কোনভাবেই খাওয়া দাওয়া কোন কিছুই সঠিক সময়মত করতে পারছেন না, দিন রাত সমান তালে কৃষি কাজেই শুধু ব্যস্ত না মহাব্যস্ত সময় পার করছেন বরেন্দ্র অঞ্চল নামে কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিখ্যাত হিসেবে ইতিপূর্বেই পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলা। এই উপজেলার জনসাধারণের আয়ের প্রধানতম উৎসই ধান, আলু উৎপাদন করা।
যদিও আমন ধান ইতিপূর্বেই কাটা হয়ে গেছে। বর্তমানে চলছে ধান মাড়াই আলু রোপণ এবং বোরো বীজ তলা তৈরিতে ব্যাপক ব্যস্ত সময় যাচ্ছে এউপজেলার সকল ধরনের জনসাধারণের। গত মৌসুমে আলুতে প্রচুর লাভ হওয়ার কারনে এবারও কমর বেঁধে নেমে পড়েছেন রোপণের কাজে। আর আলু রোপণের জন্য আলুর বীজ কাটা ও রোপণে সহায়তা করে যাচ্ছেন কৃষাণীরা। তারাও সংসারের যাবতীয় কাজ করে দিনে রাতে আলু কেটে দিচ্ছেন। এতে করে তাদেরও আসছে বাড়তি আয়।
অবস্থাটা এমন আলু রোপণে এক প্রকার প্রতিযোগিতা চলছে,কে কার আগে রোপণ করতে পারে আলু।আবার কৃষাণীদের মাঝে কে কই বস্তা আলুর বীজ দ্রুত কাটতে পারে। তবে এবার করোনার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে শিক্ষার্থীরাও নেমে পড়েছেন কৃষি কাজে। ফলে উপজেলার কৃষক কৃষাণী শ্রমিকসহ কারোই যেন দম ফেলার সময় নেই।
জানা গেছে, গত মৌসুমে আলু চাষিরা প্রচুর লাভ পেয়ে চলতি মৌসুমেও নেমে পড়েন আলু চাষে। এজন্য নভেম্বর মাসের দিকেই উপজেলার প্রায় জমির রোপা আমন ধান কাটা শেষ হওয়া মাত্রই শুরু করেন আলুর জমি তৈরির কার্যক্রম। এবার লাভের আসায় অনেক নতুন নতুন কৃষকরা অল্প জমিতে হলেও আলু রোপণ করছেন।
অবশ্য এসব ক্ষুদ্র মাঝারি চাষিদের বীজ সার পেতে যেমন গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা তেমন ভাবেই হতে হয়েছে হয়রানি। বিশেষ করে ব্র্যাকের বীজ এবং টিএসপি সারতো সোনার হরিণে পরিণত হয়ে পড়ে। যা বিগত সময়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি, এবার লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থেকে অনেকের ভাগ্যে জুটেছে আবার অনেককে মলিন মুখে যেতে হয়েছে বাড়িতে। তারপরও থেমে থাকেনি কৃষকের লড়াই। যে ভাবেই হোক সব কিছু ম্যানেজ করে কমর বেধে নেমে পড়েছেন চাষিরা।
তানোর পৌর সদর এলাকার গুবিরপাড়াগ্রামের কৃষক হান্নানের বাড়ির খৈলানে বরাবরের মত এবারো রোপা আমন ধান কাটতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৮/২০জন মত ধান কাটা শ্রমিক এসে প্রায় ৭০/৮০ বিঘা জমির ধান কেটে জনপ্রতি অন্তত ৭/৮মন করে ধান নিয়ে ইতিপূর্বেই তাঁরা এলাকায় চলে গেছেন। এরপরেই শুরু হয় আলুর বীজ কাটা। উৎসব মুখর পরিবেশে সকাল বিকাল রাতেও কাটার কাজ করছেন। বিভিন্ন পরিবারের কৃষাণিরা এক সঙ্গে নানা ধরনের আলাপ চারিতায় আলু রোপণে রাখছেন প্রচুর ভুমিকা।
বেশ কিছু চাষিরা জানান আলুর দাম ভালো পাওয়ার কারনে সবকিছু বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে। এবারে বিঘাপ্রতি ৫০/৫৫ হাজার টাকা করে খরচ হবে।
এছাড়াও চলতি রোপা আমন ধানে ফলন বিপর্যয় হলেও ধানের ও খড়ের দাম ভালো থাকায় পুশিয়ে নিতে পেরেছেন কৃষকরা। প্রতি বিঘায় ১৫/১৬ মন করে ধান হয়েছে। জেলার মধ্যে এই উপজেলায় আমন ধানের চাষ হয় ব্যাপক। প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছিল আমন ধানের চাষাবাদ।
এদিকে বিল কুমারি বিলের পানি কমে যাওয়ার কারনে বীজ তলা তৈরিতেও ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন বোরো চাষিরা।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আলু চাষের প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম জানান আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারনে আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তিনি আরো জানান এবার মনে হচ্ছে লক্ষমাত্রার চাইতেও বেশি আলু চাষ হতে পারে। কারন গত মৌসুমে চাষিরা প্রচুর দাম পেয়ে ঝুকে পড়েছেন আলু চাষে।