গাইবান্ধা জেলায় সাধারণ মানুষ দাদন ব্যবসায়ীদের বেড়াজালে বন্দী হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।দাদন ব্যবসায়ীদের কব্জা থেকে বের হতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। ফলে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
প্রাপ্ততথ্যে জানা যায়, ৭ টি উপজেলা উপজেলা ও পৌর শহরের প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের কিছু ‘টাউট শ্রেণির’ লোক অবৈধভাবে পুঁজি গড়ে তুলে দাদন ব্যবসা শুরু করেছে।এসব ব্যবসায়ীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ঘড় বাড়ী গ্রাম এমনি দেশ ছেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শতশত মানুষ।অনেকে পাওনা দারের চাপে সম্মান বাচাতে আতœহত্যা পথ পর্যন্ত বেছে নিয়ে।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধান ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানাযায় ঢোলভাংগা কলেজের আয়া গোলেজা বেগম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাক্তিকে ১ লক্ষ টাকা সুদের উপর প্রদান করে গ্রহীতা এ পর্যন্ত তাকে তাকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে প্রদান করেন।এরপর ও গোলেজার দাবি তিনি সুদে আসলে ওই ব্যাক্তির নিকট ৪ লক্ষ টাকা পাবেন।এই কাজে তাকে সহায়তা করে তার মেয়ে ফরিদা।ভুক্তভোগী পরিবার জানান টাকা না দিলে গুন্ডা মাস্তান দিয়ে হলে ও টাকা আদায় করবে।
এ নিয়ে প্রতিনিয়ই চলছে দ্বন্দ কলহ। বাধ্য হতে টাকা গ্রহীতা একাধিক বার আতœহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।শুধু মাত্র পারিবারিক নজরদারীর কারনে আতœহত্যা করতে পারেনি বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানাযায়।
কলেজের একজন আয়া হয়ে দিব্যি সুদের ব্যাবসা চালিয়ে গেলে ও প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করছে না।
সম্প্রতি সুদের টাকার জন্য সাদুল্লাপুরে এক ইমাম আতœহত্যা করে।ময়না তদন্ত রিপোর্টে আতœহত্যা হলে ও পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।যদি ও মামলাটি পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো পিবিআই তদন্ত করছে।
গত বছর সুদের টাকা দিতে না পারায় লজ্জায় ক্ষোভে আতœহত্যা করেন গাইবান্ধা সদরের জনৈক্য এক স্বর্নের কারিগর।
গত বৃহস্পতিবার সুদের টাকা দিতে না পারায় লজ্জায় ক্ষোভে আতœহত্যা করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের সভ্রান্ত পরিবারের সন্তান মুসলিম উদ্দিন। আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৮ লক্ষ টাকার জমি দিতে হয়েছে তাকে।বাবু নামে জনৈক্য ব্যাক্তি তার নিকট সুদের টাকা পাওনা থাকায় টাকা পরিশোধের জন্য নিহত মুসলিমের উপর কঠোর চাপ প্রয়োগ করে।টাকা পরিশোধের কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি আতœহত্যার পথ বেছে নেয়।
তথ্যানুসন্ধানে দেখাযায়, পলাশবাড়ী উপজেলার কালীবাড়ী বাজারে বেশ কয়েকজন সক্রিয় দাদন ব্যাবসায়ী এই ব্যবসা পরিচালনা করছে।এরমধ্যে শফিকুল, শিবু ও আজহারুল উল্লেখযোগ্য।অনেকে আবার ধান চালের ব্যবসার পাশাপাশি এই ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েক জন জানান।
এছাড়াও রংপুর বাস ষ্ট্যান্ড এলাকার মনজু তালুকদার, হোসেনপুর ইউপির মেরীর হাটের কালাম,লক্ষিপুর গ্রামের মোজাহার, সাতআনা নওদা গ্রামের আকবর, কালুগাড়ী গ্রামের তোজা,একই গ্রামের আতোয়ার,মহদীপুর ইউপির বোর্ডের ঘড় এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ছামছুল,বুজরুক বিষœপুর গ্রামের সুজন কালীবাড়ী বাজার স্বর্নকার পট্রির উজ্জল পবনাপুর ইউপির পারবামুনিয়া গ্রামের মৃত জায়দালের ছেলে জিয়ারুল বালাবামুনিয়া গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে মিঠু মিয়া, মৃত হোসেন মিয়ার ছেলে লেবু মিয়াসহ শতাধিক দাদন ব্যাবসায়ী সক্রিয় ভাবে দাদন ব্যাবসা অব্যাহত রেখেছে।এসব দাদন ব্যবসায়ী প্রতি এক হাজার টাকার মাসিক ৩০০ টাকা হারে এরা সুদ গ্রহণ করে।অনেকে আবার চক্রবৃদ্ধি ভাবে সুদের টাকা উত্তোলন করে থাকেন।গ্রহীতা সময় মত টাকা দিতে না পারায় অনেকের উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। অনেকে এনজিও ও সমিতি থেকে স্বল্প পরিমাণ সুদে ঋণ নিয়ে গ্রামের অসহায় মানুষদের কাছে সেটা বেশি লাভে দাদন দিচ্ছে।
এক হাজার টাকা নিলে প্রতিমাসে দাদন ব্যবসায়ীকে ৩শ’ টাকা সুদ দিতে হয়। আবার কেউবা জমি, মেশিন, বসতবাড়ি, বাড়ির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বন্ধক রেখে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করছে।দাদন ব্যবসায়ীদের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের বাড়িতে বিরাট গুদাম ঘড় রয়েছে। তাদের এসব ঘরে অসহায় মানুষদের বন্ধকীর জিনিসপত্র রেখে দিয়েছে। এক সময় দাদনের টাকা সুদে আসলে কয়েকগুণ হলে তারা নির্দিষ্ট সময়ে সুদসহ টাকা ফেরত দিতে না পারার অজুহাতে সেসব জিনিস তারা তাদের কাছে রেখে দেয়।অনেকে তাদের মুল্যবান স্বর্নালংকার জুয়েলারি মালিকের নিকট রেখে বন্ধক রেখে সুদের টাকা গ্রহণ করছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুদসহ টাকা ফেরত না দিলে মুল্যবান স্বর্ন অলংকার জুয়েলারি মালিকরা আর ফেরত প্রদান করেন না।
এদের পিছনে কাজ করে সাংগঠনিক একটি অপশক্তি যার কাজ হলো সুদের টাকা আদান প্রদানের দেন দরবার করা।শুধু তাই নয় বেশ কয়েক জন সাংবাদিকসহ সমাজে ভদ্র বেশে কিছু মানুষ রয়েছে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চেক বন্ধক নিয়ে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।অনেকে অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী পেনসন বহি বন্ধক রেখে সুদের টাকা গ্রহণ করায় মাস শেষে পেনশনের টাকা হাত দিয়ে ধরতে পারে না।শুধু শহরে নয় বিভিন্ন মহল্লা থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পরেছেন নিরীহ মানুষগুলো।
আইন সম্মত বা বৈধ না হওয়া সত্বেও এই ব্যবসার সাথে জড়িতদেরও নানা কুট কৌশলের কারণে সমাজের এদেও বিরুদ্ধে ‘টু’ শব্দটি পর্যন্ত করা হচ্ছে না। কিন্তু দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এলাকার কতিপয় লোকের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুদের ব্যবসা এই এলাকায় ভয়াবহ বিষের ন্যায় ছড়িয়ে পরেছে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যদি সুদ ব্যবসায়ীদের ব্যবস্থা না নয় তাহলে ভবিষ্যতে এই অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে।
এতে করে সাধারণ মানুষ তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। দাদন ব্যবসায়ীরা টাকা দেওয়ার সময় জমির দলিল, ব্যাংকের ফাঁকা চেক ও সাদা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়। যখন কেউ টাকা ফেরত দিতে পারেনা তখন ঐ চেক ষ্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত টাকা বসিয়ে পাওনাদারের নিকট দাবি করে। এমনকি প্রশাসনিক সাহায্য নিয়ে ও তারা ঐ টাকা আদায় করে।অনেক দাদন ব্যবসায়ীরা অন্য ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে রাতা রাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার আশায় এই দাদন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন।
তাদের বেড়া জালে বন্দী হয়ে অনেক সহজ সরল সাধারণ মানুষ জমি, ঘড়-বাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।অনেক এলাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে মানুষ ঘড়-বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে তাদের অত্যাচারে বাড়ি ফিরতে পারছেনা।কিছু বলতে পারে না।ফলে সুদের বোঝা টানতে না পেরে নিরবেই কাদছে অনেকে।এ রকম দাদন ব্যবসায়ী শহরের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে।
এসব দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার এবং গ্রামের সাধারণ মানুষদের সচেতন করে তুলে তাদের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা দরকার বলে মনে করেন সুধী সমাজ।