প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের মাতারবাড়ী সহ দেশের সকল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করার দাবি নিয়ে অনলাইন প্লাটফর্মে ডিজিটাল স্ট্রাইক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুইডিশ কিশোরী ও জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবর্গের ফ্রাইডেস ফর ফিউচার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার এই অনলাইন স্ট্রাইকে আয়োজন করে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নামের একটি যুব নেটওর্য়াক। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার তরুণরা এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড তুলে ধরে। এই অভিনব কর্মসূচিতে তরুণদের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে এবং দেশের বাইরে দাবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন, স্থানীয় পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজে অর্থায়ন না করার জন্য জাপান সরকারের কাছে আহবান জানিয়েছে।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের কক্সবাজার শাখার সমন্বয়ক জাবেদ নুর শান্ত বলেন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পন্ন হলে আমাদের কক্সবাজার দূষিত হবে এবং পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। কক্সবাজার যদি না বাঁচে তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের আর্থসামাজিক বিপর্যয় ঘটবে। আমারা কক্সবাজারকে ধ্বংস করতে দেবো না। পৃথিবীসহ আমাদের আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়লে আমরা যেমন একটি স্বল্প নির্গমনকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব। এতে দুই দেশই একসঙ্গে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।
ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশের সংগঠক সোহানুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে থাকলেও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর প্রকল্পের কারনে ক্রমশ বাংলাদেশ দূষণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে চলে যাবে। গত বছর নভেম্বরে আমাদের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ বিশ্বে প্রথম ‘গ্রহজনিত জরুরী অবস্থা’ জারি করে।
আমরা সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের মধ্যেও সুপার সাইক্লোন আম্পানের মুখে পড়েছি। এছাড়া বাংলাদেশ এখন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্বে। তাই বিশ্ব যখন জলবায়ু সংকটকে মাথায় রেখে করোনা মহামারী থেকে গ্রীন রিকোভারীর দিকে যাচ্ছে এ সময়ে সরকারের নিজের ঘোষণার সাথে সাংঘর্ষিক কোন পরিবেশ-প্রতিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প বাংলাদেশে চলতে পারে না।
জাইকা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী। মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে জাইকা ইতিমধ্যে ১.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, এবং আরও ১.৩২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ হওয়ার কথা রয়েছে।
করোনাপরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের ৬৮ হাজার কোটি টাকা (৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রয়োজন, যার অর্ধেকের বেশি বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। এর মধ্যে জাইকার কাছেই সরকার ৮৫০ কোটি টাকা (১ বিলিয়ন ডলার) চেয়েছে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশের ১১০০ কোটি টাকার (১২৯ মিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে আরও ওডিএ (অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স) ঋণ বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।