কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার একটি মাদ্রাসায় দুইজন কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা ২২ লাখ টাকা রফায়, ওই উপজেলা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মাদরাসায় গোপনে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য মাদরাসা বোর্ডের মহা-পরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে একজন কর্মকর্তাকে বিমান ভাড়া দিয়ে নিঃচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় এনে ঘন্টা খানেকের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করে ওই কর্মকর্তা বিমান যোগে ফিরে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান। তবে বিমোনযোগে আসার বিষয়টি ওই কর্মকর্তা অস্বীকার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ফুলজান বছিরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার ও ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাও. রফিকুল ইসলাম সম্প্রতি গোপনে দু’টি পত্রিকায় একজন নিরাপত্তা কর্মী ও একজন আয়া পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি গোপন রেখে স্থানীয় চাকুরী প্রত্যাশী ২/৩ টি পরিবারের সাথে সুপার দরকষাকষি শুরু করে। এরমধ্যে নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের জন্য ২২ লাখ টাকায় রুহুল আমিন ও আর্জিনা খাতুনদের পরিবারের সাথে চুড়ান্ত রফা করেন।
এজন্য টাকার যোগান দিতে গিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত ওই দুটি পরিবার এলাকার বিভিন্ন জনের কাছে ধার-দেনা করতে গেলে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। ধুরন্ধর ওই সুপার মাদরাাসা এলাকার লোকজনদের চোখে ধুলো দিয়ে অত্যন্ত গোপনে তার নিয়োগ প্রক্রিয়া গুছিয়ে আনেন। আয়া পদে ১০জন প্রার্থী আবেদন করলেও ৬ জন প্রার্থীকে চিঠি না দিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীর নিয়োগ চুড়ান্ত করতে তিনজন প্রক্সি প্রার্থীকে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশ পত্র দেন।
অন্যদিকে নিরাপত্তাকর্মী পদে সুপারের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে রুহুল আমিনসহ মাত্র দুইজন প্রক্সি প্রার্থী হিসেবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র দেন। মাদরাসা সুপারের স্বাক্ষরিত বাংলায় লেখা ওই প্রবেশ পত্রটির ৯টি স্থানে বানান ভুল ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে, ভেন্যু হিসেবে নির্বাচিত উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি মাঝবিল বালিকা দাখিল মাদরাসাটি সুপারের জামাতার বাড়ির এলাকা হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্ন করতে ওই এলাকা বেছে নেন। এদিকে, গোপন নিয়োগের বিষয়টি ফাঁস হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষে সুপার গত ৩ জুন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা- পরিচালকের প্রতিনিধি চেয়ে আবেদন করেন। ওই পত্রের প্রেক্ষিতে গত ৫ জুলাই মহা-পরিচালক মাদরাসা ২০১৮ জনবল নিয়োগ কাঠামো অনুযায়ী নব-সৃষ্ট নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ বোর্ডে তার প্রতিনিধি হিসেবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন শাখার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনিত করেন।
মাদরাসা সুপার মাও. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি অবহিত হয়ে ডিজি’র প্রতিনিধি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগসাজশ করে গোপনে নিয়োগ বোর্ডের বিষয়টি চুড়ান্ত করেন। এরপর পরিকল্পিতভাবে গত ১১ জুলাই ওই কর্মকর্তাকে বিমানে করে উলিপুরে নিয়ে আসেন। মাত্র ঘন্টা খানেকের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের প্রতিনিধি আবারও বিমানে করে ঢাকা ফিরে যান বলে নিয়োগ বোর্ড সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন।
এ গোপন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাষ্টারমাইন্ড হিসেবে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবিএম নকিবুল হাসান নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন।
এ বিষয়ে মাদরাসা সুপার মাও. রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি মাদরাসায় ওঠার কারণে নিয়োগ পরিক্ষা ওখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে টাকা লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবিউল হাসান বলেন, মাদরাসায় পানি সে জন্য নিয়োগ বোর্ডটা ওখানেই নেয়া হয়েছে। ডিজির প্রতিনিধি আসার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন উনি ওই দিনই প্লেনে এসে প্লেনে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, আপনার মত আমারও প্রশ্ন ছিল এত জায়গা থাকতে ওই এলাকায় কেন।
নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধি উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বিমানযোগে আসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় উলিপুরের একটি মাদরাসায় নিয়োগ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা- পরিচালক সফিউদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে হয়তো এমনটা করেছে। তবে আপনাদের কোন আপত্তি থাকলে অভিযোগ করেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা করা হবে।