ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৯ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

নেপালের বিমান দুর্ঘটনায় ৫ বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান

নেপালের বিমান দুর্ঘটনায় অন্তত ৭২ জনের মৃত্যু যা নেপালের ইতিহাসে বিগত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান বিপর্যয়।

যাত্রীদের মধ্যে ৫৩ জন নেপালি, পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান এবং দুজন কোরিয়ান নাগরিক রয়েছেন। বিমানে থাকা অন্যদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স থেকে একজন করে যাত্রী ছিলেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পর্যটন শহর পোখারার বিমানবন্দরের কাছে একটি খাদে পড়ে বিমানটি। বিমানটি কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।

তবে অনুসন্ধানকারীরা ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটির ভয়েস এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করেছেন এবং দুটোই অক্ষত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

অস্ট্রেলিয়ান নাগারিক মাইরন লাভ

সিডনির শিক্ষক মাইরন লাভ (২৯) নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ। বন্ধুরা উত্সাহী এই সাইক্লিস্ট এবং সার্ফারকে “সত্যিকারের দয়ালু, মজার এবং উদ্যমী মানুষ হিসাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা মিডিয়াকে বলেছেন “আমি আমার জীবনে তার চেয়ে খাঁটি কোন মানুষের দেখা পাইনি”

এক বিবৃতিতে তার পরিবার বলেছে, মাইরন তাদের আদর্শ ছিল।”তিনি তার সংক্ষিপ্ত জীবনে এত বেশি রেখে গিয়েছেন যে আমাদের বেশিরভাগই সারাজীবনেও তার মত হতে পারবনা”

একজন দক্ষিণ কোরিয়ান সৈনিক এবং তার সন্তান

বাবা ৪৫ বছর বয়সী ইয়ো ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর একজন সার্জেন্ট। ছেলের স্কুলে শীতের ছুটিতে তিনি ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছিলেন পৃথিবী দেখতে।

হিমালয়ে হাইকিং ট্রিপের জন্য গত ১৪ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রওনা হন দুজন। দক্ষিণ কোরিয়ার মিডিয়া জানিয়েছে, যেদিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল সেদিন তারা তাদের পরিবারের সাথে কথা বলেছিলেন। কিন্তু ফ্লাইটের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরেও তারা আর যোগাযোগ করেননি।

তারা পরিবারকে জানিয়েছিল যে, তারা সেদিন ভারত থেকে নেপালে যাচ্ছেন। তারা নেপালের অপরুপ সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন।

সোনু জয়সওয়াল, অভিষেক কুশওয়াহা, অনিল রাজভার এবং বিশাল শর্মা

তারা চারজন, প্রত্যেকের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তারা ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজ্য গাজিপুরের বাসিন্দা। প্লেনে থাকা পাঁচ ভারতীয়ের মধ্যে ছিলেন তারা ৪জন ।

গাজিপুরের স্থানীয়রা বলেছেন যে, তারা ১৩ জানুয়ারী পশুপতিনাথ মন্দির দেখতে নেপাল গিয়েছিলেন, এটি কাঠমান্ডুর উপকণ্ঠে একটি বিশাল মন্দির যা হিন্দু দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে উত্সর্গীকৃত।

এই মন্দির দেখতে যাওয়ার ধারণাটি ছিল জয়সওয়ালের– তিনটি কন্যা সন্তানের বাবা জয়সওয়াল ছেলের জন্য মন্দিরে প্রার্থনা করতে চেয়েছিলেন।

প্লেনটি দুর্ঘটনার সময় জয়সওয়াল তার মোবাইলে লাইভ ভিডিও করছিলেন।

কো-পাইলট আঞ্জু খাতিওয়াদা

আঞ্জু খাতিওয়াদা ছিলেন ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৬৯১ এর কো-পাইলট। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ৬ জন নারী পাইলটের একজন তিনি।

ইয়েতি এয়ারলাইন্সের কর্মী সুদর্শন বারতৌলা বলেন, “আঞ্জু খাতিওয়াদা এয়ারলাইন্সের একজন দক্ষ এবং পূর্ণ ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি একাই অনেক ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন।” “তিনি একজন সাহসী মহিলা ছিলেন।”

খাতিওয়াদার স্বামীও একই ভাবে ২০০৬ সালে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কো-পাইলট হিসেবে যাত্রার সময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।

কন্ঠ শিল্পী নীরা চানতিয়াল

নীরা একজন কন্ঠ শিল্পী যিনি নিয়মিত ইয়েতি এয়ারলাইন্সে যাতায়াত করেন। কম খরচের এই এয়ারলাইন্স পাহাড়ি রাষ্ট্র নেপালের মধ্যবিত্তদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

নীরা কাঠমুন্ডু থেকে একটি সংগীতানুষ্ঠানে পরিবেশনার জন্য পোখারাতে যাচ্ছিলেন। নীরা প্রতিভাবান একজন শিল্পী ছিলেন, তিনি লোক সংগীত গাইতেন। তিনি প্রায়ই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গান গাইতেন বলে বিবিসিকে বলেছেন নীরার বন্ধু ভিমসেন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

নেপালের বিমান দুর্ঘটনায় ৫ বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান

আপডেট সময় : ০৪:০০:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

নেপালের বিমান দুর্ঘটনায় অন্তত ৭২ জনের মৃত্যু যা নেপালের ইতিহাসে বিগত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান বিপর্যয়।

যাত্রীদের মধ্যে ৫৩ জন নেপালি, পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান এবং দুজন কোরিয়ান নাগরিক রয়েছেন। বিমানে থাকা অন্যদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স থেকে একজন করে যাত্রী ছিলেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পর্যটন শহর পোখারার বিমানবন্দরের কাছে একটি খাদে পড়ে বিমানটি। বিমানটি কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।

তবে অনুসন্ধানকারীরা ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটির ভয়েস এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করেছেন এবং দুটোই অক্ষত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

অস্ট্রেলিয়ান নাগারিক মাইরন লাভ

সিডনির শিক্ষক মাইরন লাভ (২৯) নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ। বন্ধুরা উত্সাহী এই সাইক্লিস্ট এবং সার্ফারকে “সত্যিকারের দয়ালু, মজার এবং উদ্যমী মানুষ হিসাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা মিডিয়াকে বলেছেন “আমি আমার জীবনে তার চেয়ে খাঁটি কোন মানুষের দেখা পাইনি”

এক বিবৃতিতে তার পরিবার বলেছে, মাইরন তাদের আদর্শ ছিল।”তিনি তার সংক্ষিপ্ত জীবনে এত বেশি রেখে গিয়েছেন যে আমাদের বেশিরভাগই সারাজীবনেও তার মত হতে পারবনা”

একজন দক্ষিণ কোরিয়ান সৈনিক এবং তার সন্তান

বাবা ৪৫ বছর বয়সী ইয়ো ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর একজন সার্জেন্ট। ছেলের স্কুলে শীতের ছুটিতে তিনি ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছিলেন পৃথিবী দেখতে।

হিমালয়ে হাইকিং ট্রিপের জন্য গত ১৪ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রওনা হন দুজন। দক্ষিণ কোরিয়ার মিডিয়া জানিয়েছে, যেদিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল সেদিন তারা তাদের পরিবারের সাথে কথা বলেছিলেন। কিন্তু ফ্লাইটের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরেও তারা আর যোগাযোগ করেননি।

তারা পরিবারকে জানিয়েছিল যে, তারা সেদিন ভারত থেকে নেপালে যাচ্ছেন। তারা নেপালের অপরুপ সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন।

সোনু জয়সওয়াল, অভিষেক কুশওয়াহা, অনিল রাজভার এবং বিশাল শর্মা

তারা চারজন, প্রত্যেকের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তারা ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজ্য গাজিপুরের বাসিন্দা। প্লেনে থাকা পাঁচ ভারতীয়ের মধ্যে ছিলেন তারা ৪জন ।

গাজিপুরের স্থানীয়রা বলেছেন যে, তারা ১৩ জানুয়ারী পশুপতিনাথ মন্দির দেখতে নেপাল গিয়েছিলেন, এটি কাঠমান্ডুর উপকণ্ঠে একটি বিশাল মন্দির যা হিন্দু দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে উত্সর্গীকৃত।

এই মন্দির দেখতে যাওয়ার ধারণাটি ছিল জয়সওয়ালের– তিনটি কন্যা সন্তানের বাবা জয়সওয়াল ছেলের জন্য মন্দিরে প্রার্থনা করতে চেয়েছিলেন।

প্লেনটি দুর্ঘটনার সময় জয়সওয়াল তার মোবাইলে লাইভ ভিডিও করছিলেন।

কো-পাইলট আঞ্জু খাতিওয়াদা

আঞ্জু খাতিওয়াদা ছিলেন ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৬৯১ এর কো-পাইলট। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ৬ জন নারী পাইলটের একজন তিনি।

ইয়েতি এয়ারলাইন্সের কর্মী সুদর্শন বারতৌলা বলেন, “আঞ্জু খাতিওয়াদা এয়ারলাইন্সের একজন দক্ষ এবং পূর্ণ ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি একাই অনেক ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন।” “তিনি একজন সাহসী মহিলা ছিলেন।”

খাতিওয়াদার স্বামীও একই ভাবে ২০০৬ সালে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কো-পাইলট হিসেবে যাত্রার সময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।

কন্ঠ শিল্পী নীরা চানতিয়াল

নীরা একজন কন্ঠ শিল্পী যিনি নিয়মিত ইয়েতি এয়ারলাইন্সে যাতায়াত করেন। কম খরচের এই এয়ারলাইন্স পাহাড়ি রাষ্ট্র নেপালের মধ্যবিত্তদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

নীরা কাঠমুন্ডু থেকে একটি সংগীতানুষ্ঠানে পরিবেশনার জন্য পোখারাতে যাচ্ছিলেন। নীরা প্রতিভাবান একজন শিল্পী ছিলেন, তিনি লোক সংগীত গাইতেন। তিনি প্রায়ই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গান গাইতেন বলে বিবিসিকে বলেছেন নীরার বন্ধু ভিমসেন।