প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরো প্রকাশ্যে চলাফেরা ও ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক আয়া ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। তারা তানোর পৌর সদরের গোল্লাপাড়া বাজারস্থ হলদারপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। তাদের এভাবে চলাফেরার জন্য পৌর সদর গোল্লাপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে জনসাধারণের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা আক্রান্ত ওই মা-ছেলেকে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের সেই নির্দেশ অমান্য করে করোনা আক্রান্ত ওই মা-ছেলে বাহিরে ঘোরাফেরা করায় এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রতিবেশি গ্রামবাসীসহ সকলের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সচেতন লোকজন তাদেরকে বাইরে বের হতে নিষেধ করলে তাঁরাই উল্টো তাদের ওপর চড়াও পর্যন্ত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে, ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রোজিয়ারা খাতুন জানান, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া শিউলির (৪১) করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার পর গত ২৮ জুন তাঁর দেহে করোনা পজিটিভ আসে এবং তার ছেলে মিঠনের (২৩) দুইদিন পরে করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষার রির্পোট পজেটিভ আসে। এরপর তাদেরকে তানোর পৌর সদরের গোল্লাপাড়া হাট সংলগ্ন নিজ বাসায় আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়। পাশাপাশি ওই রাতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়।
কিন্তু স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, শিউলী ও তার ছেলে মিঠন লকডাউনের নির্দেশ না মেনে গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা গোল্লপাড়া হাট ও তানোর বাজারের বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটাসহ আর্থিক লেনদেনও করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কুমার, প্রতাপ, আশরাফুল ইসলামসহ অনেকে এই প্রতিবেদককে জানান, করোনা আক্তান্ত হওয়ায় শিউলী ও তার ছেলে মিঠনকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে নিষেধ করলে তারা তাদের ওপর উল্টো ক্ষিপ্ত হচ্ছেন। শিউলী ও তার ছেলে মিঠন তাদের বলেন তারা এখন করোনা আক্রান্ত নন।
এলাকাবাসী আরও জানান, করোনা আক্রান্ত মিঠন গত ১০ জুলাই স্থানীয় গোল্লাপাড়া হাটে মাছ বিক্রিও করেছেন। আর তার মা শিউলীও প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এসব কারণে ওই এলাকার মানুষ এখন চরম আতঙ্কে রয়েছে। তারা বলছে, শিউলি ও তার ছেলে মিঠন ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। তাই করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও তারা মা-ছেলে দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখন তাদের সংর্স্পশে আসা অন্যরাও যদি করোনা আক্রান্ত হয় তাহলে এর দায় শিউলি ও তার ছেলে মিঠনকেই নিতে হবে।
১১ জুলাই শনিবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রোজিয়ারা খাতুন এই প্রতিবেদককে আরও জানান, তার হাসপাতালের আয়া শিউলি ও তার ছেলে মিঠন এখনো করোনা পজেটিভ। তবে লকডাউনের নির্দেশনা না মেনে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে তাদের মা-ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা অস্বীকার করেছে। তবে তারা যদি এলাকায় ঘুরে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানোর উপজেলার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত¡) ইউএনও মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, কোভিডে আক্রান্ত হাসপাতালের আয়া শিউলি ও তার ছেলে মিঠনের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এখন তারা যদি লক ডাউনের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।