ঢাকা ০৭:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে চাল বিতরণে অনিয়ম

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউপির মানবিক সহায়তার চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রতি ১৫ কেজি চাল দেয়ার নিয়ম থাকলেও দেয়া হয়েছে ১২ কেজি। সুষ্ঠুভাবে চাল বিতরণের নিমিত্তে একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া হলেও তিনি ঠুঁটো জগন্নাথের ভুমিকায়। এব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন থেকেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ষোলটাকা ইউপির দুই হাজার ১৫৬ জন দুস্থকে মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষে চাল বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রতি জনকে ১৫ কেজি করে চাল প্রদানের জন্য সরকারী আদেশ রয়েছে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন ট্যাগ অফিসার। নিয়মানুযায়ি চাল উত্তোলনের পরপরই ট্যাগ অফিসারের সম্মুখে সুবিধাভোগী ব্যক্তিকে চাল প্রদান করবেন এবং সঠিকভাবে ওজন দেখে বিতরণ করবেন। চাল ওজনে কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদে পাওয়া গেছে উল্টো চিত্র। জন প্রতি দু থেকে তিন কেজি করে চাল কম দেয়া হয়েছে।

রুয়েরকান্দি গ্রামের ভ্যান চালক দিলাল উদ্দীন জানান, ওজন পরিমাপক যন্ত্র নেই। একটা বালতিতে করে চৌকিদাররা চাল দিচ্ছে। কারো ১২ কেজি দিচ্ছে কারো দিচ্ছে ১৩ কেজি। অথচ চাল পাওয়ার কথা ১৫ কেজি। ট্যাগ অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপার ভাইজার আব্দুল্লাহ আল মাছুম বসে আছেন নীরবে। চাল কম দেয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগিরা জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। একই কথা জানালেন একই গ্রামের আলেহীম ও যুগিরগোফা গ্রামের জাহাঙ্গীর।

ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় ইউপি মেম্বর আব্দুল লতিফকে চাল উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিই গত ৩ জুলাই চাল উত্তোলন করেন ও ১২ জুলাই চাল বিতরণ শুরু হয়। উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে চাল ওজনে কম দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। চাল উত্তোলনের ৯দিন পর বিতরণ করা হচ্ছে কেন ? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন চাল বিতরণের সময় এটি ধরা পড়েছে তাই জানানো হয়নি।

ট্যাগ অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপার ভাইজার আব্দুল্লাহ আল মাছুম জানান, তিনি চাল বিতরণ দেখছেন। ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছুটা কম হচ্ছে এবং তার কিছুই করার নেই বলে অপারগতা প্রকাশ করলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপকারভোগীদের মাঝে একটি বালতিতে করে অনুমান নির্ভর চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ওজনে সঠিক দেওয়া হচ্ছে কিনা যাচাই করতে সেখানে কোন মাপকযন্ত্র পাওয়া যায়নি। তাছাড়া জনগনের অভিযোগ থাকার পরেও সমাধান না করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে কেন? এ বিষয়ে ট্যাক অফিসার সেখানে কি দায়িত্ব পালন করছেন ? এ বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী জানান, চাল গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যানকে ডিও দেওয়া হয়েছে। তিনি চাল বুঝে নিবেন এবং তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের সঠিক ভাবে বুঝে দিবেন এতে অজুহাত চলে না।

গাংনী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মতিয়ার রহমান জানান, চাল গুদাম থেকে ছাড় দেয়ার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি বুঝে নিয়েছেন। ৯ দিন পরে চাল কম দেয়া হয়েছে মর্মে অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। তিনি আরো জানান, আরো কয়েকটি ইউপিতে চাল ছাড় দেয়া হয়েছে সেখানে কোন অভিযোগ আসেনি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, তিনি কোন লিখিত অভিযোগ পান নি। তবে বিষয়টি শুনেছেন। স্থানীয়দের বেশ কয়েকজন মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন তবে বিষয়টি ছোট খাটো হবে ভেবে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে বিষয়টি অনেকদুর গড়িয়েছে।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

গাংনীতে চাল বিতরণে অনিয়ম

আপডেট সময় : ০২:১১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই ২০২০

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউপির মানবিক সহায়তার চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রতি ১৫ কেজি চাল দেয়ার নিয়ম থাকলেও দেয়া হয়েছে ১২ কেজি। সুষ্ঠুভাবে চাল বিতরণের নিমিত্তে একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া হলেও তিনি ঠুঁটো জগন্নাথের ভুমিকায়। এব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন থেকেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ষোলটাকা ইউপির দুই হাজার ১৫৬ জন দুস্থকে মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষে চাল বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রতি জনকে ১৫ কেজি করে চাল প্রদানের জন্য সরকারী আদেশ রয়েছে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন ট্যাগ অফিসার। নিয়মানুযায়ি চাল উত্তোলনের পরপরই ট্যাগ অফিসারের সম্মুখে সুবিধাভোগী ব্যক্তিকে চাল প্রদান করবেন এবং সঠিকভাবে ওজন দেখে বিতরণ করবেন। চাল ওজনে কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদে পাওয়া গেছে উল্টো চিত্র। জন প্রতি দু থেকে তিন কেজি করে চাল কম দেয়া হয়েছে।

রুয়েরকান্দি গ্রামের ভ্যান চালক দিলাল উদ্দীন জানান, ওজন পরিমাপক যন্ত্র নেই। একটা বালতিতে করে চৌকিদাররা চাল দিচ্ছে। কারো ১২ কেজি দিচ্ছে কারো দিচ্ছে ১৩ কেজি। অথচ চাল পাওয়ার কথা ১৫ কেজি। ট্যাগ অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপার ভাইজার আব্দুল্লাহ আল মাছুম বসে আছেন নীরবে। চাল কম দেয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগিরা জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। একই কথা জানালেন একই গ্রামের আলেহীম ও যুগিরগোফা গ্রামের জাহাঙ্গীর।

ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় ইউপি মেম্বর আব্দুল লতিফকে চাল উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিই গত ৩ জুলাই চাল উত্তোলন করেন ও ১২ জুলাই চাল বিতরণ শুরু হয়। উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে চাল ওজনে কম দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। চাল উত্তোলনের ৯দিন পর বিতরণ করা হচ্ছে কেন ? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন চাল বিতরণের সময় এটি ধরা পড়েছে তাই জানানো হয়নি।

ট্যাগ অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপার ভাইজার আব্দুল্লাহ আল মাছুম জানান, তিনি চাল বিতরণ দেখছেন। ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছুটা কম হচ্ছে এবং তার কিছুই করার নেই বলে অপারগতা প্রকাশ করলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপকারভোগীদের মাঝে একটি বালতিতে করে অনুমান নির্ভর চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ওজনে সঠিক দেওয়া হচ্ছে কিনা যাচাই করতে সেখানে কোন মাপকযন্ত্র পাওয়া যায়নি। তাছাড়া জনগনের অভিযোগ থাকার পরেও সমাধান না করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে কেন? এ বিষয়ে ট্যাক অফিসার সেখানে কি দায়িত্ব পালন করছেন ? এ বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী জানান, চাল গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যানকে ডিও দেওয়া হয়েছে। তিনি চাল বুঝে নিবেন এবং তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের সঠিক ভাবে বুঝে দিবেন এতে অজুহাত চলে না।

গাংনী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মতিয়ার রহমান জানান, চাল গুদাম থেকে ছাড় দেয়ার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি বুঝে নিয়েছেন। ৯ দিন পরে চাল কম দেয়া হয়েছে মর্মে অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। তিনি আরো জানান, আরো কয়েকটি ইউপিতে চাল ছাড় দেয়া হয়েছে সেখানে কোন অভিযোগ আসেনি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, তিনি কোন লিখিত অভিযোগ পান নি। তবে বিষয়টি শুনেছেন। স্থানীয়দের বেশ কয়েকজন মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন তবে বিষয়টি ছোট খাটো হবে ভেবে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে বিষয়টি অনেকদুর গড়িয়েছে।