নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে বাল্য বিয়ে করে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সেই ইউপি চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকারকে অবশেষে বরখাস্ত করা হয়েছে ! বিভিন্ন মিডিয়ায় বাল্যবিয়ে করা ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যখন তোলপাড় শুরু হয়, তখন অবশেষে গত ৯ অক্টোবর উলিপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমি এর কার্যালয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম এর নির্দেশে তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
তবে তদন্ত কমিটি কিশোরীর প্রকৃত বয়স ও বাল্য বিয়ের রহস্য উদঘাটনে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার নুরুন্নবী খন্দকার, উলিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নাদিরুজ্জামান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরশাদুল আলম হীরা, কিশোরীর জ্যাঠা চৌকিদার আবু বক্কর, কিশোরীর বাবা প্রতিবন্ধী ওসমান গনি সরকার বাচ্চু, ইউপি সচিব কাওছার আলীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেছিলেন ।
তদন্ত কমিটি তাদের মতামত সহ রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানোর পর অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘ এক মাসেরও অধিক সময় ধরে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ১৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই চেয়ারম্যান আবু তালেবকে বরখাস্ত করা হয় !
উল্লেখ্য, জেলার উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দোলন গ্রামের হতদরিদ্র প্রতিবন্ধি ওসমান গনি সরকার বাচ্চুর ৯ম শ্রেণী পড়ুয়া বকসীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছাঃ বর্ণিতা ওসমান বর্ণী (১৫) এর উপর বুড়াবুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকারের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে । প্রায় ৩ মাস আগে ওই কিশোরীকে নিয়ে চেয়ারম্যানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে বিপাকে পড়েন তিনি।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে ধুরন্ধর ওই চেয়ারম্যান, তারই ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আজিজুল হকের সহযোগিতায় কিশোরীর জ্যাঠা চৌকিদার আবু বক্করকে ম্যানেজে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে কাজী ডেকে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায় এড়াতেই ওই চেয়ারম্যান দরিদ্র পরিবারটিকে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে বেআইনি বাল্যবিয়েতে রাজি হতে বাধ্য করে বলেও অভিযোগ ছিল।
এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে বর সেজে বধু বেশে ঢাকঢোল পিটিয়ে রাতে চেয়ারম্যান নবম শ্রেণী পড়ুয়া ওই কিশোরীকে বিয়ে করে আনেন। বাল্য বিয়ে করার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হলে জিনিউজবিডি২৪ সহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হলে প্রশাসনের টনক নড়ে। এর পর তদন্ত অবশেষে বরখাস্ত ।