রাজশাহীর কেশরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আলী মণ্ডলের বিরুদ্ধে সরকারি ১০০ বিঘা জমি দখল করে মার্কেট নির্মান ও শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । সাবেরের বাড়ি কেশরহাট পৌর এলাকার ফুলশো গ্রামে। সে বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে এসে জেলা যুবলীগের পদ পেয়ে শুরু করেন দখলবাজি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম।
একইসঙ্গে তিনি মৎস্য ব্যাবসায়ী। মাছের হ্যাচারি ও পুকুরের ব্যবসার পাশাপাশি কাউন্সিলর পদ ব্যবহার করে দখলবাজি করে উপার্জন করেছেন শতকোটি টাকা। যার বেশির ভাগই সরকারি সিএমবির জায়গা দখল করে আয় করা। তার দখলে আছে ১০০ বিঘার বেশি সরকারি জমি। সম্প্রতি ঐ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র দপ্তরে। কাউন্সিলর হওয়ার আগে তিনি সুপারির ব্যবসা করতেন। সেই সুপারি ব্যবসায়ী সাবের কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ যুবলীগের তকমা লাগিয়ে ১০০ বিঘা জমি দখলে নিয়েছেন তিনি। চলতি বছরে শোরুম থেকে ১৭ লাখ টাকা ডাকাতি করেন। যার মামলা আদালতে চলমান। একজন জনপ্রতিনিধির এমন বিতর্কিত কর্মকান্ডে চরম হতাশ ভোটারেরা। ফলে দূর্নীতি দখল বাজ ডাকাত নারী লোভী সাবেরকে কাউন্সিলর ও দলীয় পদ থেকে দ্রুত বহিস্কারের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)’র অফিসে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবের আলীর বড় একটি সময় কেটেছে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোটা অংকের টাকা ঘুষের বিনিময়ে জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। আর বর্তমানে সেই পদ ব্যবহার করে কোটিপতি বনে গেছেন সাবের আলী। কেশরহাট বাজারের ৫২ বিঘার প্রায় ২৫ বিঘা সরকারি জমি তার দখলে। কেশরহাট বাজার তেলের পাম্পের পাশে রাস্তার ধারে পুর্বদিকে সিএনবির জায়গায় অনুমতিবিহীন বিস্কুট থেকে ফিড তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন। একইসঙ্গে তার পাশে ফার্নিচারের দোকান করে দখল করেছেন জমি। তবে ফার্নিচারের দোকানটি ভাড়া দেওয়া আছে। এখানে কারখানা ও দোকান মিলে ২ বিঘার ওপরে সিএনবির জায়গা দখলে রেখেছেন এই ভূমিদস্যু সাবের আলী।
অপরদিকে ঠিক তার সামনে রাস্তার পশ্চিম ধারে সিএনবির জায়গায় একাধারে ১০টি টিনের দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এর পাশের ১৯ শতক মালিকানা জমি সম্প্রতি কিনেছেন বলে জানা গেছে। ঠিক তার সামনের প্রায় তিনবিঘা জমি দখল করে রেখেছেন। বাজারে তেল পাম্পের সামনে পৌরসভায় যাওয়ার রাস্তার শুরুতেই দক্ষিণ ধারে টিন দিয়ে ঘিরে সেখানে আটা তৈরির মিল কারখানা গড়ে তুলে ভাড়া দিয়ে দখলে রেখেছেন। এ ছাড়াও সম্প্রতি হাইস্কুল মার্কেটের সামনে জোর করে দখল করা জায়গার পেছনে ফাঁকা প্রায় ৩ বিঘা জমি দখল করেছেন। এর পেছনে লম্বা একটি চায়ের দোকান বোর্ড ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে দখলে রেখেছেন। এর সামনে পৌর ব্রিজের সঙ্গে একাধারে ৫টি পাকা ঘর, ৫/৬ টি টিনসেড ঘর, এরপর হলুদ মরিচের গুড়া তৈরির কারখানা করে ভাড়া দিয়ে দখলে রেখেছেন। ঠিক তার পূর্বদিকে পুকুরের ধারে ২ তলা বিল্ডিং নির্মাণ করে দখল করেছেন, যা পুরনো পৌর ভবন ছিল।
শুধু কি তাই, বিল্ডিংয়ের পশ্চিমপাশে ক্লাব ঘর, সোনা চাদির কারখানা ৪টি, পার্টসের দোকান ১টি, লেদের দোকান ১টি, আরও ২টি ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে দখলে রেখেছেন। তার সামনে কামার ২ চালি, কাঠপট্রির পাশে ৪টি দোকান ঘর দখলে রেখে ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়াও বাড়ির পাশে প্রায় ৪০ বিঘা বিলের ৩ ফসলি জমি নষ্ট করে অবৈধ পুকুর খনন করেছেন। তা ছাড়া এলাকা ও এর আশেপাশে প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৩০/৩৫ টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। সবমিলে কাউন্সিলর সাবের আলী সরকারি প্রায় শত বিঘা জমি দখল করে ভোগ করছেন।
দুদকের অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কাউন্সিলর সাবের আলীর স্ত্রী ও ২ সন্তান থাকতেও বছর খানেক আগে মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের ভুট্টু নামের এক লোকের বৌ ভাগীয়ে নিয়ে বিয়ে করে অন্যত্র ভাড়া বাসায় রেখেছেন। ভুট্রু সাহেবের পুকুর দেখভাল করা অবস্থায় তার স্ত্রীর সাথে অপকর্ম করে বিয়ে করতে বাধ্য হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
বর্তমানের তার ২ সংসার। এর প্রায় একযুগ আগে মোহনপুর থানায় মাছ চুরির মামলায় জেল খাটেন এই কাউন্সিলর। এ ছাড়া সম্প্রতি তিনি অবৈধ কাজে ব্যাবহারের জন্য ১টি প্রাইভেট কার কিনেছেন যার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। বর্তমানে এলাকায় তিনি ভূমিদস্যু নামে পরিচিত।
এ ছাড়া স্ত্রী, সন্তান ও তার নির্ভরশীলদের নামে বেনামে এমনকি আত্মীয় স্বজনদের নামে বিপুল ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন। একই সঙ্গে অবৈধভাবে দখল করে রাখা সড়ক ও জনপথের জমি লিজ পেতে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ অফিসে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো ঘুষ দিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
একজন মাছ চোর ও ডাকাত কিভাবে জনপ্রতিনিধির চেয়ারে থাকেন। নাকি টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করছেন।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর সাবের আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, এ সব মিথ্যা। আমি কোন জমি দখল করিনি। আমার জমির কি অভাব পড়েছে? আমি কেন সরকারি জমি দখল করতে যাব। তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ কি মিথ্যা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সব মিথ্যা অভিযোগ।
মেয়র সহিদের কাছে এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কিছুই জানিনা। আপনার পৌরসভার কাউন্সিলর আপনি কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কি জানতে চাইলে সরকারি খাস জমি দখলের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাজশাহী অফিস থেকে জানান, কেশরহাটে অনেক অভিযান করেছি। আমাদের সড়ক ও জনপথের অনেক জমি রয়েছে। তবে খাতা কলম না দেখে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে সওজের জমি কেউ দখল করলে তাকে ভোগ করতে দেওয়া হবে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন উদ্দিন জিনিউবিডি২৪’কে বলেন, ‘অভিযোগ দুদকে পড়েছে দুদক সেটি অনুসন্ধান করেবে। এরপর তিনি যদি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কেউ দোষী প্রমাণিত না হলে মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান জিনিউজবিডি২৪’কে বলেন, ‘কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পেলে আমরা সেটা যাচাই বাছাই করি। এরপর সু-স্পষ্ট অভিযোগ সেটা অনুসন্ধান করা হয়। আর অনুসন্ধানের পর আমরা তদন্ত করি এবং শেষে মামলা দায়ের করি। আমরা অভিযোগের বিষয়বস্তু দেখি। আর যেগুলো আমরা সফল হবো ভাবি সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করা হয়। দুদক আগের চেয়ে গতিশীল সুতরাং দুর্নীতি করে কারও পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।