ঢাকা ০২:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

তানোরে মাটি দস্যু শরিফুলের খুটির জোর কোথায় ?

রাজশাহীর তানোরে মাটি দস্যু শরিফুল ও তাঁর ভায়ের খুঁটির জোর কোথায় এমন প্রশ্ন উপজেলা জুড়ে। তিনি নাকি প্রশাসনের সকল স্তরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দেদারসে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন গাছপালা ধ্বংস করে পুকুরের পাড় খনন করে বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে মাটি বিক্রি করছেন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে।

আর পাকা রাস্তা দিয়ে হেরোতে করে মাটি বহন করার কারনে কাঁদায় পরিণত হয়ে পড়ছে রাস্তাগুলো। রাতের আধারে ওই সব রাস্তা দিয়ে বিশেষ করে বাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এবার শরিফুল উপজেলার তালন্দ ইউপির মোহরগ্রামের দরগা পুকুর নামক পাড় কাটা শুরু করেছেন। সেই পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির শতশত গাছ কেটে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করছেন। এতে করে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করছেন শরিফুল। ফলে স্থানীয়রা মাটি দস্যু শরিফুল ও তাঁর ভাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি তুলেছেন।

জানা গেছে, প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের সুযোগে উপজেলার তালন্দ ইউপির সেলামপুরগ্রামের হান্নানের পুকুর রয়েছে একই ইউপির মোহরগ্রামের দরগা নামক স্থানে। পুকুরের পশ্চিমে রয়েছে উঁচু অংশ বা পাহাড়ি। দুই বিঘার আয়তনের পাড়ে ছিল ৪০টি আম গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছপালা। সেই পাড় সমতলের জন্য কণ্ট্রাক নেয় মাটি দস্যু হিসেবে পরিচিত শরিফুল।প্রথমে সেই পাড় থেকে গাছগুলো কেটে ফেলে শরিফুল। গাছ কাটার পর শুরু করেন ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা। সেই মাটি বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করছেন তিনি।আবার সেই মাটি দিয়ে দেবিপুর মোড়ের পশ্চিমে মুল রাস্তার দক্ষিনে কৃষি জমিও ভরাট করা হচ্ছে।যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

স্থানীয়রা জানান, ওই পুকুর পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছপালা ছিল। সব সময় পাখিদের ছিল আনাগুনা। কিন্তু সেই পাড়ের গাছ কাটার জন্য পাখিদের আনাগুনা আর শোনা যাবেনা এবং এত গুলো গাছ একসাথে কাটার জন্য পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হবে। এছাড়াও গ্রামের রাস্তা দিয়ে অন্তত ৬/৭ টিরমত হেরো গাড়িতে করে মাটি বহন করার কারনে পাকা রাস্তায় পড়ছে মাটিগুলো। সামান্য বৃষ্টি হলেই পিচ্চিল হয়ে পড়বে রাস্তা, ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায় পুকুরের পশ্চিম পারে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে হেরোতে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং গ্রামের রাস্তায় পড়ছে মাটি। সেখানে ছিলেন শরিফুলের ভাই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় গাছ কেটে মাটি কাটার কোন অনুমতি আছি কিনা, তিনি জানান গাছ মাটি কাটতে অনুমতি লাগবে কেন, টাকা থাকলে সব কিছু ব্যালেন্স করা যায় বলে দম্ভক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

দেবিপুর মোড়ে এসে কথা হয় পুকুর পাড়ের মালিক হান্নানের সাথে তিনি জানান পাড়ে ৪০টির মত আমগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ছিল। সেই আম গাছ শরিফুল ২০ হাজার টাকায় কিনেছেন এবং আরো অন্য জাতীয় গাছও ছিল । পাড় কেটে জমি করা হবে। গাছ কাটতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয় আপনি কি নিয়েছেন, তিনি জানান আমার জায়গার গাছ কাটতে অনুমতি লাগবে কেন। তিনি আরো জানান ৩৭ হাজার টাকা কন্ট্রাকে শরিফুল মাটি কেটে দিচ্ছে।

শরিফুলের মোবাইলে মাটি কাটা কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে মাটি কাটার জায়গা থেকে তাকে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান সবাইকে ম্যানেজ করে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কাটার জায়গায় অনেক গাছ কাটা আছে আপনি কিভাবে গাছ কাটলেন জানতে চাইলে তিনি জানান মালিক হান্নানের কাছ থেকে কিনে কাটা হয়েছে। এতগুলো গাছ কাটতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয় প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন কিসের অনুমতি টাকা থাকলে বাঘের চোখও মিলে। সবাইকে ম্যানেজ করি বলেই তো এত দিন ধরে এসব কাজ করে আসছে। টাকার কাছে সবাই নত বলে তিনিও দম্ভক্তি প্রকাশ করেন।

গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার তানোরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করলে তিনি ঘটনাস্থল বা কাজের জায়গা জানতে চেয়ে বলেন এধরণের কাজ করা যাবেনা। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

তানোরে মাটি দস্যু শরিফুলের খুটির জোর কোথায় ?

আপডেট সময় : ১২:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০

রাজশাহীর তানোরে মাটি দস্যু শরিফুল ও তাঁর ভায়ের খুঁটির জোর কোথায় এমন প্রশ্ন উপজেলা জুড়ে। তিনি নাকি প্রশাসনের সকল স্তরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দেদারসে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন গাছপালা ধ্বংস করে পুকুরের পাড় খনন করে বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে মাটি বিক্রি করছেন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে।

আর পাকা রাস্তা দিয়ে হেরোতে করে মাটি বহন করার কারনে কাঁদায় পরিণত হয়ে পড়ছে রাস্তাগুলো। রাতের আধারে ওই সব রাস্তা দিয়ে বিশেষ করে বাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এবার শরিফুল উপজেলার তালন্দ ইউপির মোহরগ্রামের দরগা পুকুর নামক পাড় কাটা শুরু করেছেন। সেই পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির শতশত গাছ কেটে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করছেন। এতে করে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করছেন শরিফুল। ফলে স্থানীয়রা মাটি দস্যু শরিফুল ও তাঁর ভাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি তুলেছেন।

জানা গেছে, প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের সুযোগে উপজেলার তালন্দ ইউপির সেলামপুরগ্রামের হান্নানের পুকুর রয়েছে একই ইউপির মোহরগ্রামের দরগা নামক স্থানে। পুকুরের পশ্চিমে রয়েছে উঁচু অংশ বা পাহাড়ি। দুই বিঘার আয়তনের পাড়ে ছিল ৪০টি আম গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছপালা। সেই পাড় সমতলের জন্য কণ্ট্রাক নেয় মাটি দস্যু হিসেবে পরিচিত শরিফুল।প্রথমে সেই পাড় থেকে গাছগুলো কেটে ফেলে শরিফুল। গাছ কাটার পর শুরু করেন ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা। সেই মাটি বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করছেন তিনি।আবার সেই মাটি দিয়ে দেবিপুর মোড়ের পশ্চিমে মুল রাস্তার দক্ষিনে কৃষি জমিও ভরাট করা হচ্ছে।যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

স্থানীয়রা জানান, ওই পুকুর পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছপালা ছিল। সব সময় পাখিদের ছিল আনাগুনা। কিন্তু সেই পাড়ের গাছ কাটার জন্য পাখিদের আনাগুনা আর শোনা যাবেনা এবং এত গুলো গাছ একসাথে কাটার জন্য পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হবে। এছাড়াও গ্রামের রাস্তা দিয়ে অন্তত ৬/৭ টিরমত হেরো গাড়িতে করে মাটি বহন করার কারনে পাকা রাস্তায় পড়ছে মাটিগুলো। সামান্য বৃষ্টি হলেই পিচ্চিল হয়ে পড়বে রাস্তা, ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায় পুকুরের পশ্চিম পারে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে হেরোতে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং গ্রামের রাস্তায় পড়ছে মাটি। সেখানে ছিলেন শরিফুলের ভাই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় গাছ কেটে মাটি কাটার কোন অনুমতি আছি কিনা, তিনি জানান গাছ মাটি কাটতে অনুমতি লাগবে কেন, টাকা থাকলে সব কিছু ব্যালেন্স করা যায় বলে দম্ভক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

দেবিপুর মোড়ে এসে কথা হয় পুকুর পাড়ের মালিক হান্নানের সাথে তিনি জানান পাড়ে ৪০টির মত আমগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ছিল। সেই আম গাছ শরিফুল ২০ হাজার টাকায় কিনেছেন এবং আরো অন্য জাতীয় গাছও ছিল । পাড় কেটে জমি করা হবে। গাছ কাটতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয় আপনি কি নিয়েছেন, তিনি জানান আমার জায়গার গাছ কাটতে অনুমতি লাগবে কেন। তিনি আরো জানান ৩৭ হাজার টাকা কন্ট্রাকে শরিফুল মাটি কেটে দিচ্ছে।

শরিফুলের মোবাইলে মাটি কাটা কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে মাটি কাটার জায়গা থেকে তাকে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান সবাইকে ম্যানেজ করে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কাটার জায়গায় অনেক গাছ কাটা আছে আপনি কিভাবে গাছ কাটলেন জানতে চাইলে তিনি জানান মালিক হান্নানের কাছ থেকে কিনে কাটা হয়েছে। এতগুলো গাছ কাটতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয় প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন কিসের অনুমতি টাকা থাকলে বাঘের চোখও মিলে। সবাইকে ম্যানেজ করি বলেই তো এত দিন ধরে এসব কাজ করে আসছে। টাকার কাছে সবাই নত বলে তিনিও দম্ভক্তি প্রকাশ করেন।

গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার তানোরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করলে তিনি ঘটনাস্থল বা কাজের জায়গা জানতে চেয়ে বলেন এধরণের কাজ করা যাবেনা। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।