ঢাকা ০৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

তানোরে ব্র্যাকের আলু বীজ কেলেল্কারী ডিলার মুর্তুজাকে আটকের দাবি

রাজশাহীর তানোরে ব্র্যাকের আলুবীজ কিনে কৃষকেরা প্রতারিত হয়েছে। এদিকে ব্র্যাকের মতো স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের আলুবীজ কেলেঙ্কারির খবর ছড়িয়ে পড়লে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে।অন্যদিকে অভিযুক্ত বীজ

ডিলার মোহনপুর উপজেলার ধূরইল বাজারের মুর্তুজা ও নামধারী বালাইনাশক ব্যবসায়ী মোহরগ্রামের দুলালকে আটক ও ক্ষতিপুরুণের দাবিতে কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। গত ২ জানুয়ারী  রোববার মোহর গ্রামের  ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও  এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মোর্তুজা। কিন্তু অধিক মুনাফার আশায় গোপণে দীর্ঘদিন ধরে  তিনি নীতিমালা লঙ্ঘন ও চোরাপথে তানোর-গোদাগাড়ী, মান্দা এবং পবা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় আলুবীজ ও রাসায়নিক বিক্রি করে আসছেন। এসব বীজ সার বিক্রিতে কোনো রশিদ দেয়া হয় না।

জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের আলুবীজ ডিলার মোর্তুজা ব্র্যাকের উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ বলে তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) মোহর গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী মেসার্স সোহান ট্রেডার্সের কাছে বিক্রি করেছেন। এদিকে মোহর, লসিরামপুর ও শুকদেবপুর গ্রামের কৃষকেরা সোহান ট্রেডার্স থেকে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে ব্র্যাকের আলু বীজ (বি-গ্রেড) কিনে রোপণ করেন। কিন্তু  ভেজাল ও নিম্নমাণের বীজের কারণে গাছ গজায়নি। এতে কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত প্রতি বিঘা আলু চাষে কৃষকের প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।মেসার্স সোহান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী দুলাল মন্ডল বলেন, তিনি ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মোর্তুজার দোকান থেকে কিনেছেন। তিনি বলেন, এর দায় মোর্তুজার।কারণ তিনি ব্র্যাকের প্যাকেট রিপ্যাক করে নিম্নমানের বীজ দেয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। মোহর গ্রামের কৃষক আকতার হোসেন (৪৫) বলেন, তিনি দুলালের দোকান থেকে ৩৬ হাজার টাকার ব্র্যাকের বি-গ্রেড আলু বীজ কিনে রোপণ করেছেন। কিন্ত্ত ভেজাল বীজের কারণে গাছ গজায়নি। এতে দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষক আনারুল ও জব্বার বলেন, তারাও দুলালের দোকান থেকে আলু বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছে। তারা বলেন, দুলালের দোকানের আলু বীজ কিনে তাদের মতো আরো অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,গত ৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের কথা বলে তানোর পৌর এলাকার কাশেমবাজারে ডেকে নেয়া হয়। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র আরব আলীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ী মোর্তুজা ও দুলাল কৃষকের কাছে থেকে কৌশলে ননজুডিশিয়াল 

স্ট্যাম্পে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে আপোষনামা লিখে নিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে করা অভিযোগ একজন কাউন্সিলর কিভাবে আপোষরফা করতে পারেন ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, দ্রুত ক্ষতিপূরুন না পেলে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি দিবেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স সোহান ট্রেড্রার্সের স্বত্ত্বাধিকারী দুলাল বলেন, তিনি ব্র্যাকের রি-ট্রেলার। তিনি মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মুর্তজার  দোকান থেকে এসব বীজ কিনে এনে বিক্রি করছেন, তায় এর দায় মুর্তজার। তিনি বলেন, মঙ্গলবার কাশিমবাজারে বসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে। আপনি কোন রিটেলার না বীজ কিভাবে বিক্রি করেন জানতে চাইলে পরে কথা বলছি বলে আর ফোন ধরেন নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মুর্তজা বলেন, তার কাছে থেকে বীজ কিনে দুলাল তার ঘরে রাসায়নিক সারের সঙ্গে আলু বীজ রাখায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি মোহনপুর উপজেলার ডিলার হয়ে তানোর উপজেলায় বিক্রি করেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদোত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।

প্যানেল মেয়র আরব আলী জানান, কৃষকদের সাথে বসে মিমাংসা করা হয়েছে। কিভাবে মিমাংসা করলেন জানতে তিনি জানান, যেভাবে হোক হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আপোষ মিমাংসা হয়েছে। তবে সোহান ট্রেডার্স কিভাবে বীজ বিক্রি করেছে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর এবং বীজের প্রয়োজন ২০ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

তানোরে ব্র্যাকের আলু বীজ কেলেল্কারী ডিলার মুর্তুজাকে আটকের দাবি

আপডেট সময় : ১১:৩২:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

রাজশাহীর তানোরে ব্র্যাকের আলুবীজ কিনে কৃষকেরা প্রতারিত হয়েছে। এদিকে ব্র্যাকের মতো স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের আলুবীজ কেলেঙ্কারির খবর ছড়িয়ে পড়লে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে।অন্যদিকে অভিযুক্ত বীজ

ডিলার মোহনপুর উপজেলার ধূরইল বাজারের মুর্তুজা ও নামধারী বালাইনাশক ব্যবসায়ী মোহরগ্রামের দুলালকে আটক ও ক্ষতিপুরুণের দাবিতে কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। গত ২ জানুয়ারী  রোববার মোহর গ্রামের  ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও  এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মোর্তুজা। কিন্তু অধিক মুনাফার আশায় গোপণে দীর্ঘদিন ধরে  তিনি নীতিমালা লঙ্ঘন ও চোরাপথে তানোর-গোদাগাড়ী, মান্দা এবং পবা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় আলুবীজ ও রাসায়নিক বিক্রি করে আসছেন। এসব বীজ সার বিক্রিতে কোনো রশিদ দেয়া হয় না।

জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের আলুবীজ ডিলার মোর্তুজা ব্র্যাকের উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ বলে তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) মোহর গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী মেসার্স সোহান ট্রেডার্সের কাছে বিক্রি করেছেন। এদিকে মোহর, লসিরামপুর ও শুকদেবপুর গ্রামের কৃষকেরা সোহান ট্রেডার্স থেকে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে ব্র্যাকের আলু বীজ (বি-গ্রেড) কিনে রোপণ করেন। কিন্তু  ভেজাল ও নিম্নমাণের বীজের কারণে গাছ গজায়নি। এতে কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত প্রতি বিঘা আলু চাষে কৃষকের প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।মেসার্স সোহান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী দুলাল মন্ডল বলেন, তিনি ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মোর্তুজার দোকান থেকে কিনেছেন। তিনি বলেন, এর দায় মোর্তুজার।কারণ তিনি ব্র্যাকের প্যাকেট রিপ্যাক করে নিম্নমানের বীজ দেয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। মোহর গ্রামের কৃষক আকতার হোসেন (৪৫) বলেন, তিনি দুলালের দোকান থেকে ৩৬ হাজার টাকার ব্র্যাকের বি-গ্রেড আলু বীজ কিনে রোপণ করেছেন। কিন্ত্ত ভেজাল বীজের কারণে গাছ গজায়নি। এতে দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষক আনারুল ও জব্বার বলেন, তারাও দুলালের দোকান থেকে আলু বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছে। তারা বলেন, দুলালের দোকানের আলু বীজ কিনে তাদের মতো আরো অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,গত ৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের কথা বলে তানোর পৌর এলাকার কাশেমবাজারে ডেকে নেয়া হয়। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র আরব আলীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ী মোর্তুজা ও দুলাল কৃষকের কাছে থেকে কৌশলে ননজুডিশিয়াল 

স্ট্যাম্পে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে আপোষনামা লিখে নিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে করা অভিযোগ একজন কাউন্সিলর কিভাবে আপোষরফা করতে পারেন ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, দ্রুত ক্ষতিপূরুন না পেলে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি দিবেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স সোহান ট্রেড্রার্সের স্বত্ত্বাধিকারী দুলাল বলেন, তিনি ব্র্যাকের রি-ট্রেলার। তিনি মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মুর্তজার  দোকান থেকে এসব বীজ কিনে এনে বিক্রি করছেন, তায় এর দায় মুর্তজার। তিনি বলেন, মঙ্গলবার কাশিমবাজারে বসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে। আপনি কোন রিটেলার না বীজ কিভাবে বিক্রি করেন জানতে চাইলে পরে কথা বলছি বলে আর ফোন ধরেন নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মুর্তজা বলেন, তার কাছে থেকে বীজ কিনে দুলাল তার ঘরে রাসায়নিক সারের সঙ্গে আলু বীজ রাখায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি মোহনপুর উপজেলার ডিলার হয়ে তানোর উপজেলায় বিক্রি করেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদোত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।

প্যানেল মেয়র আরব আলী জানান, কৃষকদের সাথে বসে মিমাংসা করা হয়েছে। কিভাবে মিমাংসা করলেন জানতে তিনি জানান, যেভাবে হোক হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আপোষ মিমাংসা হয়েছে। তবে সোহান ট্রেডার্স কিভাবে বীজ বিক্রি করেছে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর এবং বীজের প্রয়োজন ২০ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন।