খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা গ্রামে মহাধুমধামের সাথে আগামীকাল পহেলা মাঘ, ১৫ জানুয়ারি শুক্রবার উৎযাপিত হবে ঐতিহাসিক ‘মধু মেলা’ ও বনবিবির পূজা। প্রায় শতবর্ষের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য বুকে ধারন করে মহাকবি মাইকেলের কপোতাক্ষ নদের তীরে উদযাপিত হচ্ছে এ মেলা।
কবে, কখন যে এ মেলার যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার নির্দিষ্ট দিন তারিখ সঠিকভাবে কেউ বলতে পারে না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে প্রতি বাংলা বৎসরের পহেলা মাঘ এ মেলা উৎযাপিত হয়। সে সময় চরামুখা গ্রামের মধূসূদন মাঝি নামে এক ব্যক্তি প্রথম সেখানে বনবিবির উদ্দেশ্যে পূজা দেন এবং ছোট পরিসরে মেলা শুরু করেন, সেই থেকে এ মেলার যাত্রা শুরু। কালক্রমে প্রয়াত মধূ মাঝির নামেই এক সময় মেলার নাম হয় মধূ মাঝির মেলা। আজও মেলাটি মধূ মাঝির মেলা নামে পরিচিত।
কালের আবর্তনে দিনটি এলাকার মানুষ তথা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। পূর্বে মেলাটি সপ্তাহব্যাপী উদযাপিত হতো, কিন্তু এখন মেলাটি ১ থেকে দু’দিন ধরে উদযাপিত হয়। ভোর বেলা মেলা শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে। মেলা উপলক্ষ্যে এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের এখানে সমবেত হতে দেখা যায়।
মেলায়- কসমেটিক্স সামগ্রী, পোষাক, খেলনা, বই, মাটির তৈরী শিল্প সামগ্রী, বাঁশের তৈরী শিল্প সামগ্রীসহ গৃহস্থালী সামগ্রী, শাক-সবজি, মাছ, বিভিন্ন প্রকার ফল, ভাজা, চটপটি, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির দোকান ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন খেলার সামগ্রীর সমারোহ থাকে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ মেলায় থাকে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভীড়। চায়ের দোকানগুলো সব সময় লোকজনের সমারোহে ও বিভিন্ন খোশ গল্পে জমে উঠতে দেখা যায়। চারিদিকে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ছুটাছুটি, বাঁশির সুর, মাইকের শব্দ আর কোলাহল।
বিনোদন হিসেবে মেলার আয়োজন থাকে বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও অতিথি শিল্পীদের গানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার পরিবেশ। সকলে হিংসা-বিদ্বেষ ভূলে বছরে একটা দিন এখানে মিলিত হয়, যেন এক মিলন মেলা। বর্তমানে মেলায় পূজা আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত মধূসূদন মাঝির ৪র্থ উত্তরসূরী বাবু ভোলানাথ মাঝি। মেলার আয়োজক কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশ প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।