ঢাকা ০৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

তানোরে আলুর জমির ধান কাটা মাড়াই নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি উজান থেকে নেমে আসা পানির কারনে রাজশাহীর তানোরে আলুর জমির ধান কাটা মাড়াই নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শুধু কৃষকরাই না পানিতে ভিজে যাওয়া ধান কাটতে ও মাড়াই করতে শ্রমিকরাও পড়েছেন বেকায়দায়। আবার ভিজে ধান কাটতে কদর বেড়েছে শ্রমিকের। ফলে বাধ্য হয়ে অধিক মুল্যে ধান কেটে নিতে হচ্ছে বলে একাধিক চাষির সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে উপজেলায় দুই ধরনের বোরো ধান চাষ হয়। অবশ্য আগাম জাতের ধান ইতিপূর্বেই কৃষকরা ঘরে তুলেছেন। আর আগাম বোরো চাষ বেশি হয় বিল কুমারী বিলে। শুকনো অবস্থায় চাষিরা ওই ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন এবং ফলনও হয়েছে বাম্পার দাম ছিল চাহিদামত। যে সময় বিলের ধান কাটা পড়ে ওই সময়ে বা তাঁর আগে চলে আলু উত্তোলনের কাজ। আলু উত্তলন করেই রোপণ করা হয় ধান। অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ধান কাটা যায়।

তানোর পৌর এলাকার কৃষক জাইদুর জানান দু বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। কিন্তু ধান কাটার সময়ও বৃষ্টির পানি এবং মাড়াই করার সময়ও পানি, এর মধ্যেই কাটা মাড়াই শেষ করেছি। কিন্তু পুরো ধান ভিজে । সেই ভিজে ধানও শুকানো যাচ্ছেনা। আরেক কৃষক হান্নান জানান ধান কাটার সময় পানি হয়েছিল না। কিন্তু মাড়াই করার সময় প্রচুর তাকে বৃষ্টির পানি শুরু হয়। বাধ্য হয়ে মাড়াই বন্ধ রাখতে হয়। বৃষ্টির পানি বন্ধ হলে পুনরায় মাড়াই শুরু হয়। এভাবে কয়েকবার থেমে থেমে মাড়াই শেষ করা হয়। সব ধান ভিজে যায়। রোদ না হবার কারনে ধান শুকানো যাচ্ছেনা। আবহাওয়া যদি এমন চলতে থাকে তাহলে হয়তো ধানে গাছও উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।

উপজেলার পাচন্দর ইউপির কৃষক রফিকুলের ৩০ বিঘ,হাবিবুরের ৪০ বিঘা, বেলালের ১০ বিঘা, সুমনের ২০ বিঘা, রবিউলের ৪০বিঘা, আনোয়ারের ৩০ বিঘা, লুৎফরের ৩০ বিঘা। এরা জানান বৃষ্টির পানি এবং উজান থেকে পানি নেমে আসার কারনে জমির ধান কাটতে সময় লাগছে। বৈরি আবহাওয়া ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই ধান কাটা মাড়াই করা হচ্ছে। ভুত নামের মেশিনে ভিজে ধান মাড়াই করতে হয়। এজন্য খড় পাওয়া যায়না।

আর মাড়াই শেষে ধান শুকানো যাচ্ছেনা। কারন বৈরি আবহাওয়া অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য ধান শুকানোর কাজ বেশি করে থাকেন বাড়ির গৃহিণীরা। বাড়ির প্রতিটি জায়গায় ধান শুকানোর জন্য মেলে রাখা হয়েছে।

উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপির গোলাম রাব্বানী ১৫০ বিঘা জমিতে রোপণ করেছেন ধান । তিনি জানান অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়নি । আবহাওয়া ভালো থাকলে পুরো জমির ধান কাটা মাড়াই হয়ে যত। এত জমির ধান রাখারমত জায়গাও নেই। আর ভিজে ধান বিক্রিও করা যায়না। পৌর এলাকার জসিম ৬০, তালন্দ এলাকার রানা ও তাঁর ভাই মিলে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করে কাটা মাড়ায়ে একই অবস্থা।

গৃহিণী লাভলি, পলি, মেরিসহ অনেকে জানান এখন যত জালা আমাদের। ধানের কাজ করতে গিয়ে না থাকছে খাওয়ার সময় না থাকছে গোসলসহ রান্না করার সময়। একবার ধান মেলে দিয়ে আসছি তো একটু পরে শুরু হচ্ছে বৃষ্টি। এজন্য আবার সেই মেলে দেয়া ধান মোটা আকারের পলেথিন দিয়ে ঢাকতে হচ্ছে। এভাবেই সারাটা দিন পার হয়ে যাচ্ছে। পুরোদমে রোদ না পাওয়া পর্যন্ত ধান শুকানো সম্ভব না। এভাবে আর কয়েকদিন চলতে থাকলে ধানে ট্যাক বা গাছ বের হয়ে যাবে। তখন ধানের ভাত বেশিক্ষুন থাকবেওনা এবং স্বাদও পাওয়া যাবেনা।

বরাবরের মতই ধান কাটা মাড়ায়ের ভরসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা। চাপাই থেকে তানোর পৌর এলাকার গুবিরপাড়াগ্রামের হান্নানের উঠানে এসেছেন ১২জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে আছে একজন সরদার। তাঁর নাম লিয়াকত। দীর্ঘ আট দশ বছর ধরে লিয়াকতের নেতৃত্বে হান্নানের বাড়িতে আসে ধান কাটার জন্য। তিনি জানান এখানে আশার পর মাত্র ১৪ বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৩০/৩৫ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই করা যেত। তাঁরা এবার একমন ধানে দশ কেজি করে নিয়ে ধান কাটছেন।

উপজেলার তানোর টু মুণ্ডুমালা রাস্তায়, তানোর টু চৌবাড়িয়াসহ গ্রামীণ পাকা রাস্তার ধারেই ভুত মেশিনে মাড়াই করা হচ্ছে ধান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ইতিপূর্বেই আগাম জাতের শুকনো ধান কৃষকেরা ঘরে তুলেছেন ফলনও হয়েছে বাম্পার আবার দাম চাহিদামত। আলুর জমির ধান কাটার মৌসুমটাতে বৃষ্টি হয়।

বৃষ্টির কারনে কৃষকদের সমস্যাও হয়। কারন তাঁরা ভিজে ধান পাই এবং খড় পাইনা। আবার এসময় বৃষ্টি না হলে রোপা আমনের বীজতলা ক্ষতি এবং উঁচু এলাকার জমি চাষ হবেনা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর কারো হাত নেই। তারপরও আলুর জমিতেও ফলন ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

তানোরে আলুর জমির ধান কাটা মাড়াই নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

আপডেট সময় : ০৯:৫৫:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি উজান থেকে নেমে আসা পানির কারনে রাজশাহীর তানোরে আলুর জমির ধান কাটা মাড়াই নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শুধু কৃষকরাই না পানিতে ভিজে যাওয়া ধান কাটতে ও মাড়াই করতে শ্রমিকরাও পড়েছেন বেকায়দায়। আবার ভিজে ধান কাটতে কদর বেড়েছে শ্রমিকের। ফলে বাধ্য হয়ে অধিক মুল্যে ধান কেটে নিতে হচ্ছে বলে একাধিক চাষির সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে উপজেলায় দুই ধরনের বোরো ধান চাষ হয়। অবশ্য আগাম জাতের ধান ইতিপূর্বেই কৃষকরা ঘরে তুলেছেন। আর আগাম বোরো চাষ বেশি হয় বিল কুমারী বিলে। শুকনো অবস্থায় চাষিরা ওই ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন এবং ফলনও হয়েছে বাম্পার দাম ছিল চাহিদামত। যে সময় বিলের ধান কাটা পড়ে ওই সময়ে বা তাঁর আগে চলে আলু উত্তোলনের কাজ। আলু উত্তলন করেই রোপণ করা হয় ধান। অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ধান কাটা যায়।

তানোর পৌর এলাকার কৃষক জাইদুর জানান দু বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। কিন্তু ধান কাটার সময়ও বৃষ্টির পানি এবং মাড়াই করার সময়ও পানি, এর মধ্যেই কাটা মাড়াই শেষ করেছি। কিন্তু পুরো ধান ভিজে । সেই ভিজে ধানও শুকানো যাচ্ছেনা। আরেক কৃষক হান্নান জানান ধান কাটার সময় পানি হয়েছিল না। কিন্তু মাড়াই করার সময় প্রচুর তাকে বৃষ্টির পানি শুরু হয়। বাধ্য হয়ে মাড়াই বন্ধ রাখতে হয়। বৃষ্টির পানি বন্ধ হলে পুনরায় মাড়াই শুরু হয়। এভাবে কয়েকবার থেমে থেমে মাড়াই শেষ করা হয়। সব ধান ভিজে যায়। রোদ না হবার কারনে ধান শুকানো যাচ্ছেনা। আবহাওয়া যদি এমন চলতে থাকে তাহলে হয়তো ধানে গাছও উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।

উপজেলার পাচন্দর ইউপির কৃষক রফিকুলের ৩০ বিঘ,হাবিবুরের ৪০ বিঘা, বেলালের ১০ বিঘা, সুমনের ২০ বিঘা, রবিউলের ৪০বিঘা, আনোয়ারের ৩০ বিঘা, লুৎফরের ৩০ বিঘা। এরা জানান বৃষ্টির পানি এবং উজান থেকে পানি নেমে আসার কারনে জমির ধান কাটতে সময় লাগছে। বৈরি আবহাওয়া ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই ধান কাটা মাড়াই করা হচ্ছে। ভুত নামের মেশিনে ভিজে ধান মাড়াই করতে হয়। এজন্য খড় পাওয়া যায়না।

আর মাড়াই শেষে ধান শুকানো যাচ্ছেনা। কারন বৈরি আবহাওয়া অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য ধান শুকানোর কাজ বেশি করে থাকেন বাড়ির গৃহিণীরা। বাড়ির প্রতিটি জায়গায় ধান শুকানোর জন্য মেলে রাখা হয়েছে।

উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপির গোলাম রাব্বানী ১৫০ বিঘা জমিতে রোপণ করেছেন ধান । তিনি জানান অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়নি । আবহাওয়া ভালো থাকলে পুরো জমির ধান কাটা মাড়াই হয়ে যত। এত জমির ধান রাখারমত জায়গাও নেই। আর ভিজে ধান বিক্রিও করা যায়না। পৌর এলাকার জসিম ৬০, তালন্দ এলাকার রানা ও তাঁর ভাই মিলে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করে কাটা মাড়ায়ে একই অবস্থা।

গৃহিণী লাভলি, পলি, মেরিসহ অনেকে জানান এখন যত জালা আমাদের। ধানের কাজ করতে গিয়ে না থাকছে খাওয়ার সময় না থাকছে গোসলসহ রান্না করার সময়। একবার ধান মেলে দিয়ে আসছি তো একটু পরে শুরু হচ্ছে বৃষ্টি। এজন্য আবার সেই মেলে দেয়া ধান মোটা আকারের পলেথিন দিয়ে ঢাকতে হচ্ছে। এভাবেই সারাটা দিন পার হয়ে যাচ্ছে। পুরোদমে রোদ না পাওয়া পর্যন্ত ধান শুকানো সম্ভব না। এভাবে আর কয়েকদিন চলতে থাকলে ধানে ট্যাক বা গাছ বের হয়ে যাবে। তখন ধানের ভাত বেশিক্ষুন থাকবেওনা এবং স্বাদও পাওয়া যাবেনা।

বরাবরের মতই ধান কাটা মাড়ায়ের ভরসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা। চাপাই থেকে তানোর পৌর এলাকার গুবিরপাড়াগ্রামের হান্নানের উঠানে এসেছেন ১২জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে আছে একজন সরদার। তাঁর নাম লিয়াকত। দীর্ঘ আট দশ বছর ধরে লিয়াকতের নেতৃত্বে হান্নানের বাড়িতে আসে ধান কাটার জন্য। তিনি জানান এখানে আশার পর মাত্র ১৪ বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৩০/৩৫ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই করা যেত। তাঁরা এবার একমন ধানে দশ কেজি করে নিয়ে ধান কাটছেন।

উপজেলার তানোর টু মুণ্ডুমালা রাস্তায়, তানোর টু চৌবাড়িয়াসহ গ্রামীণ পাকা রাস্তার ধারেই ভুত মেশিনে মাড়াই করা হচ্ছে ধান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ইতিপূর্বেই আগাম জাতের শুকনো ধান কৃষকেরা ঘরে তুলেছেন ফলনও হয়েছে বাম্পার আবার দাম চাহিদামত। আলুর জমির ধান কাটার মৌসুমটাতে বৃষ্টি হয়।

বৃষ্টির কারনে কৃষকদের সমস্যাও হয়। কারন তাঁরা ভিজে ধান পাই এবং খড় পাইনা। আবার এসময় বৃষ্টি না হলে রোপা আমনের বীজতলা ক্ষতি এবং উঁচু এলাকার জমি চাষ হবেনা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর কারো হাত নেই। তারপরও আলুর জমিতেও ফলন ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।