কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যার ফলে জেলার ১৬টি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের আপদকালীন সময় টানা তিনমাস ঘরে বন্দি মানুষজনের মাঝে চরম দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে বন্যা।
জেলা ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ হতে জানা যায় বন্যায় ১ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে নিমজ্জিত বা ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার হাজার হেক্টর বলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার কৃষক ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে জানা গেছে।
মৎস বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও ইতোমধ্যে শতাধিক পুকুর ও মাছ চাষের জমি প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছচাষীরাও।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩২ ও চিলমারীতে ৩৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৬৪ ও ৭২ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুলাইয়ের প্রথম দিকে ধরলা নদীর পানি হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি স্থিতিশীল থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বন্যার কারণে ব্রহ্মপূত্র অববাহিকার গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে সকল ধরণের ফসলাদি তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে গবাদী পশু-পাখির খাবারের সংকট। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরাও। এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হচ্ছে। বন্যার ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিরক্ষা বাঁধগুলো। কৃষি নির্ভর বানভাসি মানুষগুলো গবাদী পশু-পাখি নিয়ে অনেক বিপাকে রয়েছে। এখন নিজেদের চেয়ে গো-খাদ্য ও অন্যান্য পোষা প্রাণীর খাদ্য নিয়ে খুব চিন্তায় বানভাসি মানুষজন।
কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যায় ৩০২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের পাশাপাশি ৩৬ লক্ষ ৫০হাজার টাকা উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা প্রতিদিন বন্যা কবলিতদের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কেউ যাতে খাদ্য সংকটে না পরে এবং যাদের নিরাপদে সড়িয়ে নেয়া দরকার তাদের পাশে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যন্ত এলাকায় থেকে কাজ করছে !