ঢাকা ০২:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে গম ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

চলতি মৌসুমে মেহেরপুরের গাংনীতে সরকারীভাবে গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জি হয়নি। কৃষক সরকারী মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে গমের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারী খাদ্যগুদামে গম দেননি তারা। এবছরের গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো দু’হাজার ৮৮২ মেট্রিক টন। অপরদিকে ধান ও চাল সংগ্রহ ব্যহত হবার আশংকা করা হচ্ছে। সময় মতো শস্য ক্রয় না করায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

জানা গেছে, গাংনী উপজেলায় গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো একহাজার ৮৪৭ টন। কিন্তু গাংনী উপজেলা ক্রয় কমিটি ৮৪৭ টন গম ক্রয় করে বাকি একহাজার টন গম ক্রয়ের টাকা ফেরত দিয়েছেন। খোলা বাজারে দর বেশি পাওয়ায় লটারীতে নির্বাচিত কৃষকরা গম সরবরাহ করেনি সরকারী খাদ্যগুদামে। গম মাড়াই করার পরপরই যদি সরকারীভাবে গম ক্রয় করতো তাহলে খাদ্যগুদামে গম দিতে পারতো বলে জানান গম চাষীরা।

উপজেলার শহড়াবাড়িয়ার শেখ শাফি জানান, এবছর গমের ফলন ভালো হয়েছে। মাঠ থেকে গম সংগ্রহের পর ঘরে রেখেও সরকারীভাবে গম ক্রয়ের কোন উদ্দ্যোগ ছিলো না। তাই গমের বাজার দর ভালো পেয়ে বাজারে বিক্রয় করেছি। একই কথা জানান বামন্দীর রফিকুল ইসলাম।

এদিকে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহে নেমেছে উপজেলা ক্রয় কমিটি। ইতোমধ্যে ধান চাষীদের তালিকা থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লটারীর মাধ্যমে বোরো ধান সরবরাহকারী চাষীদের নামের তালিকা সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতি কৃষক সরকারী মূল্যে সর্বোচ্চ তিন মেট্রিক টন ধান বিক্রয় করতে পারবেন। প্রতিমন ধানের মুল্য নির্ধারন করা হয়েছে এশহাজার ৪০ টাকা। খোলা বাজারে বোরো ধানের দাম বেশি পাওয়ার কারণে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিবে কি না সে বিষয়েও অশংকা রয়েছে। তবে ক্রয়ের সময়সীমা থাকার কারণে লক্ষমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামের ধান চাষী লাল্টু মিয়া জানান, কিছু শর্ত মেনে সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে ধান দিতে হয়। যে শর্তগুলো অধিকাংশ কৃষকরা পূরুণ করতে পারে না বলে গুদামে ধান দিতে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষকরা। একই কথা জানালেন ধান চাষী মুকুল হোসেন । তিনি আরো জানান, বোরো ধান বিক্রয় প্রায় শেষ আবারও নতুন ধান ওঠার সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু গাংনীতে সরকারী খাদ্যগুদাম ধান ক্রয় শুরু হয়নি। তাহলে আমরা কতোদিন ধান ঘরে রাখবো?।

গাংনী উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্বাস আলী জানান, সরকারীভাবে চালের দাম ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে কিন্তু বাজারে একই চালের মূল্য ৪১ টাকা। আমার জন্য বরাদ্দকৃত চাল যদি সরকারীগুদামে সরবরাহ করি তাহলে আমি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হব। যদি চাল সরবরাহ না করি তাহলে চালের মূল্যের জামানত দেওয়া ২% টাকা অর্থাৎ ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হব। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যদি মূল্যবৃদ্ধি করে তাহলে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বিশ্বাস বলেন, সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় তালিকাভুক্ত কৃষকদের মধ্যে থেকে লটারীর মাধ্যমে গম ও ধান ক্রয় করা হচ্ছে। ধান ও চাল সংগ্রহের সময়সীমা রয়েছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে চালের দাম খোলাবাজারে বেশি আছে। নতুন ধান উঠে যদি চালের দাম কমে তাহলে আমরা লক্ষমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হব। তবে মিলার যদি চাল সরবরাহ না করে তাহলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, গাংনী উপজেলায় আভ্যন্তরিন ক্রয় কমিটি গম ক্রয় করতে পারেনি তাই এক হাজার মেট্রিক টন গমের ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে ধান সংগ্রহ অভিযান শতভাগ অর্জন হবে। চালের বাজার দর হিসেব করে যদি চালকল মালিকরা চাল সরবরাহ না করে তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

গাংনীতে গম ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

আপডেট সময় : ১২:৩৮:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০

চলতি মৌসুমে মেহেরপুরের গাংনীতে সরকারীভাবে গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জি হয়নি। কৃষক সরকারী মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে গমের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারী খাদ্যগুদামে গম দেননি তারা। এবছরের গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো দু’হাজার ৮৮২ মেট্রিক টন। অপরদিকে ধান ও চাল সংগ্রহ ব্যহত হবার আশংকা করা হচ্ছে। সময় মতো শস্য ক্রয় না করায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

জানা গেছে, গাংনী উপজেলায় গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো একহাজার ৮৪৭ টন। কিন্তু গাংনী উপজেলা ক্রয় কমিটি ৮৪৭ টন গম ক্রয় করে বাকি একহাজার টন গম ক্রয়ের টাকা ফেরত দিয়েছেন। খোলা বাজারে দর বেশি পাওয়ায় লটারীতে নির্বাচিত কৃষকরা গম সরবরাহ করেনি সরকারী খাদ্যগুদামে। গম মাড়াই করার পরপরই যদি সরকারীভাবে গম ক্রয় করতো তাহলে খাদ্যগুদামে গম দিতে পারতো বলে জানান গম চাষীরা।

উপজেলার শহড়াবাড়িয়ার শেখ শাফি জানান, এবছর গমের ফলন ভালো হয়েছে। মাঠ থেকে গম সংগ্রহের পর ঘরে রেখেও সরকারীভাবে গম ক্রয়ের কোন উদ্দ্যোগ ছিলো না। তাই গমের বাজার দর ভালো পেয়ে বাজারে বিক্রয় করেছি। একই কথা জানান বামন্দীর রফিকুল ইসলাম।

এদিকে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহে নেমেছে উপজেলা ক্রয় কমিটি। ইতোমধ্যে ধান চাষীদের তালিকা থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লটারীর মাধ্যমে বোরো ধান সরবরাহকারী চাষীদের নামের তালিকা সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতি কৃষক সরকারী মূল্যে সর্বোচ্চ তিন মেট্রিক টন ধান বিক্রয় করতে পারবেন। প্রতিমন ধানের মুল্য নির্ধারন করা হয়েছে এশহাজার ৪০ টাকা। খোলা বাজারে বোরো ধানের দাম বেশি পাওয়ার কারণে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিবে কি না সে বিষয়েও অশংকা রয়েছে। তবে ক্রয়ের সময়সীমা থাকার কারণে লক্ষমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামের ধান চাষী লাল্টু মিয়া জানান, কিছু শর্ত মেনে সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে ধান দিতে হয়। যে শর্তগুলো অধিকাংশ কৃষকরা পূরুণ করতে পারে না বলে গুদামে ধান দিতে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষকরা। একই কথা জানালেন ধান চাষী মুকুল হোসেন । তিনি আরো জানান, বোরো ধান বিক্রয় প্রায় শেষ আবারও নতুন ধান ওঠার সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু গাংনীতে সরকারী খাদ্যগুদাম ধান ক্রয় শুরু হয়নি। তাহলে আমরা কতোদিন ধান ঘরে রাখবো?।

গাংনী উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্বাস আলী জানান, সরকারীভাবে চালের দাম ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে কিন্তু বাজারে একই চালের মূল্য ৪১ টাকা। আমার জন্য বরাদ্দকৃত চাল যদি সরকারীগুদামে সরবরাহ করি তাহলে আমি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হব। যদি চাল সরবরাহ না করি তাহলে চালের মূল্যের জামানত দেওয়া ২% টাকা অর্থাৎ ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হব। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যদি মূল্যবৃদ্ধি করে তাহলে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বিশ্বাস বলেন, সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় তালিকাভুক্ত কৃষকদের মধ্যে থেকে লটারীর মাধ্যমে গম ও ধান ক্রয় করা হচ্ছে। ধান ও চাল সংগ্রহের সময়সীমা রয়েছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে চালের দাম খোলাবাজারে বেশি আছে। নতুন ধান উঠে যদি চালের দাম কমে তাহলে আমরা লক্ষমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হব। তবে মিলার যদি চাল সরবরাহ না করে তাহলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, গাংনী উপজেলায় আভ্যন্তরিন ক্রয় কমিটি গম ক্রয় করতে পারেনি তাই এক হাজার মেট্রিক টন গমের ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে ধান সংগ্রহ অভিযান শতভাগ অর্জন হবে। চালের বাজার দর হিসেব করে যদি চালকল মালিকরা চাল সরবরাহ না করে তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।