কুড়িগ্রামের বৃহৎ রাজিবপুর জালচিরা বাঁধ মৎস্য প্রকল্পটি সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাবে এখন হুমকির মুখে পড়েছে ! প্রকল্পটির উৎপাদিত মাছ দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করাসহ রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা এবং জামালপুর জেলার সানন্দবাড়ী, পাথরের চরের বিভিন্ন এলাকায় মাছের জোগান দিয়ে আসছে। প্রকল্পের সুবাদে কর্মসংস্থানও হয়েছে প্রায় ৫০টি পরিবারের এবং কষ্ট লাঘব হয়েছে ৪৩৫ টি পরিবারের। এ ছাড়াও মাছের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে আসছিলো প্রকল্পটি !
১৯৮০ সালেও ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী সোনাভরির একটি অংশ জিঞ্জিরাম নদীর সাথে মিলিত ছিল। ১৯৮২ সালে রৌমারী-ঢাকা মহা সড়ক নিমার্ণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে, ভারতীয় সীমানা ঘেঁষা জিঞ্জিরাম নদীর ভাঙ্গন রোধে ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে নদীর পশ্চিম তীরে একটি বেরি বাঁধ নির্মাণের ফলে মূলত শাখা নদী জালচিরা বাঁধ প্রকল্পের জায়গাটি আবদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়।
১৯৮২ সালের পর থেকে আবদ্ধ জলাশয়টি পরিত্যাক্ত ও অনাবাদি ছিল। ওই সময় থেকে এলাকার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যে কেউ ইচ্ছেমত মাছ ধরত ওই জলাশয়ে।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মরিচাকান্দি নামক এলাকায় ২০১০ সালে জালচিরা বাঁধ মৎস্য প্রকল্পটি প্রথম কার্যক্রম শুরু করে স্থানীয় কয়েকজন জমির মালিক। নানা বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে আস্তে আস্তে প্রসারিত হতে থাকে এটি। বর্তমানে ৪৩৫ জন সদস্য বিশিষ্ট প্রকল্পে ১৫০ একর জমি নিয়ে বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়েছে যা কুড়িগ্রাম জেলার সব চেয়ে বড় মৎস্য প্রকল্প বলে খ্যাত।
এ মৎস প্রকল্প থেকে বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এতেকরে সাবলম্বী হয়েছে ওই এলাকার ৪৩৫টি পরিবার। পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ জন কর্মজীবী মানুষের ।
প্রকল্পের মাছ স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রয় হওয়ায় মাছের বাজার সহনীয় পর্যায় রয়েছে বলে ধারণা প্রকল্প সংশিস্নষ্টদের। তবে নানা প্রতিকূলতায় ভোগান্তিও পোহাতে হয় তাদের। গত ২০১৯ সালের অনাকাঙ্খিত বন্যায় ভেস্তে গেছে তাদের মৎস্য প্রকল্পটি। ক্ষতিও হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। এত বড় ধরণের ক্ষতি সামলাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে ৪৩৫ টি পরিবারের।
২০১৯ এর বন্যা পরবর্তী সময়ে মৎস্য অফিস ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব, প্রকল্প সভাপতির আইডি কার্ড ও মৎস প্রকল্পের ছবি জমা নিয়েছিল সরকারী অনুদানের কথা বলে। এতে কোন সুফল মেলেনি তাদের। পরবর্তীতে কোন খোজ-খবরও নেননি ওই মৎস্য কর্মকর্তা। প্রকল্পটি সচল রাখতে প্রতিনিয়ত হিমসিম খাচ্ছে প্রকল্প সংশিস্নষ্টরা। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে প্রকল্পটি।
প্রকল্প পরিচালক ঈব্রাহীম খলিল আকন্দ অভিযোগ করে বলেন, “শুধু রাজিবপুর নয়, কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে আমাদের প্রকল্প সবচেয়ে বড়। আমাদের প্রকল্পে বিভিন্ন সময় মাছের নানাবিধ রোগ-বালাইয়ে মাছ মরে যায় এবং ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। গত ১৮ জুন ব্যাপকভাবে মাছ মরে যাওয়ার বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তাকে ফোনে জানানোর কারণে তিনি পরামর্শ না দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি আমাদের কোন পরামর্শ, সহযোগিতা বা খোজ-খবর নিতে আসেন না।
প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বিশ্বাস জানান, “প্রকল্পে মাছ চাষ করে আমরা সাবলম্বী। সরকারী সহযোগিতা পেলে এই প্রকল্প বৃদ্ধি করে আরো চার গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব ! যা ঢাকাসহ সারাদেশে রপ্তানী করাও সম্ভব।” এজন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুস শাকুর বলেন, “ফোন পেয়ে প্রকল্পটি পরিদর্শন করে পরামর্শ দিয়েছি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কিছু পোনা মাছ অবমুক্ত করার জন্য পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তারা ওই পোঁনা না নিয়ে জানিয়ে দেয়, তাদের সহযোগিতার দরকার নাই। তারপর থেকে তারা অফিসে আর যোগাযোগ করে নাই।