ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাই শেষে বন্দরের কাজ শুরুর আশ্বাস : রেলমন্ত্রী

বহু আকাঙ্খিত এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের চতুর্দেশীয় বিরল স্থলবন্দরের রেলসংযোগ স্থাপনের সম্ভাব্যতা পরিদর্শন শেষে বিরল রেলস্টেশনের উদ্বোধন করলেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন এমপি ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।

বিরল স্থলবন্দর পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেছেন, বাংলাদেশি অংশে ৪লেনের বাড়তি রেলপথ তৈরির প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাইসহ বিরল স্থলবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ অতিদ্রুত শুরু করা হবে। তিনি বলেন, আমরা অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সুবিধাসহ সকল ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।

বিরল স্থলবন্দর পরিদর্শনের পর গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সূধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।

বেসরকারী পর্যায়ে অবকাঠামো নির্মানে জমি অধিগ্রহন করলেও বন্দরটি এখনও পূর্নাঙ্গভাবে চালু হয়নি। গতকালের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চালু হতে চলেছে দিনাজপুর বিরলের র্পূনাঙ্গ স্থলবন্দর। পশ্চিমবঙ্গের রাধিকাপুর হয়ে ভারত নেপাল এবং ভূটানের সাথে ৪ দেশের মধ্যে সরাসরি পন্য আমদানি রফতানির পাশাপাশি যাত্রীও পরিবহন করা যাবে রেলপথ এবং সড়ক পথে।

এতে সরকারি রাজস্ব আদায় এবং ভাড়া বাবদ রেলওয়ের আয় বৃদ্ধি ছাড়াও সময় এবং পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমে আসবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এতে বিরল স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহনের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর এটি চালু হলে ভারত, ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবেশ দ্বার হতে পারে। বিরল স্থলবন্দর চালু হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে ৪ দেশের ব্যবসা বাণিজ্য।

এদিকে, বেসরকারী বিরল পোর্ট ল্যান্ড লিমিটেডের পরিচালক ইকবাল চৌধুরী জানান, এই ল্যান্ড পোর্টের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যেদিন আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে তার দুইমাসের মধ্যে এই পোর্ট চালু করা যাবে। এই বন্দর চালু হয় তবে এ অঞ্চলের আত্মসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসবে।

এ ব্যাপারে বেসরকারী বিরল পোর্ট ল্যান্ড লিমিটেডের এমডি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন জানান, এটি আসলে চতুর্দেশীয় বন্দর। এই বন্দরে সাথে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। এখানে রেলওয়ে ও সড়ক উভয় পথ সংযোগ রয়েছে। পাচধরনের আমদানী-রপ্তানী করা সম্ভব। এটি পূর্নাঙ্গ বন্দর হিসাবে চালু হলে ১০হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে।

এই বন্দরের পাশে জেলা শহর, ব্যাংকিং সুবিধাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুবিধা থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবে। এই বন্দর নিয়ে এলাকার মানুষের অনেক স্বপ্ন। আজকে যেটা স্বপ্ন আগামীতে সেটাই বাস্তব। এই বর্তমান সরকার প্রতিটা স্বপ্নকে যেটা অর্থনৈতিকভাবে সফল, সেটা বাস্তবায়ন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তারই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,রেলওয়ে সাইটিং ও সড়ক সংযোগ বাস্তবায়ন করা গেলে এটি পুর্নাঙ্গ বিরল স্থলবন্দরে রুপ পাবে। তখনই বিরল পোর্ট ল্যান্ড লিংক লিঃ-ও কাজ শুরু করতে পারবে। ২০০৬ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের আওতায় সরকারের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরল স্থলবন্দর লিংক লিমিটেডের চুক্তি হয়।

সুধী সমাবেশে বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ সবুজার সিদ্দিক সাগর’র সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বিপিএম-পিপিএম(বার), উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিনাত রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পূণর্বাসন কমিটির সদস্য সচিব ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, বিরল পোর্ট লিমিটেড এর পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন প্রমূখ।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারত এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথে নেপাল, ভারত এবং মিয়ানমায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে মধ্যে সিমিত সংখ্যক পণ্যবাহী ট্রেন চলতো বিরল রেলপথ দিয়ে। ২০০৬ সালে ভারত রাধিকাপুর পযর্ন্ত ব্রড গেজ রেলপথ স্থাপন করায় রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

ব্রডগেজ রেললাইন হওয়ায় বাংলাদেশে আর মালবাহী ট্রেন আসতে পারত না। এতে ২০০৫ সালের মে মাস থেকে রেলপথে দুদেশের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৬ সালে বিরল স্থলবন্দর অবকাঠামো নির্মানের জন্য বিরল সীমান্ত লাগোয়া চক শংকরপুর মৌজার মানিকপাড়া গ্রামের প্রান্তরে স্থলবন্দরের সংরক্ষিত সাড়ে ১৭ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়। ২০১৭সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ডুয়েল গেজ রেলপথে বানিজ্য শুরু হয়েছে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি দল কয়েকবার বিরল স্থলবন্দর পরিদর্শন করেছেন। ২০১৭সালের ৮ সেপ্টেম্বর নেপালের রাষ্ট্রদূত এইচ.ই. প্রফেসর ড. চোপলাল ভুষাল বিরল-রাধিকারপুর রেলপথের পাকুড়া চকশংকর এলাকার বি.ডি সাইটও পরিদর্শন করে গেছেন।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাই শেষে বন্দরের কাজ শুরুর আশ্বাস : রেলমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৭:৫৪:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০

বহু আকাঙ্খিত এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের চতুর্দেশীয় বিরল স্থলবন্দরের রেলসংযোগ স্থাপনের সম্ভাব্যতা পরিদর্শন শেষে বিরল রেলস্টেশনের উদ্বোধন করলেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন এমপি ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।

বিরল স্থলবন্দর পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেছেন, বাংলাদেশি অংশে ৪লেনের বাড়তি রেলপথ তৈরির প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাইসহ বিরল স্থলবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ অতিদ্রুত শুরু করা হবে। তিনি বলেন, আমরা অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সুবিধাসহ সকল ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।

বিরল স্থলবন্দর পরিদর্শনের পর গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সূধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।

বেসরকারী পর্যায়ে অবকাঠামো নির্মানে জমি অধিগ্রহন করলেও বন্দরটি এখনও পূর্নাঙ্গভাবে চালু হয়নি। গতকালের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চালু হতে চলেছে দিনাজপুর বিরলের র্পূনাঙ্গ স্থলবন্দর। পশ্চিমবঙ্গের রাধিকাপুর হয়ে ভারত নেপাল এবং ভূটানের সাথে ৪ দেশের মধ্যে সরাসরি পন্য আমদানি রফতানির পাশাপাশি যাত্রীও পরিবহন করা যাবে রেলপথ এবং সড়ক পথে।

এতে সরকারি রাজস্ব আদায় এবং ভাড়া বাবদ রেলওয়ের আয় বৃদ্ধি ছাড়াও সময় এবং পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমে আসবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এতে বিরল স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহনের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর এটি চালু হলে ভারত, ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবেশ দ্বার হতে পারে। বিরল স্থলবন্দর চালু হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে ৪ দেশের ব্যবসা বাণিজ্য।

এদিকে, বেসরকারী বিরল পোর্ট ল্যান্ড লিমিটেডের পরিচালক ইকবাল চৌধুরী জানান, এই ল্যান্ড পোর্টের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যেদিন আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে তার দুইমাসের মধ্যে এই পোর্ট চালু করা যাবে। এই বন্দর চালু হয় তবে এ অঞ্চলের আত্মসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসবে।

এ ব্যাপারে বেসরকারী বিরল পোর্ট ল্যান্ড লিমিটেডের এমডি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন জানান, এটি আসলে চতুর্দেশীয় বন্দর। এই বন্দরে সাথে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। এখানে রেলওয়ে ও সড়ক উভয় পথ সংযোগ রয়েছে। পাচধরনের আমদানী-রপ্তানী করা সম্ভব। এটি পূর্নাঙ্গ বন্দর হিসাবে চালু হলে ১০হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে।

এই বন্দরের পাশে জেলা শহর, ব্যাংকিং সুবিধাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুবিধা থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবে। এই বন্দর নিয়ে এলাকার মানুষের অনেক স্বপ্ন। আজকে যেটা স্বপ্ন আগামীতে সেটাই বাস্তব। এই বর্তমান সরকার প্রতিটা স্বপ্নকে যেটা অর্থনৈতিকভাবে সফল, সেটা বাস্তবায়ন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তারই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,রেলওয়ে সাইটিং ও সড়ক সংযোগ বাস্তবায়ন করা গেলে এটি পুর্নাঙ্গ বিরল স্থলবন্দরে রুপ পাবে। তখনই বিরল পোর্ট ল্যান্ড লিংক লিঃ-ও কাজ শুরু করতে পারবে। ২০০৬ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের আওতায় সরকারের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরল স্থলবন্দর লিংক লিমিটেডের চুক্তি হয়।

সুধী সমাবেশে বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ সবুজার সিদ্দিক সাগর’র সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বিপিএম-পিপিএম(বার), উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিনাত রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পূণর্বাসন কমিটির সদস্য সচিব ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, বিরল পোর্ট লিমিটেড এর পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন প্রমূখ।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারত এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথে নেপাল, ভারত এবং মিয়ানমায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে মধ্যে সিমিত সংখ্যক পণ্যবাহী ট্রেন চলতো বিরল রেলপথ দিয়ে। ২০০৬ সালে ভারত রাধিকাপুর পযর্ন্ত ব্রড গেজ রেলপথ স্থাপন করায় রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

ব্রডগেজ রেললাইন হওয়ায় বাংলাদেশে আর মালবাহী ট্রেন আসতে পারত না। এতে ২০০৫ সালের মে মাস থেকে রেলপথে দুদেশের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৬ সালে বিরল স্থলবন্দর অবকাঠামো নির্মানের জন্য বিরল সীমান্ত লাগোয়া চক শংকরপুর মৌজার মানিকপাড়া গ্রামের প্রান্তরে স্থলবন্দরের সংরক্ষিত সাড়ে ১৭ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়। ২০১৭সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ডুয়েল গেজ রেলপথে বানিজ্য শুরু হয়েছে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি দল কয়েকবার বিরল স্থলবন্দর পরিদর্শন করেছেন। ২০১৭সালের ৮ সেপ্টেম্বর নেপালের রাষ্ট্রদূত এইচ.ই. প্রফেসর ড. চোপলাল ভুষাল বিরল-রাধিকারপুর রেলপথের পাকুড়া চকশংকর এলাকার বি.ডি সাইটও পরিদর্শন করে গেছেন।