কুড়িগ্রামের উলিপুরে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সাংসদ এম এ মতিন এর প্রতিবাদী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২০ শে ফেব্রুয়ারি সোমবার উলিপুর বণিক সমিতির হলরুমে দুপুর ১২ টায় প্রতিবাদী সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও নতুন গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এম এ মতিন।
তিনি গত ১৭ ই ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে সংসদ সদস্যের সুনাম ও ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে উল্লেখ করে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, একটি চক্র কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ষড়যন্ত্রমূলক ও বানোয়াট অভিযোগে আমাকে আখ্যায়িত করেছে।
জনগণের কাছে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই ওই সংবাদ সম্মেলন এর আয়োজন হয়েছিল।
আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাতে, এ প্রতিবাদী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, আমি কোন স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা রাখি নাই, এ কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
তিনি এ কথার স্বপক্ষে ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল উলিপুর শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত ছাত্র নেতাদের সমাবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উলিপুর এমএস স্কুলে কাঠের তৈরি ১৩ টি ডামি রাইফেল এ অন্যান্যদের সাথে প্রাথমিক ধারণা নেয়া শুরু করি।
আমরা ওই সময় এসএসসি পরীক্ষা বাতিলে অংশগ্রহণ করি।
‘আমার পরিবারের সদস্যরা রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন'” এটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমার পিতা উলিপুর থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জনাব আব্দুল করিম মিয়ার সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন অন্ধ ভক্ত এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। আমার পরিবারের সকল সদস্যই স্বাধীনতার কট্টর সমর্থক ছিলেন।
তিনি বলেন, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে আগত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আমার সাথে উলিপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য ও সাবেক নেতৃবৃন্দ, ইউনিয়ন কমান্ডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বৃন্দ উপস্থিত আছেন। জনাব গোলাম হোসেন মন্টু কুড়িগ্রামের সংবাদ সম্মেলনে আপনার সাথে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাই। মাত্র ৬-৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন আর কতিপয় ভাড়াটিয়া মানুষ ছিল। গত ২৩ জানুয়ারি আমি ঢাকা থেকে উলিপুরে প্রত্যাবর্তন কালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাকে বরণ করে নেয়। উলিপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ আমার গেজেট ভুক্তিতে মহা আনন্দিত ও সন্তুষ্ট হয়েছেন।
আমার আপন বড় ভাই এম এ করিম মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকার কমান্ডার ছিলেন বলে যে অভিযোগটি করা হয়েছে, তা মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং বিদ্বেষ মূলক। এ মিথ্যা তথ্য প্রমাণ করার জন্য জনাব বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টুকে চ্যালেঞ্জ প্রদান করে তিনি বলেন, কথিত তালিকা উপস্থাপন কিংবা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমার সম্পর্কে বলা হয়েছে আমি ১৯৭৯ সালে গঠিত সাত সদস্য বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ নং সদস্য নির্বাচিত হই। এ জঘন্য মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টুকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তার বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনের দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ১৯৭৩-৭৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজের কারমাইকেল মুসলিম হোস্টেলের বিল্ডিং ব্লকের ১১ নং কক্ষে সরকার ইসাহাকের বেডে অবস্থান করে উচ্চমাধ্যমিকে অধ্যায়নকালে ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে সাহসী ভূমিকা পালন করেছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেও ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে প্রচার প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেছি।
তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা যুদ্ধকালীন সময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কোন প্রকার অংশগ্রহণ করতে দেখিনি তাঁকে।
তিনি প্রকৃত সত্য উল্লেখ করে বলেন, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু নৌকার এমপি চান না।
আওয়ামী লীগের এমপি হলে তার অবাধ ও একচ্ছত্র লুটপাটে অসুবিধা হয়। তিনি ও তার সমর্থকরা বি এন পির এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং আক্কাস ডাক্তারের মিশন সফল করার জন্য দলের ভিতর থেকে সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছেন।
এমপি লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বিএনপি’র আস্থাভাজন ব্যক্তি। গত ১১ ই ফেব্রুয়ারি তার নিজ ইউনিয়ন ধরনীবাড়িতে তারই আশ্রয়- প্রশ্রয় এ বিএনপি’র সর্ববৃহৎ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারই ইন্দনে সাহেবের আলগা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিএনপি হামলা চালিয়েছে।
গত ১৭ ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার কুড়িগ্রামের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেছেন, কুড়িগ্রামের বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান, বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন ও জেলা বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক রুবেল। দলের নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষুব্ধ ও হতাশ। কোন ইউপি চেয়ারম্যান তার সাথে নাই , তার আগ্রাসী মনোভাব এবং সর্বভুক ও আচরণের জন্য বিগত এবং বর্তমান অর্থবছরের প্রায় ৩১ কোটি টাকা ফেরত গেছে।
এ প্রতিবাদী সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু এক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, বর্তমান সাংসদ এম এ মতিন মুক্তিযোদ্ধা নন, তিনি কিভাবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন তা আমাদের জানা নেই। আমরা সংবাদ সম্মেলনে তার গেজেট বাতিলের আবেদন জানিয়েছি মাত্র।