বিদেশে অধিক অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে হুন্ডি পদ্ধতি অবলম্বন করে অর্থ লেনদেন এবং বিদেশে পাঠিয়ে বিভিন্ন কৌশলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতসহ ভিটে মাটি হারিয়ে দিয়ে অনেক পরিবারকে সর্বশান্ত করার অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার জামিল জালাল সহ তার স্বজনদের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি পুলিশ সুপার সুনামগঞ্জ সহ বিভিন্ন দফতরে এ বিষয়ে অভিযোগ প্রেরণ করেছেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার জামেদপুর, গ্রামের সহর আলীর স্ত্রী সালেকা বেগম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউপির কাটাখালী গ্রামের কাতার প্রবাসী এমরান হোসেন ও তার পিতা জামিল জালালসহ পরিবারের অন্যন্যা স্বজনরা যোগসূত্র থেকে একাধিক লোককে প্রবাসে পঠিয়েছেন তাদের সাথে অর্থ লেনদেন করেছেন হুন্ডি পদ্ধতি অবলম্বন করে।
অর্থাৎ কোন ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যম ছাড়া বাংলাদেশে টাকা লেনদেন করেন। এমরান সহ তার অন্যান্য স্বজনরা তার উপার্জনের টাকা দিয়ে প্রবাসে যাতায়াত ইচ্ছুকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রবাসে টাকা খরচ করে থাকে। আর এই খরচ বাবদ, যে টাকা দিতে হয় সে টাকা বাংলাদেশে তার মা বাবার কাছে পরিশোধ করলেই চলে।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে এভাবে প্রায় ৩০ জনেরও বেশি লোক বিদেশে পাঠিয়েছে এমরান ও তার স্বজনরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ নানা কৌশলে প্রবাসে উপার্জনের সুযোগ পেয়েছেন তবে অধিকাংশ লোকই হারিয়েছেন বিটে মাটি, সর্বশান্ত হয়ে ঘর ছেড়েছেন অনেক। ঠিকই এমনি ভাবে ধার দেনার বুঝা নিয়ে ভিটে মাটি হারিয়ে পথে বসেছে সেজুলের পরিবার। জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার সালেকা বেগমের ছেলে সেজুল হোসেনকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
পরে সেজুলের নানা ইউনুছ আলী প্রতারণা ব্যবসার মূল হূতা এমরানের পিতা জামিল জালালের সঙ্গে তার নাতিকে কাতার পাঠানোর জন্য জামিল জালালকে বাংলাদেশী ৭লাখ টাকা নগদে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের চুক্তি হয়।
গ্রামের যারা প্রবাসে গিয়েছে তাদের মতো করেই কিস্তির মাধ্যমে ২০১৯ খিস্ট্রাব্দের পহেলা ফেব্রুয়ারী সেজুলের পরিবারের নিকট থেকে অভিযুক্ত এমারানের পিতা মাতা পাসপোর্ট ও নগদ ৪ লাখ টাকা গ্রহন করে। একটি কোম্পানীতে ৫ বছরের কাজের চুক্তি হবে জানান, ১ মাস পর জানায়, সেজুলের ভিসা সংগ্রহের জন্য বাকী ৩ লাখ টাকা না দিলে ম্যান পাওয়ার সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজ করতে পারবে না।
তাই সেজুলের পরিবার জায়গা জমি বিক্রি করে ও ধার নিয়ে ০১/০৩/২০১৯ ইং তারিখে জামিল জালালদের নিকট ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেন, জামিল জালাল নগদ ৩ লাখ টাকা গ্রহন করার পর জানায়, টিকেট ওকে হলেই ফ্লাইটের তারিখ জানাবে। দীর্ঘ ৫মাস পর জামিল জালাল জানায় যে ৭ আগস্ট ২০১৯ ইং তারিখে সেজমুল হোসাইনের ফ্লাইট হবে, যথারীতি ০৭/০৮/২০১৯ ইং তারিখে ফ্লাইট হয়।
সেজুল কাতার বিমানবন্দরে পৌছার পর কোম্পানীর মালিক ও জামিল জালালের ছেলে কাতারপ্রবাসী ইমরানের অপেক্ষা করে। দেখা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে দোহা মানিকপুর এলাকায় এক বাঙ্গালীর কাছে আশ্রয় নেয় এবং জীবীকার তাগিদে দিন মুজুরের কাজ করে কোন রকম দিন যাপন করে।
জামিল জালালের ছেলে ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে প্রায় ৫ মাস ২৬ দিন অতিবাহিত হয়। এই ফাঁকে ভিসার মেয়াদ শেষ হলে সেজুল অবৈধ হয়ে যায়। এভাবে অবৈধ ভাবে কাজ করতে গিয়ে কাতার রাষ্ট্রের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সেজুল, প্রায় ১২দিন জেল হাজতে থাকার পর কাতার সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেজুলকে দেশে পাঠায়।
দেশে পৌছে অপূরনীয় ক্ষতির দাবি করে সালিশ করেও কোন সুফল না পেয়ে আইনের আশ্রয় নেয় সেজুলের পরিবার। এ বিষয়ে সালেকা বেগম জানান, বিটে বাড়ি হারিয়ে এখন পথে বসেছি। সুদের টাকার বুঝা আর বিটে বাড়ি হারোনোর বেদনা রোগ হয়ে গেছে, এরা প্রভাবশালী হওয়ায়, উল্টো আমাদের হুমকী দমকী দিচ্ছে আদালতেও মামলা দায়ের করেছি।
মুক্তিখলা গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানায়, আমাকেও বিদেশে নেওয়ার কথা বলে নগদ অর্থ গ্রহন করে পরে কৌশলে ফেরত নিয়ে আসি। এরা এই এলাকার বহু লোককে ঠকিয়ে পথে বসিয়েছে।
জামিল জালাল জানায়, আমাদের বাসায় বসা হয়ে ছিল তারা সনম পেয়ে মাফ চেয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়, ফতেপুর ইউপি সদস্য আব্দুল হেকিম জানান, শত শত লোককে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে ভিক্ষুক বানিয়েছে। এদের দামি বাসা বাড়ি এবং আয়ের উৎস খুজলেই সব বের হয়ে আসবে।