রাজশাহীর তানোর পৌরসভায় প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ দেড় বছর অতিবাহিত হলেও সম্পন্ন না করেই ঠিকাদার লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাস্তার কাজের জন্য গত বছরের মার্চ মাসের দিকে নানা অনিয়ম ভাবে দরপত্র আহবান করে মোটা অংকের টাকার সুবিধা নিয়ে শহরের হাসনাথ নামের এক ঠিকাদারকে প্রকল্পের পুরো কাজ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে মেয়র বিএনপি নেতা মিজান সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর এবং কারযসহকারী মাহবুরের বিরুদ্ধে।
এ প্রকল্পসহ বিগত সময়ের প্রকল্পগুলোর নানা অনিয়ম তুলে ধরে এবং তিন কর্তাকে অভিযুক্ত করে দুদক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মমেনা আহম্মেদ লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সরেজমিন তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করতে আসলে মেয়রসহ তিন কর্তা বাবুরা ধামাচাপা দিয়ে ফেলেন বলেও একাধিক পৌর কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিশ্চিত করেন।এতে করে মেয়র যেমন পড়েছেন চরম ইমেজ সঙ্কটে সেই সাথে নিজ দলের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, এমনিতেই পৌরবাসী দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক সেবা বঞ্চিত থেকে ক্ষোভ-অসন্তোষে ফুঁসছে এরই মধ্যে ঠিকাদার লাপাত্তার খবর জানাজানি হলে পৌরবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
সুত্র মতে, বিগত ২০১৯ সালে মার্চ মাসের দিকে তানোর পৌরসভায় বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জলবায়ু প্রকল্প থেকে প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৭ টাকা বরাদ্দ দিয়ে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্রে একাধিক ঠিকাদার অংশগ্রহণ করে তবে পৌর মেয়র বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে লট্রারির পরিবর্তে নিজ ক্ষমতায় মেয়র ও সহকারী প্রকৌশলী এবং কারযসহ কারী রাজশাহী শহরের জনৈক হাসনাথ নামের এক ঠিকাদারকে সব কাজ পাইয়ে দেন বলে একাধিক ঠিকাদার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন সব কাজ একজন ঠিকাদার করছেন সেটাই অনিয়ম দুর্নীতির বড় প্রমাণ।
সুত্র জানায় এসব কাজগুলো চারটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। যার মধ্যে গোকুল গ্রাম থেকে তালন্দ বাজার রাস্তা ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৯৩ টাকা।কিন্ত্ত প্রায় এক বছর আগে রাস্তায় ইট-খোয়া ফেলে ঠিকাদার লাপাত্তা হয়ে পড়েন।যার কারনে ধান আলুর মৌসুমে পৌর এলাকার জনসাধারণের দুর্ভোগের শেষ নাই ।
অন্যদিকে কুঠিপাড়া গ্রামের জালালের বাড়ি থেকে গোল্লাপাড়া বাজার চেয়ারম্যান মার্কেট পর্যন্ত রাস্তা, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৫ টাকা তবে এই রাস্তায় এখানো কাজ শুরুই হয়নি।এছাড়াও কাশেম বাজার থেকে মরিজাম মসজিদ ও কালীগঞ্জ বাজার থেকে হাবিব নগর রাস্তা, যার
ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ লাখ ৮ হাজার ৮২৩ টাকা এখানো কোনো কাজ শুরু হয়নি । এদিকে গুবিরপাড়া গ্রামের রাস্তায় ফেলা হয়েছে নিম্মমানের ইট ও খোয়া, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। আবার তালন্দ উপর পাড়া আলতাব মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত্য রাস্তা যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা।
সংশ্লিস্ট এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইট খোয়া ফেলে রাখায় রাস্তায় চলাচল করতে তাদের অবর্নীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, মেয়রকে বার বার বলার পরেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তানোর পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, তার জানামতে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এদিকে মেসার্স এসকে ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সালমান ও মেসার্স মিলন কনস্ট্রাশনের স্বত্ত্বাধিকারী মিলন জানান শিডিউল ক্রয়, বিডি ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতিটি ঠিকাদারের প্রায় ৭০ হাজার টাকা করে লোকসান হয়েছে, তারা বলেন, মেয়র যদি লুকোচুরি করে কাজ দিবেন তাহলে কেন আমাদেরকে শিডিউল ক্রয় করিয়ে লোকসানে ফেললেন ? এই অন্যায়ের জবাব পৌরবাসি দিবেন, তাছাড়া কাজ না করেই ঠিকাদারকে কোটি টাকার উপরে বিল দেয়া হয়েছে।
তানোর পৌরসভার কার্য্যসহকারী (চলতিদায়িত্ব) মাহাবুর রহমান জানান, এসব কাজে ঠিকাদারের লোকসান হয়েছে, কাজ এখানো শেষ হল না তবে লোকসান হয় কিভাবে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে আপনারা বুঝবেন না বলে এড়িয়ে যান। মুঠোফোনে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম (০১৭১৫-৪০৮৮২২) এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কারচুপি করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়া হয়েছে আপনাদের কাছে প্রমান আছে, ঠিকাদার কাজ ফেলে রাখায় নাগরিকদের দুর্ভোগ হচ্ছে কাজ করছে না কেনো এই প্রশ্নের কোনো সদোত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন।
এবিষয়ে ঠিকাদার হাসনাথ জানান ফান্ডে টাকা না থাকার কারনে কাজ করা যাচ্ছেনা।মাত্র ২৫লাখ টাকা বিল তুলা হয়েছে। তবে কাজ করার জন্য নিজের আড়াই শতক জমি বিক্রি করেছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। তিনি এই কথাগুলো প্রায় তিন মাস আগে বললেও কোনভাবেই কাজ শুরু করেননি এবং কাজ কেন শুরু হচ্ছেনা পুনরায় জানতে তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ( ০১৭২৪-৩৩৮৮৫১) একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও কল গ্রহণ না করায় তার আর কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান (০১৭১৬-০৭৬১৩২) নানা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ফান্ডে টাকা নাই এই জন্য কাজ বন্ধ আছে, কবে কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি জানান টাকা আসলেই কাজ শুরু করা হবে।