ঈদুল ফিতরের দিন মানুষ যখন নানা মুখী আনন্দ নিয়ে পারিবারসহ আত্মীয় স্বজনের সাথে সময় দিচ্ছেন। কিন্তু আলুর জমির ধানে ব্যাপক হারে কারেন্ট পোকাসহ নানা ধরনের পোকার আক্রমণ দূর করতে ঈদের সবকিছু ভুলে গিয়ে পোকা থেকে ফসল কে রক্ষা করতে বিকেলের দিকে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন চাষি রেজাউল।
তিনি জানান ঈদের বিকেলে রোদ দেখা দিয়েছে এজন্য কারেন্ট পোকা থেকে ফসলকে রক্ষা করতে বিষ স্প্রে করছি। পাঁচ বিঘা জমিতে ৭৬ জাতের ধান রোপণ করেছি। প্রতিটি ধান গছে শীষ বের হয়েছে। এদিকে জমিতে প্রচুর হারে দেখা দিয়েছে কারেন্ট পোকাসহ স্থানীয় ভাষায় ব্যালকাটি পোকার কারনে ধানের শীষ কেটে দিচ্ছে। আবার আম্পানের ঝড়ে শীষে শীষে ঘর্ষণ লেগে কালো আকার ধারন করেছে।এতে করে ফলনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।অথচ কৃষি অফিসের ব্লক সুপারভাইজারেরা কৃষকের জমিতে না গিয়ে অফিসে বসেই সময় পার করছেন।
জানা গেছে বরেন্দ্র ভুমি হিসেবে পরিচিত তানোর উপজেলাটি। এউপজেলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস। ধান চাষে দেশের মধ্যে অন্যতম প্রধান অঞ্চল উপজেলাটি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রাকের ট্রাক ধান যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ধান চাষের পরে হয় আলু চাষ। বিগত বছরগুলোতে ধানের দাম না পেয়ে হতাশায় ভুকছিলেন কৃষকরা। উপজেলায় বোরো ধানের চাষ হয় দুই ভাগে। ইতিপূর্বেই প্রথম ধাপের বোরো ধান কাটা মাড়াই শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায় বলতে আলুর উত্তোলনের পর রোপণ করা হয় ধান। বেশির ভাগ জমিতেই রোপণ হয় ধান। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে শোভা পাচ্ছে সেই সোনালী ধান।
কোন জমির ধানে দেখা দিয়েছে সোনালী শীষ, আবার অনেক জমিতে সবুজ কালারের শীষ এবং অনেকের জমিতে বের হচ্ছে শীষ। কিন্তু বিগত বছরের মতই আলুর জমিতে যে ভাবে কারেন্ট পোকাসহ নানা পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এবারো তাঁর ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রায় জমিতে কোন না কোন পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে এবং যারা আম্পানের ভারি বর্ষণের আগে পোকা দূর করতে কীটনাশক দিয়েছিলেন তাদের জমিতে অনেকটাই কম আছে কারেন্ট পোকার আক্রমণ।
রাজ্জাকের ৬বিঘা, অয়াসিমের ৬বিঘা, নারায়নপুর এলাকার আতাউরের ৩০বিঘা, সামানের ৬বিঘাসহ কম বেশি প্রায় জমির একই অবস্থা। এছাড়াও ধানতৈড় গ্রামে ফজলুর জানান দুই জমিতে ধান রোপণ করে একাধিকবার বিষ স্প্রে করেও কোন কাজে আসছেনা। কৃষি দপ্তর থেকে সঠিক পরামর্শ পেলে ভালো হত, কিন্তু তাদের তো দেখাই মিলেনা। দোকানীদের পরামর্শে কীটনাশক দেয়া হয়।
একটাতে কাজ না হলে আরেকটা দিচ্ছে। তাদের কথামত দেয়া হচ্ছে বিষ। একই ধরণের কথা জানান তানোর গ্রামের তৈয়ব তিনি আড়াই বিঘা জমিতে ধান রোপণ করে পোকার কারনে একাধিক বার কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। একই গ্রামের নাজমুল ওরফে মাস্তান জানান ৭বিঘা জমিতে ধান রোপণ করে কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে বাচতে কয়েকবার বিষ স্প্রে করেছি, কোন কাজেই আসছেনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম জানান এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ইতিপূর্বেই আগাম জাতের বোরো ধান কৃষকরা ঘরে তুলেছেন এবং ফলনও ভালো পেয়েছেন। তবে আলুর জমির ধান এখনো কাটা মাড়াই সে ভাবে শুরু হয়নি। আর আলুর জমিতে প্রচুর কীটনাশক স্প্রে করে ইচ্ছেমত। যার ফলে ওই সব জমির ধানে পোকার আক্রমণ হয়। আমরা চাষিদের নিয়োমিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।