ঢাকা ০১:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ কমেনি

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র,ধরলা ও দুধকুমোর নদীর পানি টানা এক সপ্তাহ ধরে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে । ফলে বন্যাকবলিত এলাকা গুলোর বানভাসি প্রায় লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে । আজ সকাল ৬ টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

বন্যা কবলিত এলাকার বাড়ী-ঘর থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট তীব্র হচ্ছে । আজ বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরের চরের নাদের হোসেন ও মিয়াজি পাড়ার ইউনুস আলী জানান, বন্যার ৭দিন চললেও তাদের বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি অথবা বেসরকারি কোন ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। টিভিতে খালি শুনি সরকার ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে বাস্তবে তার চিহ্ন নাই। এখানে মানুষের বিশুদ্ধখাবার পানি ও শুকনো খাবারের বেশি প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

বুড়বুড়ি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত ৬নং ওয়ার্ডের আব্দুর রাজ্জাক জানান, মানুষের মাঝে তীব্র খাদ্য সংকট থাকলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে কোন সরকারি সাহায্য কিংবা ত্রাণ আসেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে ইউপি সদস্যদের দ্বন্দ্ব, কিছু কিছু ইউনিয়নে সরকারি দলের প্রতিনিধিদের সাথে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সমন্বয়ের অভাবে জরুরী ত্রাণ বিতরণে বিলম্বে হচ্ছে। এ অবস্থায় বানভাসি মানুষদের মাঝে ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ দিন আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম সরকারীভাবে ত্রান বরাদ্দের চিঠি ইসু করলেও জেলার অধিকাংশ এলাকায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ দৃশ্যমান হয়নি । দুই-একটি এলাকায় ত্রাণ বিতরণ এর দৃশ্য দেখা গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল একে বারেই অপ্রতুল। উলিপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হলেও গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাতিয়া ও থেতরাই ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করা হয় যা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল নগন্য।

এদিকে বন্যার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বিস্তীর্ণ চারন ভুমি পানির নীচে তলিয়ে থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন তাদের গবাদিপশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে রয়েছে।

গত ২৪ ঘন্টায় বন্যার পানিতে ডুবে আরো ১ শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জেলার সিভিল সার্জন অফিস। এনিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে ৫ শিশু ও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে সদর উপজেলার ২ শিশু, চিলমারী উপজেলার ১ শিশু ও ১ বৃদ্ধ, নাগেশ্বরী উপজেলার ১ শিশু ও উলিপুর উপজেলার ১ শিশু রয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানায়, বন্যার্তদের জন্য ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বিতরণের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ চলছে। নতুন করে আরো ১শ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ১ কেটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নতুন বরাদ্দ পেলে তা বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

কুড়িগ্রামে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ কমেনি

আপডেট সময় : ১০:৩৭:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র,ধরলা ও দুধকুমোর নদীর পানি টানা এক সপ্তাহ ধরে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে । ফলে বন্যাকবলিত এলাকা গুলোর বানভাসি প্রায় লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে । আজ সকাল ৬ টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

বন্যা কবলিত এলাকার বাড়ী-ঘর থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট তীব্র হচ্ছে । আজ বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরের চরের নাদের হোসেন ও মিয়াজি পাড়ার ইউনুস আলী জানান, বন্যার ৭দিন চললেও তাদের বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি অথবা বেসরকারি কোন ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। টিভিতে খালি শুনি সরকার ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে বাস্তবে তার চিহ্ন নাই। এখানে মানুষের বিশুদ্ধখাবার পানি ও শুকনো খাবারের বেশি প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

বুড়বুড়ি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত ৬নং ওয়ার্ডের আব্দুর রাজ্জাক জানান, মানুষের মাঝে তীব্র খাদ্য সংকট থাকলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে কোন সরকারি সাহায্য কিংবা ত্রাণ আসেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে ইউপি সদস্যদের দ্বন্দ্ব, কিছু কিছু ইউনিয়নে সরকারি দলের প্রতিনিধিদের সাথে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সমন্বয়ের অভাবে জরুরী ত্রাণ বিতরণে বিলম্বে হচ্ছে। এ অবস্থায় বানভাসি মানুষদের মাঝে ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ দিন আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম সরকারীভাবে ত্রান বরাদ্দের চিঠি ইসু করলেও জেলার অধিকাংশ এলাকায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ দৃশ্যমান হয়নি । দুই-একটি এলাকায় ত্রাণ বিতরণ এর দৃশ্য দেখা গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল একে বারেই অপ্রতুল। উলিপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হলেও গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাতিয়া ও থেতরাই ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করা হয় যা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল নগন্য।

এদিকে বন্যার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বিস্তীর্ণ চারন ভুমি পানির নীচে তলিয়ে থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন তাদের গবাদিপশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে রয়েছে।

গত ২৪ ঘন্টায় বন্যার পানিতে ডুবে আরো ১ শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জেলার সিভিল সার্জন অফিস। এনিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে ৫ শিশু ও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে সদর উপজেলার ২ শিশু, চিলমারী উপজেলার ১ শিশু ও ১ বৃদ্ধ, নাগেশ্বরী উপজেলার ১ শিশু ও উলিপুর উপজেলার ১ শিশু রয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানায়, বন্যার্তদের জন্য ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বিতরণের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ চলছে। নতুন করে আরো ১শ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ১ কেটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নতুন বরাদ্দ পেলে তা বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।