বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের (১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড়) নারী ইউপি সদস্য আরিফুন্নাহার বিউটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজন প্রিতির অভিযোগ উঠেছে।প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডপ্রাপ্ত উপকারভোগীদের কার্ড জব্দ ও স্বাক্ষর জাল করে চাল উত্তোলন করে কালো বাজারে বিক্রি এবং উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে অধিকতর স্বচ্ছল পরিবারদের রেশনিং সুবিধা প্রদান করেছেন তিনি।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার দাপটে স্বামী নজরুল ইসলাম হাওলাদারকে দিয়ে নিজের সকল দাপ্তরিক কাজকর্ম করাচ্ছেন তিনি।এমনকি এলাকার হতদরিদ্ররা কোন সহযোগিতার জন্য তার কাছে গেলে স্বামীকে দিয়ে তাদের সাথে দূর্ব্যবহার করান এই ইউপি সদস্য। নিজে পরিষদের সদস্য না হয়েও পরিষদের নির্বাচিত সদস্যের মত মিটিংয়ে অংশগ্রহণ ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন তিনি। এসব অনিয়মের সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক কঠোর শাস্তি চেয়ে নাছিমা বেগম নামের এক নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে তিনি বলেন, সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী আরিফুন্নাহার বিউটি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর পরিষদে যায় না। নজরুল ইসলাম হাওলাদারই স্ত্রীর পক্ষে সকল দায়িত্ব পালন করেন।প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর (১০ টাকা কেজিতে মাসে ত্রিশ কেজি চাল) সুবিধা প্রাপ্ত সাত জনের কার্ড জব্দ করে স্বাক্ষর জাল করে নিজে চাল উত্তোলন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এলাকায় অনেক হতদরিদ্র থাকা স্বত্তেও অনেক স্বচ্ছল এবং বিদেশ থাকা ব্যক্তিদেরও খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর কার্ড দিয়েছেন।অন্য এলাকায় বাড়ি হওয়া স্বত্তেও রেক্সনা বেগম নামের এক ব্যক্তিকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড দিয়েছেন এই ইউপি সদস্য।
শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের দক্ষিন তাফালবাড়ি গ্রামের খগেন্দ্রনাথ মন্ডলের স্ত্রী কনক মন্ডল বলেন, ২০১৬ সালে আমাদের নামে একটি খাদ্য বান্ধ্যব কর্মসূচির কার্ড হয়। ওই কার্ড দিয়ে আমরা মাত্র তিন বার চাল উত্তোলন করেছি। তথ্য আপডেটের কথা বলে ইউপি সদস্যের স্বামী নজরুল ইসলাম হাওলাদার আমাদের কাছ থেকে কার্ড নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমাদের ওই কার্ডে আমার স্বামীর স্বাক্ষর জাল করে অন্তত ১৪ বার চাল উত্তোলন করেছেন। কয়েকদিন আগে আবার কার্ডটি ফেরত দিয়ে গেছেন। এই কার্ডে আর চাল তোলা যাবে কিনা জানিনা। ইউনুস আলী, গৌতম মজুমদার, রতন মাঝি একই অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য ও তার স্বামী নজরুল ইসলাম হাওলাদারের বিরুদ্ধে।এছাড়া প্রবাসী আসলাম হাওলাদার ও নাছিরুল কাজীকে খাদ্য বান্ধ্যব কর্মসূচির কার্ড দিয়েছেন এই ইউপি সদস্য।
তাফালবাড়ি এলাকার জাকির হোসেন বলেন, আমরা কখনও ইউপি সদস্যের সাথে দেখা করত পারি না।কোন প্রয়োজনে তার কাছে গেলে স্বামীর সাথে কথা বলতে বলেন। আর নজরুল ইসলাম হাওলাদারকে কোন চাহিদারি কথা বললে রেগে যায়। দ্বিতীয়বার কথা বললে মারধরের ভয় দেখায়। এসব অনিয়মের বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আরিফুন্নাহার বিউটিকে ফোন দিলে সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।
ইউপি সদস্য আরিফুন্নাহার বিউটির স্বামী স্বামী নজরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েই আমি আমার স্ত্রীর সকল দায়িত্ব পালন করি।রেশন কার্ডের তালিকা পরিবর্তন করা হয়েছে। যার ফলে আমরা কার্ড সংগ্রহ করেছিলাম। চেয়ারম্যান ও মহিলা মেম্বরের মাধ্যমে শনাক্ত করে ওইসব কার্ডে চাল অন্যদের দেওয়া হয়। চাল আত্মসাত এবং অনিয়মের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, নারী ইউপি সদস্য সব কাজ করতে পোরে না, সব জায়গায় যেতে পারে না। তাই তার স্বামীকে স্ত্রীর কাজ করার অনুমতি দিয়েছি।আর যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দেন তিনি।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্থফা শাহিন জানান , একটি অভিযোগ পেয়েছি । বিষয়টি ওই ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলেছি।অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।