রাজশাহীর তানোর পৌর সদরে একমাত্র কারিগরি কলেজে সিনিয়র প্রভাষককে রেখে ফের অনিয়মের মাধ্যমে জুনিয়র প্রভাষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে উঠেছে নানা অভিযোগ। এঅনিয়মের প্রতিবাদে গভর্নিং বডির তিন সদস্য সভা বয়কট করেছেন। গত শনিবার দিনব্যাপী বিদায় ও দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বিশাল ভোজ সভার আয়োজন করা হয়।
আয়োজনে কমিটির সদস্যরা না থাকলেও সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপস্থিত ছিলেন। জুনিয়রকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে ভাইরাল হয়ে উঠে। এঅনুষ্ঠানে কলেজের দাতা সদস্য ছাড়াও অন্যরা উপস্থিত থাকলে আরেক অসহায় দাতা মৃত ছাহেরার পরিবারের কোন সদস্যকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। আবার খাবার লুকানো নিয়ে পিয়ন এক অফিস সহকারীকে জুতা তুলেন মারতে ও বক্তব্য দেয়া নিয়েও ঘটে নানা প্রতিক্রিয়া।
জানা গেছে, চলতি মাসের ৭ অক্টোবর তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া নিয়ে কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো ও সদস্যরা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ইউএনও জুনিয়র প্রভাষক অসিম কুমার সরকারকে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে দায়িত্ব দিতে চান। কিন্তু এর তিব্র বিরোধিতা করেন কমিটির বিদ্যুৎশাহী সদস্য পৌর যুবলীগের সভাপতি রাজিব সরকার হিরো, শিক্ষা অনুরাগী প্রতাপ সরকার এবং এমপির প্রতিনিধি উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা মহিলা লীগ নেত্রী সোনিয়া সরদার। তারা শুধু ওই সভায় না গত শনিবারের বিশাল ভুঁড়ি ভোজের সভাও বয়কট করেন।
হিরো জানান, আমরা তিনজন ৭ তারিখের সভায় পরিষ্কার ভাবে বলেছিলাম নিয়ম অনুযায়ী যিনি দায়িত্ব পাবেন তাকেই দেয়া হোক। কিন্তু ইউএনও কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে শ্রী অসিম কুমার সরকারকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত অটুট থাকেন। সে জন্য আমরা ওই সভাও বয়কট করেছিলাম এবং শনিবারের সভাও বয়কট করেছি। তিনি আরো জানান ইউএনও এখানে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন। একজন আইনের কর্মকর্তা হয়েও তিনি আইন মানছেন না এবং আমাদের কোন কথাই তিনি গ্রহণ করেননি। এসব আমলাদের জন্য আজ সরকারের যত বদনাম। আমরা এর নিন্দা জানিয়ে বলতে চাই অতিশিঘ্রই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নিয়ম অনুযায়ী যার প্রাপ্পতা তাকে ফিরিয়ে দেয়া হোক।নইলে এঘটনায় কোন এক সময় বিস্ফোরণ ঘটবে।
এদিকে কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত থেকে আট শতাংশ জমি কম হয়। সেই জমি বিধবা মৃত ছাহেরার পরিবারের যে কোন সদস্যকে চাকুরী দেওয়ার নামে নেয়া হয়। কিন্তু চাকুরী তো দূরে থাক ২০ বছরে তাঁর পরিবারের কোন সদস্যকে কমিটিতে যেতে পারেনি। সেই চাকুরীর শোকে মৃত বিধবা ছাহেরা বেগম গত বছর জুন মাসের ৮ তারিখে মারা যান। প্রতিষ্ঠানটি পৌর সদর গুবিরপাড়াগ্রামের উত্তরে এবং মুল রাস্তার পশ্চিমে অবস্থিত।
গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা জানান আসলে ছাহেরার পরিবার অসহায় এজন্যই চাকুরী তো হয়নি এমনকি কোন অনুষ্ঠানেও পাইনা দাওয়াত।
এনিয়ে জুনিয়ার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শ্রী অসিম কুমারের কাছে জানতে চাওয়া হয় সিনিয়র রেখে আপনি কিভাবে দায়িত্ব পেলেন এবং পিয়ন জুতা দিয়ে কেন মারতে চেয়েছে তিনি এড়িয়ে গিয়ে জানান আমার প্রতিষ্ঠান ডাচবাংলা ব্যাংকে আছি এখানে এলে বিস্তারিত বলা হবে। সেখানে গিয়ে অনেকক্ষুন দাঁড়িয়ে থাকার পর জানান এসব নিয়ে কথা না বলায় ভালো। এসব কিছু করা লাগবেনা বলে মিষ্টি খাওয়ার জন্য তিনশত টাকা দেন এই প্রতিবেদককে।তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হয় এমন অনুষ্ঠানে জমি দাতা মৃত ছাহেরার পরিবারের কোন ব্যাক্তি দাওয়াত ফেলনা কেন উত্তরে জানান আমি চিঠি করিনি বিদায়ী অধ্যক্ষ স্যার করেছেন।
বিদায়ী অধ্যক্ষ ইলিয়াস আলী মৃধার সাথে এবিষয়ে কথা বলা হলে তিনি জানান আমি নিজেই দাওয়াতের মেহমান। আমার কি করার আছে।
ফেসবুকে অনুষ্ঠানে ছবি দেখে একজন কমেন্ট করেন সিনিয়র রেখে জুনিয়ারকে করা হল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, জমি দাতা পাইনা দাওয়াত, তারপরও রইলো শুভ কামনা। এমন কমেন্ট দেখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দ্রুত ডিলেট করতে বলেন।
এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জানান কলেজের সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে প্রভাষক মরিয়ম ম্যাডাম, কামরুজ্জামান ও অসিম কুমার সরকার আবেদন করেন।এদের মধ্যে সিনিয়র হচ্ছেন মরিয়ম ও কামরুল। কিন্তু ইউএনও একক ক্ষমতায় কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে অসিমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার কারনে তিন সদস্য সভা বয়কট করেন।
আরেক জন জানান পৌর সদরে অসিমের মত যোগ্য ব্যাক্তি কমই আছে কারন তিনি উপজেলা শিল্পকলা সাহিত্য পরিষদ শ্বশন ডাচ বাংলা ব্যাংক সহ নানা দায়িত্বে রয়েছেন। যেহেতু অনেক দায়িত্ব পালন করে অভিজ্ঞতা আছে এজন্যই তাকে ভারপ্রাপ্ত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলেজ সভাপতি ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতোর মোবাইলে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয় জুনিয়রকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়ার কারনে তিন সদস্য সব কিছু বয়কট করেছেন তিনি জানান রেজুলেশনে তাদের স্বাক্ষর আছে সঠিক এসব বিষয়ে জানতে হয়।
পুনরায় কমিটির সদস্য পৌর যুবলীগের সভাপতি রাজিব সরকার হিরোর কাছে রেজুলেশনে স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান গত ৭ তারিখের সভায় উপস্থিতির স্বাক্ষর করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার জন্য কোন স্বাক্ষর করা হয়নি।