মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আমতৈল গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ কোরবান আলী। থাকেন একটি ঝুপড়ি ঘরে। আয় রোজগার করতে না পারায় পরিবার তাকে করেছে পর। ২০১০ সাল থেকে বয়ষ্কভাতা পেয়ে কোন রকমে দিনপাত করছিলেন তিনি। গত ৫ মাস আগে তার ভাতাটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বিপাকে পড়েন।
অপরদিকে মানিকদিয়া মাদ্রাসা পাড়ার বয়োভারে ন্যুব্জ আব্দুল লতিফও বয়ষ্ক ভাতা নিয়ে কোনরকম নিজের চিকিৎসা খরচটা চালিয়ে আসছিলেন। ভাতা বন্ধ হওয়ায় তিনিও ভুগছেন চরম দৈন্যতায়। জাতীয় পরিচয় পত্রে বয়স কম লেখায় তাদের ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।
শুধু কোরবান কিংবা লতিফ নয়, তাদের মতো এ উপজেলার অন্ততঃ আড়াই হাজার বয়োজৈষ্ঠ্যর ভাতা বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জিবন যাপন করছেন। অনেকেই বেছে নিয়েছেন ভিক্ষা বৃত্তি। বয়স জটিলতায় তাদের ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর। উপজেলায় সাড়ে নয় হাজার জৈষ্ঠ্য নাগরিক বয়স্কভাতা ভোগ করছিলেন।
গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯ হাজার ৩৭২ জন বয়স্কভাতা পাচ্ছিলেন। এর মধ্যে আড়াই হাজার জনের বয়স জটিলতায় তাদের ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় অল্প বয়সিরা তাদের বয়স বাড়িয়ে বয়ষ্ক ভাতা উত্তোলন করছিলেন।
আবার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরীর আগে সম্প্রতি সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে ভাতাভোগিদের তথ্য ডাটাবেজে উন্নীত করণের আদেশ আসে। এসময় ভাতাভোগিদের বয়স জটিলতা দেখা দেয়। সেই সাথে তথ্যে গড়মিল পাওয়া গেলে ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, যারা অনৈতিক পন্থায় বয়স বাড়িয়ে ওয়ার্ড মেম্বরদের সহায়তায় ভুয়া তথ্য প্রদান করে ভাতাভোগ করছিলেন তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরকারী নিয়মানুযায়ি পুরুষদের ৬৫ বছর ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ৬২ বছর হলে বয়স্ক ভাতা পাবেন। অথচ কতিপয় অসৎ মেম্বরদের সহায়তায় কম্পিউটারের দোকান থেকে বয়স বাড়িয়ে ভুয়া এনআইডি তৈরী করে জমা দেন।
এখন ডাটাবেজ তৈরীর সময় সেটি ধরা পড়ে। অনেকেই ১৫ বছর যাবত ভাতা তুলছেন। সেসময় স্মার্ট কার্ড ছিল না। ফলে কোনটি ভুয়া আর কোনটি আসল তা যাচাই করা যায়নি। যারা অনৈতি পন্থায় এ কাজটি করতে সহায়তা করেছেন তাদের অনেকেই এখন আর জনপ্রতিনিধি নেই। ফলে আইনানুগ ব্যবস্থাটাও নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানান, একযুগ আগে অনেক জনপ্রতিনিধি স্বজন প্রীতি ও অনৈতিক পন্থায় বয়স্ক বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড বিতরণ করতেন। সেসময় যাচাই বাছাই করার পথ ছিল না। এখন ডাটাবেজ আপডেট করার সময় ধরা পড়ছে। একই কথা জানালেন সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন।
গাংনী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাজি আবুল মনসুর জানান, যাদের ভাতা আটকে গেছে তাদের ব্যাপারে নতুন কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।