মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবস (রোকেয়া দিবস) উপলক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে একটি র্যালি বগুড়া শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন শেষে সংগঠন কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক দিলরুবা নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বগুড়ার জেলা আহ্বায়ক কমরেড এ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টু, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা সদস্য রাধা রাণী বর্মন, রেনু বালা, আখলিমা খাতুন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলা স্কুল বিষয়ক সম্পাদক রিতু খাতুন, সদস্য পূজা প্রামানিকসহ নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভায় সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন- নারী জাগরণের পথিকৃৎ মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া এই উপমহাদেশের নারী শিক্ষা ও নারীমুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও পরিপুর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। সময়ের পরিবর্তনে নারীকে ভিন্নভাবে চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে নারীকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সম্পত্তিতে আজও নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নারী যে মানুষ হিসাবে সমাজে পুরুষের পাশাপাশি সমান ভুমিকা রাখতে পারেন এই পুজিঁবাদী ভোগবাদী মুনাফার সমাজব্যবস্থা তা অস্বীকার করে এবং নারীকে মানুষ হিসাবে মেনে নিতে চায় না। যে সমাজে অর্ধেক নারী সেখানে নারী মুক্তি ছাড়া সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই সমাজের অগ্রগতি ও নারীমুক্তির জন্য এই পুজিঁবাদী-ভোগবাদী সমাজ ভাঙ্গা এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নারী-পুরুষ সকলকে সমভাবে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য দিলরুবা নূরী বলেন- বেগম রোকেয়া বাংলাদেশের নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, নারীর সামনে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার সাহস, যুক্তি ও আপন প্রত্যয় নিমার্ণের লক্ষ্যে আজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন-লেখনী ধরেছেন, স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, সংগঠন গড়ে তুলেছেন।
আলোচনা সভায় রাধা রাণী বর্মন বলেন – সারাদেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পাহাড়ে বা সমতলে, ঘরে-পথে-স্কুলে-কারখানায় যেকোন স্থানে; দিনে বা রাতে যেকোন সময়ে বাংলাদেশে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, বন্দি করে রেখে গণধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন-হত্যা, বখাটেদের উৎপীড়ন, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি, ইন্টারনেটে ব্লাকমেইলসহ ঘরে বাইরে নানা উৎপীড়ন, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে উৎকণ্ঠার বাইরে কোনো নারীর পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে ওয়াজ-মাহফিলে নারীকে নিয়ে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ফতোয়া দিয়ে নারীর উপর অত্যাচার করা হয়। এই নির্মম বাস্তবতা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তনে, সমাজের সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, নারীমুক্তির আন্দোলনে বেগম রোকেয়া আজও প্রেরণার উৎস। বেগম রোকেয়ার সেই আহ্বান ‘জাগো গো ভগিনী!’ কে ধারণ করে , সমস্ত শোষণ, নির্যাতন, অন্ধত্ব, কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই; নারী-পুরুষের মিলিত সংগ্রাম গড়ে তুলি; মনুষ্যত্ব, সভ্যতা, স্বাধীনতা ও মানবতার দাবি আদায় করি এই আহ্বান জানান।