ত্রাণের দাবিতে অবরোধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের ইট-পাথর নিক্ষেপ ও হামলার শিকার বিপদগ্রস্থ পুলিশ সদস্যদের আশ্রয় দেয়ায় আশ্রয়দাতা প্রভাষকের বাড়ি ভাংচুর করেছে দূষ্কৃতিকারীরা।
এতে তার বাড়ির প্রবেশ পথের গেটসহ ঘরের দরজা ও দেয়াল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রভাষক মোঃ শফিকুল ইসলাম ফিরোজ। গত ২৪ এপ্রিল শুক্রবার রাতে তিনি তার শহরের সাহেবপাড়াস্থ বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এসময় তিনি বলেন, ত্রাণের দাবিতে এলাকাবাসীর অবরোধ কর্র্মসূচীকে পুঁজি করে কতিপয় দূর্বৃৃত্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পুলিশ প্রশাসনের উপর ইট-পাথর নিক্ষেপ করে এবং লাঠি সোটা নিয়ে ধাওয়া করে। এতে ৩ জন পুলিশ সদস্য আমার বাসায় আশ্রয় নেয়। এসুযোগে ওই পুলিশ সদস্যদের খুঁজে বের করার নামে দূর্বৃত্তরা আমার বাড়ির প্রবেশ পথের টিনের গেটটি সন্ত্রাসী কায়দায় সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়ে। তাদের হামলায় ভীত সন্তস্ত্র হয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ ভাইদের রক্ষার চেষ্টা করি। কিন্তু হামলাকারীরা বাঁশের লাঠি ও পা দিয়ে লাথি মেরে আমার বাড়ির দেয়াল ও দরজায় বেধড়ক আঘাত করতে থাকে। এতে দেয়াল ও দরজা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এসময় হামলাকারীরা সন্ত্রাসীদের মত অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ প্রাণ নাশের হুমকি দিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন যে, হামলার সময় আমরা ঘরের ভিতরে ছিলাম তাই জানিনা কারা বাইরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছে। তবে পরে যে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে যে, সনু গোস্ত ওয়ালার ভাই, সাদ্দাম, সানি সরবত ওয়ালা, রিক্সা চালক জালাল, পাপ্পু, রকি, মানিক, গোপী, হানিফ মোড়ের মমতাজ, আরজুসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে এতে অংশগ্রহণ করে। বাড়ির গেট ভাঙ্গে মমতাজ ও মানিক।
পরে সৈয়দপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়দুর রহমান শাহিন ও যুবনেতা সোহেল আকতার এসে হামলাকারীদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। তারা না আসলে সন্ত্রাসীরা আমার বাসায় প্রবেশ করে মার ডাং করাসহ লুটপাট করতো বলেই আমি মনে করি। তা না হলে কি করে তারা প্রকাশ্য দিনের বেলায় প্রশাসনের উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং আমার বাড়ি ভাংচুর করে। তাদের উদ্দেশ্য কোনভাবেই আইনসঙ্গত ও ন্যায়সুলভ ছিলনা। আমার ধারণা তাদেরকে দিয়ে কোন একটি পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে।
সেটা রাজনৈতিক ব্যাপার। কিন্তু প্রশাসনকে সহযোগিতা করায় আমার বাড়িতে হামলা করাটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। আমি তাদের বিচার দাবি করছি এবং প্রশাসনকে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। তা না হলে ভবিষ্যতে এই দূর্বৃত্তরা আরও বড় ধরণের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাতে দ্বিধাবোধ করবেনা। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের সাহেবপাড়া তেঁতুলগাছ মোড় এলাকায় ১৩ নং ও ১৪ নং ওয়ার্ডের শতাধিক নারী-পুরুষ ত্রাণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। এসময় ওই দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা এসে অবরোধকারীদের কথা শোনার এক পর্যায়ে কতিপয় দূর্বৃত্ত তাদেরকে লাঞ্চিত করে। এতে পুলিশ বাধা দেয়ায় দূর্বৃত্তরা ইট-পাথর নিক্ষেপসহ লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে। এসময়ই পুলিশকে আশ্রয় দেয়ায় ওই প্রভাষকের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুরের ঘটনা ঘটায় দূষ্কৃতিকারীরা।
পরে উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল, সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খান অতিরিক্ত পুলিশসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পুলিশের উপর এধরণের হামলার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং সচেতন মহল এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সে সাথে প্রভাষক শফিকুল ইসলাম ফিরোজের বাড়িতে পুলিশকে আশ্রয় দেয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পূর্বক এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষ করে সৈয়দপুরের মত শান্ত শহরে যাদের ইন্ধনে পুলিশের উপর হামলার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার অবতারণা হয়েছে তাদের মুখোশ উম্মোচন করার দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।