কঠোর নিরাপত্তায় ভোলায় নজিরবিহীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দুই পৌর বাসীকে ভোট উপহার দিলেন প্রশাসন। গতকাল রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত হয় ভোলা ও চরফ্যাশন পৌরসভা নির্বাচন। রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ৯ টি ওয়ার্ডে ১২২ টি কক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন করা হয়। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে পুলিশ বিজিবি র্যাব কোস্টগার্ডসহ সকল আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পরার মতো। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বায়িতে থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিলেন ভোলা পৌরবাসীদের।
ভোলার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়া একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচানে পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে কোনো আক্ষেপ দেখা যায়নি। ভোটারদের ভোটেই নির্বাচিত বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে পরাজিত প্রার্থীরা। প্রতিটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ দেখা গেছে। ভোটারদের প্রতি আস্থা ছিলো সকল প্রার্থীদের। আর ভোটাররাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটদানের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন তাদের পছন্দের প্রতিনিধিদের।
দিনভর ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে বিপুল ভোটে তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনিরকে ভোলা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত করেন ভোলা পৌরবাসী।
নৌকা মার্কায় মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির ১৬ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী হারুন অর রশীদ ট্রুম্যান পেয়েছেন ২ হাজার ৩৪ ভোট। অপরদিকে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর মনোনীত হাত পাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী আতাউর রহমান মমতাজী পেয়েছেন ১ হাজার ১শ’ ৮ ভোট।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৩শ ৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মঞ্জুর আলম। তার নিকটতম প্রার্থী অবিনাশ নন্দি পেয়েছেন ১ হাজার ৯৪ ভোট। ২নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মিজানুর রহমান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাজিব হাসান লিপু পেছেন ৪শ ১৪ ভোট। ৩নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৩শ ৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সালাউদ্দিন লিংকন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হুমায়ুন কবির সোপান পেয়েছেন ৬শ ৯৩ ভোট। ৪ নং ওয়ার্ডে আসাদ হোসেন জুম্মান ২ হাজার ২শ ৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আয়ুব আলী পেয়েছেন ৬৪ ভোট। ৫ নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ১শ ৬৩ ভোট পেয়ে এফরানুর রহমান বিজয়ী হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিজানুর রহমান পেয়েছেন ৮শ ৪৯ ভোট। ৬নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ২শ ৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ওমর ফারুক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুর রব পেয়েছেন ৫শ ৮৯ ভোট। ৭ নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ২৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন শাহে আলম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আশিব মাহামুদ পেয়েছেন ৫৫৬ ভোট। ৮ নং ওয়ার্ডে ১ হজার ২শ ৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন হেলাল উদ্দিন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নুরে আলম স্বপন ৭শ ৮৬ ভোট পেয়েছেন। ৯নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৪শ ৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মাইনুল ইসলাম শামীম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাসিম পেয়েছেন ১১৮ ভোট।
এদিকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের মধ্যে ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী জোছনা ইয়াসমিন ৪২৪৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী শামসুন্নাহার সোনিয়া ৪১৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রাজিয়া সুলতানা ২৯১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আলা উদ্দিন আল মামুন বলেন, ভোলা পৌরসভায় এবার প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৫২.২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতিও তুলনামূলক বেশি ছিলো। নির্বাচনকে ঘিরে কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি বা আমরা এধরণের কোনো অভিযোগও পাইনি।
অন্যদিকে ভোলার চরফ্যাশন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোঃ মোরশেদের নিরংকুশ বিজয় লাভ করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭ হাজার ৫শ’৮৩ জন ভোটার অধ্যুষিত চরফ্যাশন পৌরসভায় ১৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে মেয়র পদে ৩ জন, সাধারন কাউন্সিলর পদে ২৫ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোটের দিন সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তরফ থেকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় কোন রকম আপত্তিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট গ্রহন চলাকালে কালে নৌ-বাহিনী, বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশের টহলে মধ্যে দিয়ে শান্তিপূর্ন ভাবে ভোট গ্রহন করা হয়েছে।
এদিকে মেয়র পদে সরকারী ফলাফল অনুযায়ী চরফ্যাশন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোঃ মোরশেদ (নৌক) প্রতীক পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯১৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শরিফ হোসাইন (নারিকেল গাছ) প্রতীক পেয়েছেন ৭৮১ ভোট। এবং ভোট বর্জনের মধ্যে দিয়ে বিএনপি প্রার্থী হুমায়ুন কবির সিকদার (ধানের শীষ) প্রতীক পেয়েছেন ৭৪৭ ভোট। বিপুল ভোট পেয়ে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী মোঃ মোরশেদ নির্বাচিত হয়েছেন।
অপর দিকে পৌরসভা নির্বাচনে সাধারন সদস্য কাউন্সিলর পদে পৌর ১নং ওয়ার্ডে ফখরুল আলম স্বপন (পাঞ্জাবী) প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ২শ’ ৯৫ ভোট পেয়েছেন নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আবুল খায়ের (উটপাখি) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯শ ৬৭ ভোট। ২নং ওয়ার্ডে মোঃ মফিজ (পানির বোতল) প্রতীক নিয়ে ৭শ’ ২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্র্রার্থী নজরুল ইসলাম কিষান (পাঞ্জাবী) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪শ’ ৬৭ ভোট।
৩ নং ওয়ার্ডে (পাঞ্জাবী) প্রতীক নিয়ে মো. আবদুল মতিন মোল্লা ৫শ’ ৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মোঃ মঞ্জু বাতান (উটপাখি) প্রতীক পেয়েছেন ৩শ’ ৪৬ ভোট। ৪নং ওয়ার্ডে আকতারুল আলম সামু (পাঞ্জাবী প্রতীক) নিয়ে ১ হাজার ২শ’ ৩৮ পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী তাপস চন্দ্র দাস (পানির বোতল) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪শ’ ৬৩ ভোট।
৫নং ওয়ার্ডে গিয়াস উদ্দিন (ডালিম) প্রতীক নিয়ে ৬শ’ ১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আকবর হোসেন (পানির বোতল) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪শ’ ৮০ ভোট। ৮নং ওয়ার্ডে সিদ্দিকুর রহমান মোক্তাদি (ডালিম প্রতীক) নিয়ে ৪শ’ ৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মোশারেফ হোসেন মুন্না (পানির বোতল) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪শ’ ৬৭ ভোট। ৯নং ওয়ার্ডে মিজানুর রহমান মঞ্জু (উটপাখি) প্রতীক নিয়ে ৬শ’ ৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আবদুল করিম মুন্সি (পাঞ্জাবী) প্রতীক পেয়েছেন ৬ ভোট।
এছাড়াও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১, ২, ৩ ওয়ার্ডে (আনারস) প্রতীক নিয়ে ফরিদা পারভীন নির্বাচিত হয়েছেন। ৭.৮.৯ ওয়ার্ডে জাহানারা বেগম (জবাফুল) প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ১শ’ ৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী খাদিজা বেগম চশমা প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৩শ’ ৫৮ ভোট পেয়েছেন। এবং পৌরসভা ৬ নং ওয়ার্ডে সাধারন সদস্য কাউন্সিলর হিসেবে মনির হোসেন ও ৭ নং ওয়ার্ডে মোস্তাহিদুল হক তানভীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবং সংরক্ষিত ৪. ৫. ৬ ওয়ার্ডে সদস্য পদে রেজওয়ানা পারভীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এছাড়া চরফ্যাশন পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী (ধানের শীষ মার্কা) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারী) বিকাল ৩টায় দিকে চরফ্যাশন পৌরসভাস্থ প্রার্থীর নিজ বাসভবনে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন করে এ ভোট বর্জন করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাঁধা দান, তাদের এজেন্টদের হুমকী, ধামকী, ভোট কেন্দ্রে বহিরাগতদের আনাগোনা, প্রাসনের পক্ষপাত আচরণ ও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের এজেন্টের ইচ্ছে মতো ভোট দানে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী (ধানের শীষ মার্কা) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির চরফ্যাশন পৌরসভা নির্বাচনের ভোট বর্জন করেছেন।