রাজশাহীর তানোরে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস যেন অনিয়ম দুর্নীতির আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর পিআইও অফিসের উমেদার খলিল যেনই পিআইও। যত ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির মাথা তিনি। দীর্ঘ প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে উমেদার হিসেবে কাজ করে হয়েছেন কাড়িকাড়ি টাকার মালিক।
বিভিন্ন ধরনের কাজ দেখভাল সহ অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেন উমেদার খলিল। আবার কাজ যেমন হোক দশ পারসেণ্ট পিচি দিলেই হয়ে যায় বিল। উমেদার খলিল দীর্ঘ দিন ধরে থাকার পর নিজের শ্যালককে অফিসে নিয়ে এসে তাকেও উমেদার হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। অবাক করার বিষয় উমেদার খলিল পিআইও অফিসের সরকারী বাইক নিজেরমত করে ব্যবহার করলেও কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না। এছাড়াও গত অর্থ বছরে উপজেলায় বেশ কয়েকটি কার্লভাট ও এইচ রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়।
এসব অনিয়মের মুলেই উমেদার খলিল বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে উপজেলার কামারগাঁ ইউপি এলাকার চৌবাড়িয়া মিশুক স্ট্যান্ড থেকে মালশিরা মন্দির পর্যন্ত হেয়ারিং বা এইচ বিবি রাস্তা ও তালন্দ ইউপির কালনাগ্রামে এবং চান্দুড়িয়া ইউপির গাগরন্দ মোড় থেকে গ্রামের ভিতর পর্যন্ত হয় কাজ। কয়েকমাস না যেতেই নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে রাস্তার কাজ করার কারনে অনেক জায়গা নষ্ট হয়ে পড়েছে, দেবে গেছে। এধরণের নিম্মমানের কাজ হলেও দশ পারসেন্ট পিচি বা কমিশন দিলেই বিলের কোন সমস্যা হয়না। ফলে উমেদার খলিলের বছরের পর বছর ধরে অনিয়ম করায় তাকে অফিস থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় হতে গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমুহ টেকসই করনের লক্ষ্যে হেরিং বন্ড (এইচবিবি) করন (২য় পর্যায়)প্রকল্প। অর্থ বছর ২০১৯-২০২০ , উপজেলার নাম তানোর জেলা রাজশাহী , প্যাকেজ নং ড৩৫০উউগঐইই-০২, প্রকল্পের বিবরণ মালশিরা মিশুক স্ট্যান্ড মোড় হতে মালশিরা মসজিদ পর্যন্ত রাস্তার এইচবিবি করন , প্রকল্পের অবস্থান কামারগাঁ ইউনিয়ন, রাস্তার দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার , কারযাদেশ নং ৫১.০১.২০০৮.০১৫.১৪.০০১.১৯-৪৩১(২), কারযাদেশ তারিখ ৮/১২/২০১৯, কারযাদেশ মুল্য ৩৯ লক্ষ ৪ হাজার ৫০০ টাকা, কাজ শুরুর তারিখ ৮/১২/২০১৯ , কাজ শেষ করার সম্ভব্য তারিখ ২১/১/২০২০, ঠিকাদার/ প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানাঃ প্রাপ্তি এন্টার প্রাইজ, দড়িখরবনা, রাজশাহী। কাজ করার সময় সাইন বোর্ডে এসব তথ্য দেয়া ছিল।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, একাজটি প্রাপ্তি এন্টার প্রাইজ পেলেও তাঁর নিকট থেকে ১৫/১৬ পারসেণ্ট অগ্রিম লাভ দিয়ে রাস্তার কাজটি উপজেলা পিআইও অফিসের কর্তা বাবু এবং উমেদার খলিলের মাধ্যমে কিনে নেয় চৌবাড়িয়া এলাকার হিরো ইট ভাটার মালিক টোকেন। কিন্তু কাজের সময় তাকে দেখা যায়নি। কাজটি সম্পূর্ণ ভাবে দেখভাল করেন তানোর পৌর এলাকার শিক্ষক বকুল হোসেন।
সবাই অবশ্য জানত তিনিই কাজটি করছেন কিন্তু পিআইও অফিসে বিল উত্তোলন থেকে শুরু করে নানা সময় পিআইওর দপ্তরে গোপন আলাপে দেখা যেত টোকেন কে। রাস্তাটি নির্মাণের সময় ব্যাপক অনিয়ম করার কারনে মাত্র তিন মাসে দেবে গেছে এবং রাস্তার ধাড় ঘেঁসে ড্রেনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। কাজ সঠিক ভাবে করে নেবার জন্য পিআইও অফিসে ইঞ্জিনিয়ার থাকলেও উমেদার খলিলকেই পাঠানো হত সাইড দেখভালের কাজে।
এছাড়াও একই অর্থ বছরে একই প্যাকেজে উপজেলার তালন্দ ইউপির কালনাগ্রামের লিচু বাগানের পাকা রাস্তা হতে দক্ষিনপাড়া পর্যন্ত ১০০ মিটার এইচবিবি বা হেরিং বন্ড রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও পাকা রাস্তা হতে কিছু দূর পর্যন্ত আগেই এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ করা ছিল। এপ্যাকেজে উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপির গাগরন্দ মোড় হতে গ্রাম পর্যন্ত ১০০ মিটার এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ২০০ মিটার রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয় ৫২ লাখ ৯ হাজার ৮০০ টাকা। কাজটি দরপত্রে পান ঘোড়ামারা রাজশাহীর মেসার্স রিদরো এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একাজটিও অগ্রিম ১৫/১৬ পারসেন্ট লাভ দিয়ে কিনে নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ভাবে নির্মাণ করেন তানোর পৌরসভার কারযসহ কারি মাহবুর।
স্থানীয়রা জানান আমরই জেনেছি কাজ গুলো কিনে নিয়ে করার কারনেই মাস তিনেক না যেতেই বসে পড়েছে। অনিয়ম হওয়াটা স্বাভাবিক কারন মুল ঠিকাদারের নিকট থেকে আগাম লাভ দিয়ে কিনে কাজ করলে অনিয়ম দুর্নীতি হবেই। তাদের দাবি মুল ঠিকাদার কাজ করলে এত অনিয়ম হতনা । আর কাজগুলো দেখতে আসতেন লাল রঙয়ের হাং মটরসাইকেল নিয়ে এক ব্যাক্তি। কাজ কিনে করছে আর এসবে সহযোগিতা করছেন পিআইও ও খলিল নামের উমেদার।তাদের আরো দাবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজে পুনরায় তদন্তে আসলে উঠে আসবে পিআইও অফিসের এসব কাজের ভয়াবহ অনিয়ম দুর্নীতি। তাঁরা স্থানীয় সাংসদেরও হস্তক্ষেম কামনা করেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, কাজগুলো যাতা ভাবে দ্রুত নির্মাণ করে বিল পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন কাজ কেনা ব্যাক্তিরা। নাম প্রকাশ না করে কাজ কেনা এক ব্যাক্তি জানান কাজ যে ভাবেই হোক সাইডে উমেদার খলিল গেলে তাকে কিছু মোটা অঙ্কের টাকা দাও এবং বিল উত্তোলনের সময় ১০ পারসেন্ট পিচি ছাড়াও নানা ভাবে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে বিল করে দেন পিআইও তারিকুল ইসলাম।
গত অর্থ বছরে বেশ কয়েকটি কার্লভাট ও আড়াদিঘি এবং মোহরগ্রামে রাস্তার কাজেও উঠে আসে অনিয়ম । আর কার্লভালগুলোর চার সাইডের মাটি সরে যাচ্চে। স্থানীয় ব্যাক্তিরা নিজ অর্থ খরচ করে পুনরায় মাটি দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করছেন। এক কথায় পিআইও অফিস মানেই অনিয়ম দুর্নীতির অতুর ঘর হিসেবেই চিহ্নিত করেছে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাক্তিরা। এমন অনিয়ম দুর্নীতির কারনে রাস্তা কার্লভালগুলো অপ্ল সময়ের বন্ধ নষ্ট হয়ে পড়ছে। যার ফলে সরকারের হাতে নেয়া গ্রামীণ রাস্তাগুলো টেকসইয়ের পরিবর্তে অল্প দিনেই নষ্ট হবার কারনে সরকারের উন্নয়ন গ্রাম হবে শহর ভেস্তে যাচ্ছে।
এসব বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও তারিকুলের ব্যাক্তিগত ০১৭১১-৯৬৫৯৯২ নম্বরে গত কয়েকদিন ধরে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননা এবং অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়না তাকে।