আবদুস সবুর, তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার আলোচিত মেয়র সাইদুর রহমান দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন উত্তোলন করছেন বলে নিশ্চিত করেন পৌর সচিব আবুল হোসেন ও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সহিদুল ইসলাম। সাইদুর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকে মুন্ডুমালা মহিলা ডিগ্রি কলেজের নৈশ প্রহরীর চাকুরী করে আসছেন। অবশ্য মেয়র হওয়ার পর তার চাকুরী ছাড়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু বিগত দু বছর ধরে নৈশ প্রহরীর ডিউটি না করে বেতন তুলছেন। তার পরিবর্তে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করে বলেও জানান অধ্যক্ষ। আবার পৌরসভা থেকে মেয়র বেতন উত্তোলন করেন নিয়োমিত। এক ব্যক্তি কিভাবে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতে পারেন এনিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। এখবর ছড়িয়ে পড়লে পৌরবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বিগত ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মুন্ডুমালা পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৈশ প্রহরীর চাকুরী করার জন্য আওয়ামীলীগ তাকে মনোনায়ন দেয় নি। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোট করে মাত্র ৬১ ভোটে বিজয় লাভ করেন। অবশ্য সাইদুর মহামারী করোনা ভাইরাসের লকডাউনের সময় পৌর বাসীর মাঝে লাখ লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেন। শুধু মাত্র ভোট করার জন্য তিনি খাদ্য সামগ্রী দিয়েছিলেন। তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েও নৈশ প্রহরীর চাকুরী ছাড়েন নি। নৈশ প্রহরীর চাকুরী পাওয়ার পর থেকে তিনি ডিউটি করতেন না। অন্যজনকে দিয়ে ডিউটি করিয়ে নিয়ে বেতন তুলতেন।
পৌরসভার বাসিন্দারা জানান, ভোটের সময় সাইদুরের প্রতিশ্রুতি ছিল মেয়র নির্বাচিত হলে নৈশ প্রহরীর চাকুরী ছেড়ে দিবেন। কিন্তু তিনি সেটা করেন নি। একজনের চাকুরী আরেকজন ডিউটি করেও বেতন তুলছেন। সরকারী কোষাগার থেকে একব্যক্তি দুই জায়গা থেকে বেতন তুলতে পারেন না। তিনি নৈশ প্রহরী জেনেও আমরা ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছিলাম, যাতে তিনি চাকুরী ছেড়ে দেন। কয়লা ধূলে যেমন যায় না ময়লা। দ্বিতীয় শ্রেণীর পৌরসভার মেয়র তিনি, কার নিয়ে চলাফেরা করেন, রয়েছে পাচ তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি, মুন্ডুমালা বাজারে জেলা পরিষদের জায়গা লীজ নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল মার্কেট। এত কিছু থাকার পরও কেন নৈশ প্রহরীর চাকুরী করেন। যদি টাকার এত লালসা তাহলে মেয়রের ভোট করলেন কেন। তিনি চাকুরী ছেড়ে দিলে অন্য একজন চাকুরী পেত।
বেশকিছু সচেতন নাগরিকরা বলেন, মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রথম মেয়র হন তৎকালীন বিএনপির সভাপতি হেবিওয়েট নেতা প্রয়াত শীষ মোহাম্মাদ, যাকে সারা দেশের মানুষ চিনত। ২০১১ ও ২০১৬ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন সদ্য বিদায়ী আওয়ামীলীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী। সেই পৌরসভার মেয়র হলেন নৈশ প্রহরী। আমরা আবেগী এজন্য তিনি মেয়র হতে পেরেছেন।
মুন্ডুমালা পৌর সচিব আবুল হোসেন মেয়র সাইদুর রহমানের বেতন উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি ৩০ হাজার টাকা করে বেতন উত্তোলন করেন। সে নৈশ প্রহরীর ও মেয়রের বেতন তুলতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান এটা আমার অজানা।
মুন্ডুমালা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সহিদুল ইসলামও বেতন উত্তোলনে কথা স্বীকার করে বলেন, হাইকোর্টের নাকি কোন আদেশ আছে সেই বলে বেতন তুলছেন। আদালতের আদেশ কি দেখেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আদেশ দেখিনি, তাহলে একজন ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠান থেকে কিভাবে চাকুরী ও সরকারি কোষাগার বেতন তুলেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে জানান, সরকারি কোষাগার থেকে বেতন দেওয়া হয়না, কোন ফান্ড থেকে দেওয়া হয় প্রশ্ন করা হলে কোন সদ উত্তর না দিয়ে বলেন, সাইদুরের পরিবর্তে অন্য একজন ডিউটি করেন বলে দায় সারেন।
মেয়র সাইদুরের কাছে এবিষয়ে জানতে তার ব্যক্তিগত ০১৭১৬-৬৯৫৪৫৫ মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, আমার জানা মতে সরকারি কোষাগার থেকে একব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানের বেতন তুলতে পারেন না। তারপরও স্থানীয় মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।