ঈদের এতদিন পরও মোবাইল ফোন অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আড়াই হাজার টাকা পাননি অসহায় ও কর্মহীনদের অনেকে। তালিকা প্রস্তুতকারীদের কারণে এসব দুস্থ ও কর্মহীনরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে। করোনা মোকাবেলায় লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে সারা দেশে অসহায়, দুঃস্থ’দের তালিকা করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
যারা তালিকাই নাম থেকেও টাকা না পাবার আশা ছেড়েই দিয়েছেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে নতুন মোবাইল সিমের নম্বরসহ আইডি কার্ড দেয়ার হিড়িক পড়ে। মন্ত্রণায় থেকে ত্রুটিপূর্ণ তালিকা দেয়া হয় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিদের।
আবার অনেকের নামের পরিচয়পত্রের নম্বর কম সংখ্যা তুলে দেয়া হয়েছে বলেও অনেকে জানান। তানোর পৌরসভার তালিকায় থাকা সবুর নামের এক ব্যাক্তি মোবাইলের সিম কিনতে গিয়ে জানতে পারেন ফিঙ্গার পিন্ট মিলে যায়। মন্ত্রণালয়ের তালিকায় গিয়ে দেখা যায় পরিচয় পত্রের পুরো নম্বর উঠানো নেই। (আজ) গতকাল মঙ্গলবার তালিকা সংশোধন করে পাঠাতে হবে বলেও একাধিক জনপ্রতিনিধিরা জানান।
ঘোষণা অনুযায়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌর সভায় কর্মহীন অসহায়-দুস্থ ৮ হাজার ৬০০ জন দরিদ্র শ্রমজীবী পরিবারের তালিকা করে ইউনিয়ন পরিষদগুলো ও দুটি পৌরসভা।
তালিকা অনুযায়ী তানোর পৌর সভায় ১ হাজার, মু-ুমালা পৌরসভায় ৭শত, পাঁচন্দর ইউনিয়নে ১ হাজার ১১ জন, সরনজাই ইউনিয়নে৩৭০ কলমা ইউনিয়নে ১ হাজার ৭০ জন, বাধাইড় ইউনিয়নে ৮২৫ তালন্দ ইউনিয়নে ৫০৭ কামারগাঁ ইউনিয়নে ৯০৭ চান্দুড়িয়া ইউনিয়নে ৪০৭ জন দরিদ্র ব্যাক্তির নামের তালিকা জমা দেন জনপ্রতিনিধিরা। জমা দেয়া তালিকা তৈরির শুরুর দিকে শিক্ষকদের দিয়ে যাচাই বাচাই করানো হয়।
চেয়ারম্যানদের দেয়া সেই তালিকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে উপজেলা তথ্যপ্রযুক্তি অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার জাকারিয়া হোসেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠান। গত ঈদের আগে তালিকা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তহবিল থেকে ঈদ শুভেচ্ছা হিসেবে মেসেজ আসে অল্প সংখক ব্যাক্তির মোবাইলে। নগদ, বিকাশ, রকেট সার্ভিসের মাধ্যমে তারা দুই হাজার ৫০০ টাকা করে পান। তবে তালিকার মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যাক্তির মোবাইলে বার্তা বা টাকার মেসেজ পেয়েছন কিনা তাও অধরা।
চিমনা গ্রামের তালিকায় নাম থাকা দুস্থ ও কর্মহীন আবদুল খালেক,শরিফ উদ্দিন ও নাসির উদ্দিন জানান, আমাদের নামের সাথে আইডি কার্ডের মিল নাই। আর আমাদের হাতের আংগুলের সাথে ফিংগার পিনের মিলেনি। সেই কারণে টাকা আসেনি বলে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন আমাদেরকে বলেছেন। তবে সোমবার সকালে চেয়ারম্যানের নির্দেশে রুপালী ব্যাংক তানোর শাখায় একাউন্ট খুলতে গিয়েছিলাম আমরা তিনজন।
সেই দিন ব্যাংক ম্যানেজর আমাদের একাউন্ট খোলে দেয়নি। আগামীতে আবারো যাবো বলে তারা জানান।তবে তালিকা তৈরি নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কারন ক্ষমতাসীন দলের অনেক ধনাঢ্য ব্যাক্তি প্রভাবশালী নেতা, জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয় স্বজনের নাম রয়েছে বলেও উপজেলা জুড়েই বইছে সেই গুঞ্জন।
এবিষয়ে তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, রোজার ঈদের আগে স্বল্প সময়ের মধ্যে তালিকা প্রণয়ন করে তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন। কিছু লোক ঈদের আগেই টাকা পেয়েছেন, তবে বেশির ভাগ লোকই এখনো টাকা পাননি। কী কারণে টাকা পাচ্ছেন না তারও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি চেয়ারম্যান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তালিকা উপজেলা তথ্যপ্রযুক্তি অফিসের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যাদের তালিকার নাম থাকার পরও টাকা পাই নাই। তাদের পূণরাই ভুল সংশোধন করে তালিতা প্রনায়ন করার কাজ চলছে।
উপজেলা তথ্য ও প্রযুক্তি অধিদফতরের উপজেলা সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার জাকারিয়া হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠপর্যায় থেকে তালিকা তৈরি করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয় সেই তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানির (বিটিসিএল) কাছে পাঠিয়ে থাকে। বিটিসিএল তালিকায় ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ও দেয়া মোবাইল নম্বরটির মালিকানায় মিল না থাকায় টাকা তারা পা”েছন না বলে মনে করছেন তিনি।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তানোর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ইউএনও কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, যারা এখনো টাকা পাননি হয়তো তাদের ভোটার আইডি কার্ড বা মোবাইল নম্বরে ভুল থাকতে পারে । সেই ভুলগুলো সংশোধন করে আবার একটি তালিকা পাঠানো হবে। সংশোধিত তালিকা মন্ত্রণালয়ে গেলে তালিকাভুক্ত সবাই টাকা পাবেন বলে জানান তিনি।