কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক উচ্চতায় বৃদ্ধি পাওয়ায়, হয়েছে আরো নতুন নতুন এলাকা। ৯ টি উপজেলার মধ্যে কমবেশি সবক’টি উপজেলায় বন্যার পানি ঢুকছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। সেই সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। এসব এলাকায় সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাবার, তাবু-ত্রিপল বা গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর।
জেলা প্রশাসন থেকে নগদ অর্থ, ও চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও সেগুলো এখন পর্যন্ত কোথাও বিলি করা হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সুত্র জানায়, শনিবার ২৭ জুন বিকাল ৩ টায়, ধরলা নদী ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী চিলমারী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তারা জানায় পানির উচ্চতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানির বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বন্যা কবলিত এসব এলাকার জন প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, সেখানে বিশুদ্ধ পানি, তাবু কিংবা ত্রিপল, শুকনা খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রয়োজন। বেশিভাগ এলাকা ডুবে থাকায়, স্যানিটেশনের সমস্যায় অবর্ণনীয় দূভোর্গে পড়েছেন নারীরা।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, ৯ টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় সবক’টিতে কমবেশি পানি উঠেছে। তার ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এরমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ১৬ হাজার মানুষ। এছাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশালের চর, ফকিরে চর, ব্যাপারী পাড়া ও আবতাবগঞ্জ এলাকার প্রায় ৩০০ বাড়ি নদী ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় ৯ শতাধিক মানুষ এখন গৃহহীন। এরা পড়েছেন মারাত্মক খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে।
সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিক হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ২৫ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ৩ শতাধিক পরিবারে ১ হাজার মানুষ। তিনি আরো জানান, তার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে শুধু একটি ওয়ার্ডে এখনো পানি উঠে নাই। বাকি সব পানিতে নিমজ্জিত। আর ২ হাত পানি বাড়লেই সম্পুর্ণ ইউনিয়ন পানির নিচে চলে যাবে।
প্রচন্ড খাদ্য সংকট রয়েছে তার এলাকায়। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও গৃহ নির্মাণ সামগ্রীরও অভাব দেখা দিয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে এসব সামগ্রী বন্যা কবলিত মানুষজনের মাঝে পৌঁছানো দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চিলমারী উপজেলার বিস্তির্ণ চরাঞ্চল এখন পানির নিচে। এখানে পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। সবচেয়ে বেশি এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে নয়ারহাট ও অষ্টমীর চর ইউনিয়ের বিস্তির্ণ এলাকা। নয়ারহাট ই্উনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফা জানান, তার এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, চর কালির আলগা, পোড়ার চর, এবং ঝুনকার চরের প্রায় ৫ শতাধিক ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক সহস্রাধিক মানুষ। ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে বন্যা পরিস্থিতির আরও চরম অবনতি ঘটবে বলে এলাকার মানুষজন আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
আজ কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বন্যা পরিস্থিতি দেখতে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর ও চর গুজিমারীতে যান। তিনি বলেন, বন্যা কবলিত মানুষ যাতে শুকনা খাবার পায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মজুদে পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা জানায়, ইতোমধ্যে, জেলার বন্যা কবলিত মানুষজনের জন্য নগদ ২৯ লাখ টাকা ও ২’শ ৮২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।