বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পেলেও বিদ্যালয় যেতে পারছেনা কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। বিগত ২০১৮ সালেও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা ও খেলাধুলা করে ব্যস্ত সময় কাটালেও ২০১৯ মার্চ থেকে করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
মরণব্যাধী করোনা ভাইরাসের কারণে সৈয়দপুর শহরের হতদরিদ্র পরিবারের উপার্জন কমে যাওয়ায় তাদের কমলমতি সন্তানদের অর্থ উপার্জনে শ্রম বিক্রিতে ঠেলে দিচ্ছেন এ কারণে রাস্তাঘাট, রেলওয়ে স্টেশন ও চায়ের দোকানসহ ফেরি করে বাদাম, তিল খাজা বিক্রিতেও চখে চড়ছে বিদ্যালয়গামি শিশু শিক্ষার্থীদের।
প্রথম শ্রেণি থেকে ২০২১ সালে উত্তীর্ণ হওয়া সৈয়দপুর শহরের সাহেব পাড়ার মিন্টু রিক্সাচালকের ছেলে আরমান সাত (৭)। দুই ভাই এক বোন ও মা বাবার সংসারে আরমান দ্বিতীয়। বাবা অসুস্থ হয়েও রিক্সা চালিয়ে কোনো রকমে অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাত। করোনার প্রভাবে ভিষন অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা মিন্টু রিক্সাওয়ালা। করোনায় স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে পড়াশুনা বন্ধ আরমানের।
সংসারের খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি বড় মেয়ের বিয়ের বয়সও হয়েছে। কিভাবে সংসার চলবে বা কিভাবে সকলের পড়াশুনা ও বড় মেয়ের বিয়ে দিবে এ চিন্তায় মিন্টু রিক্সাওয়ালা প্রায় শয্যাশায়ী। কোনো উপায়ন তার না দেখে শিশু আরমানের মা শুরু করেন অন্যের বাড়িতে ঝিঁ এর কাজ করতে। আরমানও বেরিয়ে পড়ে ভিক্ষা করতে। প্রায় ১০ দিন ভিক্ষা করে যা আয় হয়েছে তা দিয়ে বাদাম ও তিলখাজা কিনে বিক্রি করতে শুরু করে সে।
গতকাল সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডাঃ জিকরুল হক সড়কের খোরাক হোটেল সংলগ্ন ফেরি করে বাদাম ও তিলখাজা বিক্রি করতে আসা শিশু আরমান জানায় আমরা খুব গরিব মানুষ। অন্যের বাড়িতে দুটি রুম নিয়ে ভাড়ায় নিয়ে থাকি আমরা। বাবা খুব অসুস্থ, কাজ করতে পারছেন না। বড় বোনের বিয়ের বয়সও হয়েছে।
সংসারের খাওয়া দাওয়া ও বোনের বিয়ের কথা ভেবে মা অন্যের বাড়িতে ঝিঁ এর কাজ নিয়েছেন। আমিও বাদাম ও তিলখাজা বিক্রি করছি। মায়ের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঘর ভাড়া ও খাওয়া দাওয়া চলে। আর আমি প্রতিদিন ৫/৬ শত টাকা বিক্রি করে যা লাভ হয় সেটি জমা করছি বোনের বিয়ে দেওয়ার জন্য।
এলাকার কাউন্সিলররা সাহায্য করে কি না জানতে চাইলে, শিশু আরমান জানায়, আমরা অন্যের বাড়িতে ভাড়ায় থাকি বলে সাহায্য মেলে না। কি খেয়েছো জানতে চাইলে শিশু আরমান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে আজ সকালে আমরা সকলেই শুকনো মুড়ি আর চা খেয়েছি। দুপুর গড়িয়ে রাত প্রায় ৮টা এখন পর্যন্ত আমরা সবাই উপোস। শিশু আরমান বলে মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার যখন বেঁেচ ছিলেন। তখন কিছু কিছু সাহায্য পেয়েছি। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর কেউ সাহয্য করে না বলে হাউ মাউ করে কেদে ফেলে আরমান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জানান, করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারে টানা পড়া লেগেছে। এজন্য প্রায় শিশু শিক্ষার্থীর পড়াশুনা বন্ধ ও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ওই পরিবারগুলো।
সৈয়দপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাকির হোসেন বাদল জানান, করোনা মহামারিতে স্কুল কলেজ বন্ধ ও কর্মক্ষেত্র বন্ধ হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষদের পারিবারিক সমস্যার শেষ নেই। সব সমস্যার সমাধান করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি যথেষ্ট বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, শিশু আরমানের বোনের বিয়ে ও সংসার খরচ চালাতে সৈয়দপুরের অর্থশালী ও বৃত্তবানদের সুদৃষ্টি যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেন তিনি। সকলকে শিশু আরমানের পারিবারিক স্বচ্ছলতায় এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।