ঢাকা ০৯:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

অবশেষে বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ 

পর্যটন শহর কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী  বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছেন প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটের মোহনা থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়।উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে  দুপুর ২টার সময়  ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে অভিযানে পরিবেশ অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ, বন বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।অভিযানে নদীর তীরবর্তী এলাকায় সীমানা পিলার দিয়ে দখল করা শতাধিক পিলার ভেঙে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ২ শতাধিক ভবন ও ঘর উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা জানান, উচ্ছেদ চলাকালে দুপুর ২টার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালান দখলদার আবদুল খালেকের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রসহ  ১০/১২ জন সন্ত্রাসী । এ সময় ডিবিসি নিউজ ও বিডিনিউজের প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি মাইন উদ্দিন শাহেদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপুসহ কয়েকজন কয়েকজন আহত হন।এ সময় পুলিশসহ অপরাপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হামলার সময় আবদুল খালেককে পিস্তল হাতে নিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দিতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ করেন উপস্থিত কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিবেদক তোফায়েল আহমদ।তিনি জানান, সাংবাদিকরা মূলত উচ্ছেদের সংবাদ সংগ্রহ করছেন। সেখানে তাদের উপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃআবু সুফিয়ান জানান, উচ্ছেদ চলমান রয়েছে, থাকবে। এখানে অনেকভাবে উচ্ছেদ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অনেকেই আইনজীবী এনে উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে এ উচ্ছেদ। নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া  পর্যন্ত অভিযান চলবে। সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ৫ বছর ধরে কক্সবাজার শহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদীর তীরে দখলের মহোৎসব চলছে। নদীর তীরে ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। শুধুমাত্র ২ মাসের ব্যবধানে নদীর তীরের শত হেক্টর জমি দখলের পর চলছে স্থাপনা নির্মাণ। খুরুশকুলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু। এই সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ায় সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে নদী দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী চক্র। একে এক দখলের মহোৎসব চললে। যদিও এখানে একটি নদী বন্দর হওয়ার জন্য সরকারের প্রজ্ঞাপন রয়েছে। এর জন্য এ জমি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে।
এর পরিপেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো আবু সুফিয়ান। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে  জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে কয়েক বছর ধরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। সম্প্রতি নদীতীরের ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ।
নদীর কস্তুরাঘাটের সঙ্গে খুরুশকুলের সংযোগ স্থাপনে বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এই সেতুর সংযোগ সড়কের দুই পাশে প্যারাবন কেটে এর মধ্যে শতাধিক পাকা ভবন তৈরি করেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এই দখল উৎসবে রাজনীতিক, ব্যবসায়িক, আইনজীবী থেকে শুরু করে খোদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষও রয়েছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে ছিল ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবন, পাখির কিচিরমিচির শব্দ ছিল,  সেখানে এখন স্থাপনার পর স্থাপনা। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ান জানান, সকাল থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে নদীর সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এই জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। কোনোভাবেই নদী দখলের প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
আপলোডকারীর তথ্য

অবশেষে বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ 

আপডেট সময় : ০৮:৪৯:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
পর্যটন শহর কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী  বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছেন প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটের মোহনা থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়।উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে  দুপুর ২টার সময়  ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে অভিযানে পরিবেশ অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ, বন বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।অভিযানে নদীর তীরবর্তী এলাকায় সীমানা পিলার দিয়ে দখল করা শতাধিক পিলার ভেঙে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ২ শতাধিক ভবন ও ঘর উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা জানান, উচ্ছেদ চলাকালে দুপুর ২টার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালান দখলদার আবদুল খালেকের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রসহ  ১০/১২ জন সন্ত্রাসী । এ সময় ডিবিসি নিউজ ও বিডিনিউজের প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি মাইন উদ্দিন শাহেদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপুসহ কয়েকজন কয়েকজন আহত হন।এ সময় পুলিশসহ অপরাপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হামলার সময় আবদুল খালেককে পিস্তল হাতে নিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দিতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ করেন উপস্থিত কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিবেদক তোফায়েল আহমদ।তিনি জানান, সাংবাদিকরা মূলত উচ্ছেদের সংবাদ সংগ্রহ করছেন। সেখানে তাদের উপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃআবু সুফিয়ান জানান, উচ্ছেদ চলমান রয়েছে, থাকবে। এখানে অনেকভাবে উচ্ছেদ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অনেকেই আইনজীবী এনে উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে এ উচ্ছেদ। নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া  পর্যন্ত অভিযান চলবে। সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ৫ বছর ধরে কক্সবাজার শহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদীর তীরে দখলের মহোৎসব চলছে। নদীর তীরে ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। শুধুমাত্র ২ মাসের ব্যবধানে নদীর তীরের শত হেক্টর জমি দখলের পর চলছে স্থাপনা নির্মাণ। খুরুশকুলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু। এই সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ায় সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে নদী দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী চক্র। একে এক দখলের মহোৎসব চললে। যদিও এখানে একটি নদী বন্দর হওয়ার জন্য সরকারের প্রজ্ঞাপন রয়েছে। এর জন্য এ জমি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে।
এর পরিপেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো আবু সুফিয়ান। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে  জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে কয়েক বছর ধরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। সম্প্রতি নদীতীরের ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ।
নদীর কস্তুরাঘাটের সঙ্গে খুরুশকুলের সংযোগ স্থাপনে বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এই সেতুর সংযোগ সড়কের দুই পাশে প্যারাবন কেটে এর মধ্যে শতাধিক পাকা ভবন তৈরি করেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এই দখল উৎসবে রাজনীতিক, ব্যবসায়িক, আইনজীবী থেকে শুরু করে খোদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষও রয়েছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে ছিল ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবন, পাখির কিচিরমিচির শব্দ ছিল,  সেখানে এখন স্থাপনার পর স্থাপনা। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ান জানান, সকাল থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে নদীর সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এই জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। কোনোভাবেই নদী দখলের প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।