বাগেরহাটে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে এক সপ্তাহ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে রোগী ও রোগীর স্বজনদের। সময় মত রিপোর্ট না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সতর্কতা অবলম্বন করা যাচ্ছে না। রোগী ও রোগীর স্বজনরাও হতাশায় ভুগছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। সদর হাসপাতালে পিসি আর ল্যাব স্থাপনের দাবি তাদের।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলায় এ পর্যন্ত ১৭৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩০ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। রিপোর্টে ১১১ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে। ২২২ জনের রিপোর্ট এখনও অপেক্ষমান রয়েছে। এদের মধ্যে ১২০টি নমুনা ১৪ থেকে ১৬ (৬,৭,৮ জুন) দিন আগে পাঠানো হয়েছে। নমুনাগুলো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসি আর ল্যাবে রয়েছে। কবে নাগাদ এই রিপোর্ট পাওয়া যাবে তাও সঠিক করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে নমুনা দেওয়ার পরে রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ায় হতাশায় প্রকাশ করেছেন রোগী ও রোগীর স্বজনরা। রিপোর্ট নেওয়া সন্দেহভাজন রোগীর প্রতিবেশীরাও এক ধরণের আতঙ্কে থাকছে।
করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া এক রোগী বলেন, ৭ তারিখে নমুনা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত রিপোর্ট পাইনি। জানিনা করোনা হয়েছে কিনা। বাসার সবাইতো টেনশনে আছেই। প্রতিবেশীরাও নানা কথা বলছে। রিপোর্ট এলে বুঝতে পারতাম। চিকিৎসকদের কাছে রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলে পেয়ে যাবেন একটু অপেক্ষা করেন।
নমুনা দেওয়ার পরে রিপোর্ট না পাওয়া এক রোগীর স্বজন রহিম বলেন , ১০-১২ দিন আগে ভাইয়ের নমুনা নিয়েছে। কিন্তু এখনও রিপোর্ট আসেনি। ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা অনেকটা ভাল। তারপরও জোর করে ঘরে বদ্ধ করে রেখেছি। রিপোর্ট পেলে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত টেনশন কাটছে না।
চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মামুন হাসান বলেন, করোনা নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়। ১২দিন পরেও রিপোর্ট পেয়েছি। এ ধরণের হলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের নিয়ম মানাতে অনেক কষ্ট হয়। ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: অসীম কুমার সমাদ্দারও একই মন্তব্য করেছেন।
করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রায় একই চিত্র ১৮ লাখ লোক অধ্যুষিত বাগেরহাট জেলার অধিকাংশ ক্ষেত্রে। যাত্রাপুরেরর এক ভ্যান চালক নমুনা দেওয়ার পর ভ্যান চালিয়েছেন। ৬ দিন পর তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এমন ঘটনা আরও একাধিক রয়েছে।
বাগেরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুর রব বলেন, প্রাণঘাতি করোনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে অতিবিলম্ব হওয়া ভয়াবহ। কারণ এদের মধ্যে যারা পজিটিভ, তারা অজান্তে সামাজিক সংক্রমন ছড়াচ্ছে। ফলে ভয়াবহ এ রোগের দ্রুত বিস্তার হচ্ছে। ১৮ লক্ষ লোক অধ্যুষিত এ জেলায় কোন পিসিআর ল্যাব নেই এটাও কষ্টের। তাই করোনার মহা-দুর্যোগের সময়ে সঠিক পরীক্ষা ও এ জেলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এখানে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে.এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাগেরহাট জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^ বিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে স্থানীয় নমুনার চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের ১২০টি নমুনা অপেক্ষমান রয়েছে। আমরা যোগাযোগ করেছে যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই নমুনা গুলোর পরীক্ষা রিপোর্ট পাওয়া যায়। আর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^ বিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে যেসব নমুনা পাঠানো হচ্ছে তা দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, বাগেরহাটে পিসি আর মেশিন স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে হয়েছে। আমরা আশা করি বাগেরহাটে পিসি আর ল্যাব স্থাপন হলে বাগেরহাটের নমুনা গুলোর রিপোর্ট স্বাস্থ্য বিভাগ দ্রুত পাবে। সময় মত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।