রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার চাপড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভরা বর্ষা মৌসুমে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে চার তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত প্রায় চার বছর আগে উদ্বোধন করা হলেও সারা বছর শেষে আষাঢ়ের টানা বৃষ্টির মধ্যে স্কুলের কক্ষ নির্মাণ ও ছাদ ঢালায়ের কাজে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। কারন এত বছর কাজ না করে ভরা বর্ষায় কাজ করায় এলাকা বাসির মধ্যেও দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং বৃষ্টির মধ্যে দেদারসে মিস্ত্রিরা তাদের নিয়মে চালিয়ে যাচ্ছেন কাজ। ছুটির দিন বা অফিসের দিন কোন কর্মকর্তা কিংবা ঠিকাদার কেউ থাকেনা কাজের সময় এমনও অভিযোগ রয়েছে।
গত ৯ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চার থেকে পাঁচজন মিস্ত্রি বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। কাজের সময় কেউ আসেনা বলে তারাই জানান। স্কুলটির এক তলার কাজ ২০১৭ সালে উদ্বোধন করা হয়। তারপর থেকে দীর্ঘ সময় রহস্যজনক কারনে নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকে। সম্প্রতি নির্মাণের কাজ শুরুর পর থেকেই হচ্ছে প্রতিদিন বৃষ্টি। যে সব মিস্ত্রিরা কাজ করছিলেন তারাই জানান ছাদ ঢালায়ের দিনে অফিসের কর্মকর্তা এসেছিল। তারপর থেকে অফিসের কর্মকর্তা বা ঠিকাদার কেউ আসেনি।
আমাদের কে যে ভাবে বলা হয়েছে সেই ভাবেই কাজ করছি। কাজের কোন শিডিউল আছে কিনা জানতে চাইলে তাঁরা জানান আমাদের কাজ করতে শিডিউল লাগেনা। আমরা এসব কাজ নিয়মিত করে থাকি। আর যে ভাবে ঠিকাদার বলেছে সে ভাবেই কাজ করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানির মধ্যেই তিন তলা ঢালায় দেয়া হয়েছে এবং চার তলা ঢালায়ের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন মিস্ত্রিরা। একেবারে নিচ তলার দেয়ালে সিঁড়ির দক্ষিনে উদ্বোধনী ফলক লিখা কাপড় দিয়ে ঢাকা রয়েছে।
সেখানে লিখা আছে চাপড়া উচ্চ বিদ্যালয়, চার তলা ভীত একাডেমিক ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী, তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ইং, বাস্তবায়নে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর( ৭০১৬ কর্ডের আওতায় নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ/ সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্প) নির্মাণেঃ শিক্ষা অধিদপ্তর ।
জানা গেছে, তানোর পৌর এলাকা চাপড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন নির্মাণকৃত এক তলা ভবন কয়েক বছর আগে নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। এর পর দীর্ঘ কয়েক বছর কাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের লকডাউন উঠে যাওয়া মাত্র জুনের শেষ দিক থেকে ২য়, ৩য় ও ৪থ্র তলার কাজ শুরু হয়। কাজটি করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর নয়াগলা এলাকার জহুরুল নামের ঠিকাদার। চার তলা ভিত বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণে বরাদ্দ করা হয় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর পর স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যখন থেকে কাজ শুরু হয় তারপর থেকে চলে টানা বৃষ্টি। ছাদ ঢালায়ের সময়ও হয় বৃষ্টি। আর করোনাভাইরাসের কারনে অফিসের লোকজন তেমন আসেন না। ঠিকাদার তাঁর নিজস্ব মিস্ত্রিদের দিয়ে ইচ্ছেমত কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। ছুটির দিনেও চলে কাজ। কারো কিছু বলার নেই দেখারও নেই। কারন করোনার দোহায়ে ব্যাপক অনিয়ম ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার জহুরুল। করোনার সুযোগে হচ্ছে অনিয়ম, কারন কাজের সময় অফিসের লোক থাকলে কাজ ভালো হত । কিন্তু করোনার ভয়ে কর্তা বাবুরাও আসছেনা।
আর এসব কাজের ভালো মন্দ কিছুই বুঝেনা শিক্ষকরা। যার ফলে কাজের মান ও টেকসই নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। স্থানীয়দের দাবি কাজ চলমান অবস্থায় অফিসের যেন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। তাহলে যদি হয় মান সম্পন্ন কাজ। বৃষ্টির পানির মধ্যে ঢালায়ের কাজ হলে সেটি বেশি দিন টেকসই হয়না। এত দীর্ঘ সময় পর ভরা বর্ষা মৌসুমে কেন এত টাকার উন্নয়ন মুলুক কাজ হচ্ছে। সরকার ভালো মানের কাজ করার জন্য এত টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে, আর কাজ হচ্ছে পানির মধ্যে। এতে করে সরকারেরও উন্নয়ন মুলুক কর্মকাণ্ডের সদ ইচ্ছে ভেস্তে ফেলছে কর্তা বাবুরা।
তবে চাপড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমানের কাছে মৌখিক ভাবে কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান কাজ ভালো মানের হচ্ছে। ঢালায়ের দিন ইঞ্জিনিয়ারেরা উপস্থিত ছিলেন।
ঠিকাদার জহুরুলের ব্যাক্তিগত মোবাইলে ফোন দিয়ে জানতে চাওয়া হয় বৃষ্টির পানির মধ্যে ঢালায় ও নির্মাণের কাজ কিভাবে তিনি জানান ঢালায়ের দিনে কর্মকর্তারা ছিলেন তাঁরা ভালো বুঝেন বলেই ঢালায়সহ নির্মাণের কাজ চলছে এবং প্রধান শিক্ষক সাব জানিয়ে দিয়েছেন কাজের জায়গায় কেউ আসবেনা বলেও দম্ভক্তি প্রকাশ করেন। ২০১৭ সালের দিকে কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে এত দিন পর পুনরায় ভরা বর্ষা মৌসুমে কাজ করা যায় কিনা প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি জানান বর্ষার মধ্যে সব ধরনের কাজ করা যায় এত দিন পর কাজ কেন শুরু করলাম এবিষয়ে পারলে অফিস থেকে জেনে নেন।
রাজশাহীর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান এত দিন কাজ কেন পড়েছিল সে বিষয়ে আপনি উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন যদিও তিনি এখন নাটোরে বদলি হয়েছেন। তবে ওই সময় নির্বাচনের আগ মুহূর্তের সময় ছিল এজন্য উদ্বোধন হতে পারে। তবে বৃষ্টির সময় ছাদ ঢালায় দেয়া যাবেনা। ঢালায়ের পর বৃষ্টি হলে সমস্যা নেই।
সদ্য বদলি হওয়া রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তানোর রাজশাহীর উপসহকারী প্রকৌশলী বর্তমানে নাটোর জেলায় কর্মরত গোলাম মোস্তফার ০১৭২৩-২১৯৬৮৮ এই মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়া হলে রিসিভ করলে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান আমার মোবাইলে একটি জরুরী কল এসেছে আপনি লাইন কেটে দেন, পরে আমি কল দিচ্ছি।
রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তানোরে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া ভরা বর্ষা মৌসুমি নির্মাণ ছাদ ঢালায়ের কাজ করা যায় কিনা তিনি জানান এখনতো কোন কাজ থেমে নেই সব ধরনের উন্নয়ন মুলুক কাজ চলছে। পানির দিন ঢালায় দেয়া হয়না। ২০১৭ সালে প্রথম তলা নির্মাণের উদ্বোধন করা হয়েছে, উদ্বোধনের প্রায় এত দিন পর সম্প্রতি কাজ শুরু করা হয়েছে এটার রহস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান ধরেন প্রথমে আমরা এক তলা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে, দেখা যাচ্ছে পরে চার তলার বরাদ্দ এসছে এজন্যই মুলুত নির্মাণ কাজে বিলম্ব দেখা দেয় বলে জানান তিনি।