চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো। যোগদানের পর থেকে উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে পড়ে প্রচণ্ড শীত। শীতের মধ্যে গাড়িতে করে কম্বল নিয়ে অসহায় দরিদ্র আদিবাসীদের মাঝে দিনে রাতে কম্বল শীত বস্ত্র বিতরণ করে সবার নজরে আসেন তিনি।
শুধু তাই না উপজেলার কৃষি জমিতে পুকুর খননের দায়ে জেল জরিমানা করে শতশত একর কৃষি জমি রক্ষা করেছেন। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক বেগ পেলেও কোন প্রকার ছাড় দেননি তিনি। এরপর দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দিন রাত ছুটে সাধারন মানুষকে সচেতন করতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেন ইউএনও। করোনার কারনে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে মহামারী করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য সারা দেশ লকডাউনের মধ্যে পড়ে। যা চলে টানা পহেলা জুন পর্যন্ত।
এর পর লকডাউন তুলে নেয়া হয়। লকডাউনের সময় বরেন্দ্র কৃষি নির্ভর এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলাটি। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলার জনসাধারণকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করতে মাঠে ময়দানে বাজার ঘাটে মোড়ে মোড়ে ভয়ভীতি অপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো রাতদিন পরিশ্রম করে মানুষের হৃদয় ছুয়েছেন বলে একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে। শুধু সচেতন না উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের দ্বারেদ্বারে গিয়ে সরকারের দেয়া বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী ও ত্রান পৌছে দিয়ে জনসাধারণ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন ।
ঝড় বৃষ্টি বাদল কোন কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেননি ইউএনও কে। তাই তো উপজেলার সর্বসাধারনের হৃদয়ে একটিই নাম ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো। লকডাউনের সময় যখন অনেক কর্মকর্তা প্রাণঘাতী করোনার আক্রান্তের ভয়ে ঘর থেকে বের হননি । কিন্তু ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো সব কিছু পিছনে ফেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করেই চলেছেন।
জানা গেছে, লকডাউনের সময় বিভিন্ন হাট বাজারে আসা সবজি বিক্রেতাদের সামাজিক দুরুত্ব বজায় এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে ব্যবসা করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর মধ্যে ছিল গোল্লাপাড়া ফুটবল মাঠে সামাজিক দুরুত্বের গোল চিহ্ন তৈরি করে দেন এবং সকালে হাট বসানোর নির্দেশনা দেন। এছাড়াও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মুণ্ডুমালা হাটের কৃষি মার্কেটের সামনে রাস্তার উত্তরে নানা ধরনের ফুতপাতের দোকান ছিল, সেখানে লকডাউনের মধ্যে কোন ভাবেই জনসমাগম কমছিল না। ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের অনুরোধে ফুতপাত মুক্ত করে জনসমাগম কমিয়ে এবং হাটের দিন কাচা বাজার বা সবজি বাজার মুণ্ডুমালা বাজারের পশ্চিমে ফজর আলী মোল্লা কলেজ মাঠে সামাজিক দুরুত্বের চিহ্ন তৈরি করে ব্যবসা করার নির্দেশনা দেন এবং পশু হাট বন্ধ করেন। ইউএনওর একাজে স্বস্তি ফেরে আসে মুণ্ডুমালা বাসির মধ্যে। শুধু তাই না লকডাউনের সময় পাড়া মহল্লায় ঘুরে লোকজনের আড্ডা বন্ধ করে দেন।
এমনকি ইউপি সদস্য চেয়ারম্যান, গ্রাম্য পুলিশ, চৌকিদারদের নির্দেশ দেন বহিরাগত কোন ব্যাক্তি আসলেই যেন অবহিত করা হয় । কারন উপজেলার অনেক জনসাধারণ রাজধানী ঢাকাসহ এর আশপাশে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের কাজে লিপ্ত ছিলেন। ওই সব এলাকা থেকে যারাই এসেছেন তাদের বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারেন্টনে থাকার নির্দেশ দিয়ে তাদের কে এবং যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদেরকে খাদ্য সামগ্রী পৌছানোসহ নিয়োমিত চিকিৎসার ব্যাপারে জোরালে ভাবে মনিটরিং করেন । যার ফলে ইউএনওর একান্ত প্রচেষ্টা এবং মহান সৃষ্টি কর্তার অশেষ মেহের বানীতে আক্রান্ত ১৭ জনের মধ্যে ১২ জনের গত ১৫জুন করোনা থেকে সুস্থ্য হয়েছেন এবং বাকিরাও সুস্থ্য হবেন বলে আসা প্রকাশ করেন ইউএনও।
বিশাল মানবতার পরিচয় দেন গত কয়েকদিন আগে উপজেলার কৃষ্ণপুর মোড়ে ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক মহিলা মাথায় পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে রাস্তার ধারে দিন ভর পড়ে থাকলেও কেউ নজর দেননি। কিন্তু ইউএনও জানতে পেরে রাত্রি আটটার দিকে নিজে সেখানে গিয়ে ওই অজ্ঞাত মহিলাকে ভ্যানে তুলে দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউনের সময় সচেতন করার পরও যে সব ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া ভাব দেখিয়ে আইন অমান্য করার কারনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৩১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন এবং ৪জন ব্যাক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল দেন।
একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বললে তাঁরা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো সম্পর্কে জানান তিনি এই উপজেলায় যোগদানের পর তাঁকে অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার ভুমির দায়িত্ব নিতে হয়। তিনি প্রথম দিকেই ভুমি অফিসে এসে জন সম্মুখে বলেন আপনারা ভুমি অফিসের কাজে কোন দালাল ধরবেন না। আপনারা সরকারী যে খরচ তাঁর অতিরিক্ত কোন টাকাও দিবেন না। কোন কর্মকর্তা টাকা চাইলে সরাসরি আমাকে অবহিত করবেন তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন কোন মানুষ সেবা নিতে এসে যেন হয়রানির স্বীকার না হয়।
ইউএনও তানোর রাজশাহী নামের ফেসবুক আইডিতে উপজেলা বাসির উদ্দেশ্যে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করতে খোলা চিঠি লিখে ফেসবুক ব্যবহার কারীদের নজর কাড়েন। সবচেয়ে বড় চমক ছিল গত ২১ শে জুন রোববার বিকেলের দিকে উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে বাংলাদেশের রাজনীতির পুরোধা জাতীয় চার নেতার অন্যতম প্রয়াত ক্যাপ্টেন এম মুনসুর রহমানের সুযোগ্য সন্তান প্রয়াত মোহাম্মাদ নাসিম, ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সফল মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান গনের আত্মার মাগফিরাত কামনায় পরিষদ চত্বরে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন।তার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আ”লীগের সভাপতি মুণ্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী, সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত।
ইউএনও তাঁর বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশের রাজনীতির পুরোধা ছিলেন প্রয়াত মোহাম্মাদ নাসিম। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করে জনগণের সেবা করে যাচ্ছি। করোনা মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ভয়ভীতি অপেক্ষা করে জনগণকে সচেতন করতে রাতদিন মাঠে ময়দানে কাজ করেছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পেয়েছি।এই মহান নেতা বেঁচে থাকলে ৯০ দশকের মধ্যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠত। কিন্তু ঘাতকেরা সেটা পুরুন করতে দেন নি। কিন্তু তাঁর সুযোগ্য সন্তান দেশরতœ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তখনই এক করোনা নামক অদৃশ্য ভাইরাস শুধু বাংলাদেশ না সারা বিশ্বকে থমকে দিয়েছেন। আমি আপনার সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই, আমার দপ্তর সবার জন্য উন্মুক্ত।