ঢাকা ০৪:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

আমতলীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পিরানহা

সামদ্রিক রূপচাঁদা মাছের আদলে আমতলীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ বিষাক্ত পিরানহা মাছ। না বুঝে সাধারণ মানুষ দেদারসে এ মাছ কিনে নিচ্ছে। মাছে আমতলীর বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ মাছ বিক্রি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ নেই। দ্রুত এ মাছ বিক্রি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

জানাগেছে, ২০০৮ সালে রাক্ষুষে ও বিষাক্ত পিরানহা মাছ চাষ,আহরন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ করে দেয় সরকার। কিন্তু সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ময়মনসিংহ, যশোর ও কিশোরগঞ্জের অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা পিরানহা মাছ চাষ করছে। ওই অসাধু ব্যবসায়ীরা দক্ষিনাঞ্চলে এ মাছ রপ্তানি করছে।

দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারী মৎস্য ব্যবসায়ীরা অল্প মুল্যে এ মাছ ক্রয় করে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে সামদ্রিক রূপচাঁদা মাছ বলে বিক্রি করছে। গ্রামের নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ না বুঝে এ মাছ দেদারসে ক্রয় করছে। তাদের ধারনা এ মাছ বিষাক্ত হলেও রান্না করলে ওই বিষ আগুলোর তাপে নষ্ট হয়ে যায়। অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা গ্রামের সাধারণ মানুষের এ ধারনাকে পুঁজি করে দেদারসে বিক্রি করছে। দ্রুত এ মাছ আমতলীর বাজারে বিক্রি বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

সোমবার আমতলী উপজেলার চুনাখালী, গাজীপুর, গুলিশাখালী, কলাগাছিয়া ও তালুকদার বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখাগেছে, মাছের স্টল ও সড়কের পাশে বসে বিষাক্ত পিরানহা মাছ বিক্রি করছে। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ না বুঝে এ মাছ দেদারসে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। বাজারে এ মাছ প্রকারভেদে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

গুলিশাখালী গ্রামের দিনমজুর মোঃ ফয়সাল বলেন, এক কেজি সামুদ্রিক রূপচাদা মাছ ১৩০ টাকায় ক্রয় করেছি। তাকে এটা রূপাচাদা নয় বিষাক্ত পিরানহা মাছ বলা হলেও তিনি কোন কর্নপাত করেনি।

তালুকদার বাজরের ক্রেতা মাসুম বলেন, রূপচাদা মাছ বলে বিক্রেতা জাকির আমার কাছে এ মাছ বিক্রি করেছে। আমিও তার কথায় বিশ্বাস করে কিনে এনেছি।

কুকুয়া ইউনিয়নের আনসার বাহিনীর কমান্ডার বাবলু বলেন, মানুষ না বুঝে নিষিদ্ধ রাক্ষসী পিরানহা মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষের সরলতাকে পুজি করে দেদারসে এ মাছ বিক্রি করছে। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ মাছ বিক্রি বন্ধের দাবী জানাই।

মাছ বিক্রেতা মোঃ জাকির হোসেন পিরানহা মাছকে সামদ্রিক রূপচাদা বলে বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, মাছের আড়ৎ মালিকরা প্রশাসনের সামনে আমাদের কাছে বিক্রির জন্য দিয়ে দিচ্ছে তাই আমরাও গ্রামে বিক্রি করছি। তিনি আরো বলেন, পুলিশের সামনেই আমতলী ও পটুয়াখালী বাঁধঘাটের আড়তে এ মাছ বিক্রি হচ্ছে। তারা তো কিছুই বলছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের লোকজনকে ম্যানেজ করেই পিরানহা মাছ রূপচাঁদা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। তারা আরো বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসতো এ মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ তা আমাদের কখনো বলেনি।

আমতলী মৎস্য আড়ৎ মালিক বারেক প্যাদা বলেন, প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে আমতলীসহ দক্ষিনাঞ্চলে বিভিন্ন আড়তে টনে টনে পিরানহা মাছ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় আমার আড়তে সংরক্ষণ করি না।

আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, এ বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ পরিবহন ও বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম বলেন, পিরানহা মাছ চাষ,আহরন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপনন সম্পূন্ন নিষিদ্ধ। এ মাছ কেউ চাষ ও বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, পিরানহা মাছ ক্রয়-বিক্রি বন্ধে বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

আইএফআইসি ব্যাংক ও নেক মানি ট্রান্সফার ইউকে এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

আমতলীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পিরানহা

আপডেট সময় : ০৮:২৮:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুলাই ২০২০

সামদ্রিক রূপচাঁদা মাছের আদলে আমতলীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ বিষাক্ত পিরানহা মাছ। না বুঝে সাধারণ মানুষ দেদারসে এ মাছ কিনে নিচ্ছে। মাছে আমতলীর বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ মাছ বিক্রি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ নেই। দ্রুত এ মাছ বিক্রি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

জানাগেছে, ২০০৮ সালে রাক্ষুষে ও বিষাক্ত পিরানহা মাছ চাষ,আহরন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ করে দেয় সরকার। কিন্তু সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ময়মনসিংহ, যশোর ও কিশোরগঞ্জের অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা পিরানহা মাছ চাষ করছে। ওই অসাধু ব্যবসায়ীরা দক্ষিনাঞ্চলে এ মাছ রপ্তানি করছে।

দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারী মৎস্য ব্যবসায়ীরা অল্প মুল্যে এ মাছ ক্রয় করে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে সামদ্রিক রূপচাঁদা মাছ বলে বিক্রি করছে। গ্রামের নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ না বুঝে এ মাছ দেদারসে ক্রয় করছে। তাদের ধারনা এ মাছ বিষাক্ত হলেও রান্না করলে ওই বিষ আগুলোর তাপে নষ্ট হয়ে যায়। অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা গ্রামের সাধারণ মানুষের এ ধারনাকে পুঁজি করে দেদারসে বিক্রি করছে। দ্রুত এ মাছ আমতলীর বাজারে বিক্রি বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

সোমবার আমতলী উপজেলার চুনাখালী, গাজীপুর, গুলিশাখালী, কলাগাছিয়া ও তালুকদার বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখাগেছে, মাছের স্টল ও সড়কের পাশে বসে বিষাক্ত পিরানহা মাছ বিক্রি করছে। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ না বুঝে এ মাছ দেদারসে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। বাজারে এ মাছ প্রকারভেদে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

গুলিশাখালী গ্রামের দিনমজুর মোঃ ফয়সাল বলেন, এক কেজি সামুদ্রিক রূপচাদা মাছ ১৩০ টাকায় ক্রয় করেছি। তাকে এটা রূপাচাদা নয় বিষাক্ত পিরানহা মাছ বলা হলেও তিনি কোন কর্নপাত করেনি।

তালুকদার বাজরের ক্রেতা মাসুম বলেন, রূপচাদা মাছ বলে বিক্রেতা জাকির আমার কাছে এ মাছ বিক্রি করেছে। আমিও তার কথায় বিশ্বাস করে কিনে এনেছি।

কুকুয়া ইউনিয়নের আনসার বাহিনীর কমান্ডার বাবলু বলেন, মানুষ না বুঝে নিষিদ্ধ রাক্ষসী পিরানহা মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষের সরলতাকে পুজি করে দেদারসে এ মাছ বিক্রি করছে। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ মাছ বিক্রি বন্ধের দাবী জানাই।

মাছ বিক্রেতা মোঃ জাকির হোসেন পিরানহা মাছকে সামদ্রিক রূপচাদা বলে বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, মাছের আড়ৎ মালিকরা প্রশাসনের সামনে আমাদের কাছে বিক্রির জন্য দিয়ে দিচ্ছে তাই আমরাও গ্রামে বিক্রি করছি। তিনি আরো বলেন, পুলিশের সামনেই আমতলী ও পটুয়াখালী বাঁধঘাটের আড়তে এ মাছ বিক্রি হচ্ছে। তারা তো কিছুই বলছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের লোকজনকে ম্যানেজ করেই পিরানহা মাছ রূপচাঁদা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। তারা আরো বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসতো এ মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ তা আমাদের কখনো বলেনি।

আমতলী মৎস্য আড়ৎ মালিক বারেক প্যাদা বলেন, প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে আমতলীসহ দক্ষিনাঞ্চলে বিভিন্ন আড়তে টনে টনে পিরানহা মাছ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় আমার আড়তে সংরক্ষণ করি না।

আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, এ বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ পরিবহন ও বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম বলেন, পিরানহা মাছ চাষ,আহরন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপনন সম্পূন্ন নিষিদ্ধ। এ মাছ কেউ চাষ ও বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, পিরানহা মাছ ক্রয়-বিক্রি বন্ধে বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।