কুড়িগ্রামে আবারো ধরলা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম আতংকিত হয়ে পড়েছে পানি বন্দি মানুষেরা ! ধরলা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৬ সে۔মি۔ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুইদিন ধরে নদনদীর পানি অনেক কমলেও শুক্রবার আবার নতুন করে ধরলা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে ! গত ২৪ ঘন্টায় ধরলার পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশংকা।
তবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, দুই একদিন পানি বাড়বে তবে আবারও কমতে থাকবে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, আগামী ৮ জুলাই থেকে পানি আবারো অস্বাভাবিক বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন সুত্র জানায়, জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। প্রায় ১৭ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। আর বে-সরকারি হিসাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি।
জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, বন্যার্তদের জন্য ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বিতরণের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ইতোমধ্যেই উপজেলা গুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন করে আরো ২ হাজার মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ২ কেটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও শুকনো খাবার আলাদাভাবে ত্রিশ হাজার প্যাকেটের চাহিদা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতভর ও শুক্রবার দিনভর অবিরাম বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সবগুলো নদনদীর পানি অনেক বেড়েছে। অবিরাম বর্ষণের কারণে সড়ক ও বাঁধের উপর আশ্রিত মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট আরো প্রকট হয়েছে। দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সংকট, বেড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় ৯ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তম্মধ্যে বোরো ধানের বীজতলা আউশ ধান, শাক সবজি, তিল. কাউন, চিনা, মরিচ এবং পাট খেতসহ অন্যান্য সবজি ফসলও রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সায়হান আলী জানান, এ পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ কীট ২৫ হাজার সরবরাহ করাসহ নতুন ১২টি টিউবওয়েল ও ১২টি ল্যাট্রিন বন্যা দুর্গদের জন্য বসিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে সংস্কার করে দেয়া হয়েছে ৪৩৫টি টিউবওয়েল। এছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৬ শতাধিক টিউবওয়েলের গোরা (প্লাট ফর্ম) উঁচু করে দেয়া হয়েছে।