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ২১২ দেশ ও অঞ্চলে। আক্রান্ত প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ এবং মৃত্যু তিন লাখের বেশি। করোনা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। স্কুল, কলেজ, উপাসনালয় বন্ধ। লকডাউনে অচল অর্থনীতির চাকাও।
১০০ বছর আগে ১৯২০ সালে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে এসেছিল স্প্যানিশ ফ্লুতে। ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী এই ফ্লুতে আক্রান্ত হয় ৫০ কোটি মানুষ। মারা যায় ৫ কোটি। স্প্যানিস ফ্লু নাম হলেও এর উৎপত্তি স্পেনে ছিলো না। কেবল স্পেন এই ফ্লুর সঠিক তথ্য প্রকাশ করায় কালক্রমে নাম হয় স্প্যানিশ ফ্লু।
১৮২০ সালে বিশ্ব মুখোমুখি হয় মহামারি কলেরার। ১৮০০ সালে প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে চলে ১৮২৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ২০ সালেই পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। এশিয়াটিক কলেরা নামে পরিচিত এই অতিমহামারি শুরু হয় কলকাতার ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে। পরে এটি ছড়িয়ে যায় চীন, ইউরোপ, গ্রেট ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে। সেসময় বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
১৭২০ সালের মহামারি প্লেগের আগ্রাসন হয়। দুই বছরে গ্রেট প্লেগ অব মার্সেইতে ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। যদিও মধ্যযুগের ইতিহাস গবেষক ফিলিপ ডেইলিভার তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, চার বছর মেয়াদি প্লেগ মড়কে ইউরোপের প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা যায়। প্রাচীন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক এ মহামারিই ইউরোপে ‘ডার্ক এজ’ এর সূচনা করেছিল।
এছাড়া বিশ্বে দেখা দেয় আরো বেশ কয়েকটি মহামারি। ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডসবাসীর মাধ্যমে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে গুটিবসন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ইতিহাসবিদদের মতে, গুটিবসন্তে সে সময় প্রায় ২ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।
১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন’ মহামারিতে লন্ডনের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ধারণা করা হয়েছিল, কুকুর-বিড়ালের মতো গৃহপালিত পশুপাখির মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার হয়। লন্ডনের ৯০ শতাংশ মানুষ অজানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় শহরটি পরিণত হয়েছিলো মৃত্যুপুরীতে।
১৫২০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে আসা একজন আফ্রিকান দাসের মাধ্যমে গোটা অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে গুটিবসন্ত, যা বয়ে আনে ভয়ংকর মহামারি। সমসাময়িক গবেষণামতে, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ানদের বয়ে আনা জীবাণুর কারণে আমেরিকা মহাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।
মহামারির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চিত্র দেখা যায় ১৩৪৬ থেকে ১৩৫৩ সালে। এ মহামারি ব্ল্যাক ডেথ নামে কুখ্যাতি পেয়েছিল। প্লেগে আক্রান্ত হয়ে সাত বছরেই মারা গিয়েছিল অন্তত আট কোটি মানুষ। মধ্য এশিয়ার সমভূমিতে এই রোগের জন্ম। এরপর এটি সিল্ক রোড হয়ে ক্রিমিয়ায় পৌঁছায়।
ক্ষুদ্র অণুজীব সৃষ্ট মহামারি শুধু মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়নি, বদলে দিয়েছে সমাজ ও জীবনযাপনের রীতি। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনীতিতে ফেলেছে সুদূরপ্রসারী প্রভাব।