শিং মাছ চাষ করে অভাবকে জয় করেছেন উদ্দীপ্তমান এক তরুন। ডিগ্রি পাশ করে চাকুরীর জন্য ঘুরেছেন বহুদ্বারে। কিন্তু মেলেনি চাকুরী নামক সোনার হরিণ। তাইতো অভাবের তাড়নায় অন্যের জমিতে খেটেছেন কামলা। বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজির চাষাবাদ করে অভাবকে তাড়ানোর চেষ্টাও কম করেননি। দু’বছর আগে এক বন্ধুর পরামর্শে শিং মাছ চাষ করেন। তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বলছি, ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের শোলগাতিয়া বাজার এলাকার মো. আতাউর গাজির কথা। বহু স্বপ্ন আর এক বুক আশা নিয়ে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ওঠেন। কিন্তু কলেজের খরচ আর পরিবারের চাপ তাকে বাধ্য করে আয়ের পথে যেতে। শুরু করে নতুন যুদ্ধ। টাকার বিনিময়ে অন্যের জমিতে কাজ করা। সাথে চলে পড়ালেখা। এইচএসসি পাশ করে ওই কলেজেই আবার ভর্তি হন ডিগ্রিতে। এক সময় ডিগ্রিও পাশ করেন। এবার চাকরীর জন্য ঘুরতে থাকেন চাকরী দাতাদের দ্বারে।
এরই মধ্যে কয়েকজন চাকুরী পাইয়ে দেবার কথা বলে তার পরিশ্রমের জমানো টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু মেলেনি সরকারি বা বেসরকারি একটা চাকরী। তখন মাথায় চিন্তা এলো। আর নয়। এবার নিজে কিছু করবো। শুরু করেন বাড়ির আঙিনায় কৃষি কাজ। মোটামুটি চলছিলো। এমন সময় এক বন্ধু তাকে মাছ চাষের পরামর্শ দেয়। বন্ধুর প্রতি আস্থা আর বিশ্বাসের কারণে আতাউর মাছ চাষের জন্য অন্যের জমি বর্গা বা লিজ নেয়। স্থানীয় মৎস্য অফিসের পরামর্শে এক পুকুরে সাদা মাছের সাথে চাষ করে শিং মাছ।
পুকুরে প্রতিদিন দিতে হয় মাছের খাবার। খরচ বাড়তে থাকে। কৃষি ব্যাংক থেকে করেন কৃষি লোন। এখন সময় হয় মাছ ধরার। প্রথমবার খরচ বেশি ছিল। তাই লাভ একটু কম হয়। পরের বার, সেখান থেকে ৩ লক্ষাধিক টাকার মাছ বিক্রি করেন আতাউর। স্বপ্ন যেন সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে তার জালে। এবার ৩০ শতাংশ এবং ১৫০ শতাংশ জমির দুটি ঘের হয়েছে তার। যা লিজে নিয়েছেন। প্রতি বছর বিঘা প্রতি (৩৩ শতক) তাকে গুনতে হয় ১৬ হাজার টাকা। তাতেও খুশি এই তরুণ।
এখন এলাকার অনেকের কাছে একজন আদর্শ্য মৎস্যচাষী আতাউর। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, উপজেলায় ১২৫ জন শিং মাছ চাষী রয়েছে। শিং মাছ চাষের ঘেরের আয়তন ২৫ দশমিক ৬০ হেক্টর। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উৎপাদন হয় ২১৬ দশমিক ১৩ মেট্রিক টন। উদ্দিপ্তমান তরুণ মৎস্যচাষী মো. আতাউর গাজি জানান, অভাবকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। চাকরীর জন্য কয়েকবার ঠকেছি। হাল ছাড়িনি। এখন মাছ চাষী। ভালই আছি মা-বাবাকে নিয়ে। সংসারের অভাবকে পেছনে ফেলে এখন স্বপ্ন আমার সফল চাষী হওয়ার।
ময়মনসিং থেকে শিং মাছের পোনা কিনে আনতে হয়। সেই মাছ ৪/৫ মাসের মধ্যে বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যায়। শিং মাছের জন্য আলাদা খাবার প্রয়োজন হয় না। পুকুরের অন্য সাদা মাছের খাবারের উচ্ছিষ্টই খেয়ে থাকে শিং মাছ। বাজারে এ মাছের চাহিদাও বেশ। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বক্কর সিদ্দীক জানান, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২৫ দশমিক ৬০ হেক্টর ঘেরে ১২৫ জন চাষী শিং মাছের চাষ করে।
শিং মাছে আয়রণ ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ উপাদানের পরিমাণ বেশি। তাই প্রাচীনকাল থেকেই রক্তশূন্যতার রোগীদের শিং মাছ খেতে বলা হয়। এটি হাড়ের ঘনত্বও বাড়ায়। ১০০ গ্রাম শিং মাছে ২২ দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিন, ৬৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম আয়রণ রয়েছে। বাজারে শিং মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চাষিরা বাজারে ভালো দাম পায়। শিং মাছ চাষ বেশ লাভজনক। উপজেলায় শিং মাছ চাষ সম্প্রসারণে মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।