খুলনার নতুন বাজার কয়েকটি ডিপোতে গলদা বড় সাইজ আগে ছিল ১২০০ টাকা কেজিএখন ৫৫০ টাকা। ছোট সাইজ ৭০০ টাকা ছিল এখন ৪০০ টাকা। বাগদা বড় সাইজ ছিল ১১৫০ টাকা এখন ৫০০ টাকা। ছোট সাইজ ৬৫০ টাকাএখন ৪৫০ টাকা। আজ রবিবার সকালে। কতিপয় গলদা-বাগদা ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে জানাযায়।
করোনার কারণে বিদেশে মাছ রপ্তানি কম হওয়ায় অন্য মাছের তুলনায় খুবই কম দরে স্থানীয় বাজারে গলদা ও বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। বিগত বছর গুলোর তুলনায় গলদা ও বাগদা চিংড়ির দর অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বিজন বৈদ্য বলেন, স্থানীয় বাজারে অস্বাভাবিক ভাবে কমেছে গলদা-বাগদা চিংড়ির দাম। মাছের দাম কমে যাওয়া, ঋণের চাপ সহ নানা প্রতিকূলতায় চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।
তার মতো অনেক ঘের মালিকরা জানান, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের গলদার চাহিদা না থাকায় খুলনা অঞ্চলের খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে রপ্তানি যোগ্য গলদা চিংড়ি। এতে নিরুৎসাহী হচ্ছেন বৃহত্তর খুলনার ক্ষতিগ্রস্থ্র চিংড়ি চাষিরা। চাষের খরচ না ওঠার দুশ্চিন্তায় তারা। মহানগরীর ময়লা পোতা সন্ধ্যা বাজারের কয়েক জন মাছ বিক্রেতা বলেন, বিদেশে গলদা বাগদার চাহিদা কমে গেছে। যে কারণে রপ্তানিযোগ্য বড় বড় বাগদা-গলদা খোলা বাজারে অনেকটা সস্থায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে গেছে হাজার হাজার মাছের ঘের। ঝড়ের দিনে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশিব্যাপকভাবে জোয়ারেরপানি বেড়েযাওয়ায়মাছের ঘের ডুবে সব মাছ বেরহয়ে গেছে। এতে করে মাছ চাষিদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। খোলা বাজারে বড় বড় গলদা-বাগদার দাম কম হওয়ায় ক্ষতি গ্রস্থ্য হওয়া প্রকাশ করেন। আগে আমাদের অঞ্চলের চাষ হওয়া গলদা বাগদা বিদেশিরা খেতেন। এবছর দাম কম হওয়ায় আমরা খেতে পারছি। বড় আকারের গলদা সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে কিনতে পারছি।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি বেচা-কেনার সর্ববৃহৎ আড়ৎ ফকির হাটের ফলতিতা মৎস্য আড়ৎ সূত্র জানায়, প্রতিদিন এ আড়তে পাঁচ হাজার মেট্রিক টনের মতো সাদা মাছ ও চিংড়ি বেচা-কেনা হয়। খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, ফরিদপুর ও গোপাল গঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার চিংড়ি চাষি ও ব্যবসায়ীরা এ আড়তে কেনা-বেচাকরেন। মাছের উৎপাদন ও দাম কমে যাওয়ায় বর্তমানে বেচা-কেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এদিকে, চিংড়ি রপ্তানি কারকরা জানান, করোনার কারণে দেশের দ্বিতীয় রপ্তানি পণ্য চিংড়ি রপ্তানিতে এসেছে স্থবিরতা। ক্রমান্বয়ে সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ির রপ্তানি নিম্ন মুখী। করোনা ছাড়াও বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ির কদর কমছে। বিশ্ব বাজার আবার ও বাংলাদেশের দখলে আনতে বাগদার পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি চাষের প্রয়োজন। ভেনামি চিংড়ি চাষে খরচ ও দাম কম আর উৎপাদন বেশি হওয়ায় এর চাহিদা বেশি।
মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয়অফিস সূত্রে জানাযায়, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৪টি জেলায় সাদা সোনা’ খ্যাত বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। এরমধ্যে খুলনায় ৩২ হাজার ৮শ ৯৬.০২ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৪৩০টি ছোট বড় বাগদা চিংড়ি ঘের, সাতক্ষীরায় ৬৬ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার ৯৩২টি ঘের, বাগেরহাটে ৫১ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ৩৫ হাজার ৬৮২টি ও যশোরের ৭শ ৫৮ হেক্টর জমিতে ৮৯৩টি ঘের রয়েছে। চিংড়ি রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠান গুলো বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
বহির্বিশ্বে একের পর এক বিক্রয় বাতিলের কারণে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে চিংড়ি প্রক্রিয়া জাতকরণ প্রতিষ্ঠান গুলো। বিশ্ববাজারে আমাদের চিংড়ির চাহিদা কমে আসছে। বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভারত, ইকুয়েডর ও ভিয়েতনামে ভেনামিজাতের চিংড়ির ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
ভেনামিচাষে উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হয়। ফলে কম মূল্যে সরবরাহ করার কারণে বাজার দখলে ভেনামির সঙ্গে পেরে উঠছেন না আমাদের দেশের গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষিরা। গলদা ও বাগদা চিংড়ি দিয়ে প্রতিযোগিতায়টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছেনা। বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ি সরবরাহ বৃদ্ধি বাংলাদেশের চিংড়ির দাম ও চাহিদা দুটোই কমিয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছে। এ অবস্থায় আমাদের দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করার কোনো বিকল্প নেই।