কুড়িগ্রামে পানি কমলেও এখনো বড় বড় নদ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে ! ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে ! বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের মাঝে দুর্ভোগ ! গো-খাদ্যের অভাব দিনে দিনে প্রকট আকার ধারণ করছে ! সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ বিতরণ হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য !
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমর নদীর পানি গত এক সপ্তাহ ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতেকরে বানভাসি মানুষের শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গোটা জেলার পানিবন্দী প্রায় দুই লাখ মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বরাদ্দ হলেও তা প্রয়োজনের তুলনা অনেক কম। চলতি বন্যায় জেলায় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়েছে প্রায় ৫ শত পরিবার।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আজ বুধবার ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথেই ভাঙন দেখা দিয়েছে উলিপুরের নাগড়াকুড়া এলাকার টি-বাঁধ, নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া ও সদর উপজেলার সারডোব ও মোগলবাসা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে।
উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবার প্রায় পাঁচ দিন ধরে বন্যার পানিতে ভাসছে। সাত শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের রাস্তায়। তিনি আরও জানান, ‘সোমবার উপজেলা পরিষদে হাতিয়া ইউনিয়নের জন্য ৩ হাজার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য মাত্র ৩৫০ প্যাকেট ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতি প্যাকেটে রয়েছে ২০ কেজি চাল এবং এক কেজি করে তেল, ডাল, লবণ ও চিনি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানিয়েছেন, ‘জেলার তিন পৌরসভা ও ৭৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ৩৫৭টি গ্রাম বন্যার পানিতে ভাসছে। এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ও ৩৭ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা। ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়েছে পাঁচ শ পরিবার। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার ৯২২ হেক্টর। এখন পর্যন্ত দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য নয় উপজেলায় ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখনও মজুদ আছে এক হাজার ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে , বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন। তারা হলো- উলিপুর উপজেলার জানজায়গির গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মোস্তাকিম (১৪ মাস), নাগেশ্বরী উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের আমীর হোসেনের ছেলে বেলাল হোসেন (৮) ও চিলমারী উপজেলার কড়াই বরিশাল গ্রামের জাহেদুল ইসলামের ছেলে শান্ত ইসলাম (৭)