বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ লতিফ সরকারের রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি চায় তার স্ত্রী সন্তানরা।স্বাধীনতার ৫১বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশ প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা আ.লতিফের পরিবার। টকবগে যুবক,দশম শ্রেণীর ছাত্র,বয়স ১৮/১৯ হবে। চিলমারী উপজেলাধীন রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারমারী গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী সরকার ও মৃত নছমান বেওয়ার মেঝ ছেলে আঃ লতিফ সরকার ১৯৫৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। ৫ভাইয়ের মধ্যে ২য় ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সাল, সারাদেশে শুরু হয় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন আর বাংলার মাটিকে দখলের যুদ্ধ।মা-বোনদের বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাষবিক অত্যাচার চালাতো পাকিস্তানী নরপিচাষরা। চার দিক থেকে ভেসে আসছে শুধু গোলাগুলির শব্দ। নিজেকে আর সংবরন করতে পারেন নি সেই সাহসি যোদ্ধা আ. লতিফ সরকার। বাড়ী থেকে নিজ ইচ্ছায়,বের হয়ে যান দেশ মাতৃকার সম্ভ্রম রক্ষার্থে তিনি। মুক্তি যোদ্ধা হয়ে নিজের মাতৃভুমিকে স্বাধীন করার ইচ্ছা লালন করে নদী পাড় হয়ে রৌমারীতে দেশ মাতৃকা রক্ষার যুদ্ধে লিপ্ত হন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে এসএসসি পাশ করা আ. লতিফ সরকার ১৯৮৫ সালে চাকুরী জীবনে পদার্পন করেন। প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.লতিফ সরকারের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম(রুবী) বলেন, তার স্বামী ১৯৭১সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের আওতায় সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তার স্বীকৃতি স্বরুপ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় তালিকায় (জামুকা) তার নাম লিপিবদ্ধ আছে(যার ক্রমিক নং ২০০)। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার স্বামী জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সেনা বাহিনীর এমইএস সেক্টরে চাকুরী নেয় এবং দেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে চাকুরী করার কারনে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত মুক্তিবার্তা ও চুড়ান্ত গেজেটে তালিকাভূক্ত হতে পারেন নাই। সে কারনে তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্তে¡ও সকল প্রকার সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হওয়ায়,তিনি মহিলা মানুষ হিসেবে কোথাও যোগাযোগ করতে পারেননি।তিনি আরও জানান, চাকুরীরত অবস্থায় হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমার স্বামী বীব মুক্তিযোদ্ধা আ.লতিফ সরকার মৃত্যু বরণ করায় আমি ২ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চিলমারী উপজেলা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. মোজাফ্ফর আহম্মেদ জানান, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ লতিফ সরকার একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে তাকে আমি চিনি। একই কথা বললেন তৎকালীন রৌমারী হাইস্কুল ক্যাম্পের অপর এক প্রশিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী। প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ লতিফ সরকারের সহযোদ্ধা হিসাবে ছিলেন মর্মে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন(গেজেট নং ১৬৪৯),বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস উদ্দিন(গেজেট নং ১৬৫৮),বীর মুক্তিযোদ্ধা খতিব উদ্দিন (চুড়ান্ত গেজেট নং-১৬৫৯) সহ আরও অনেকে স্বীকারোক্তি দেন।কান্না জড়িত কন্ঠে হোসনে আরা বেগম(রুবী) এ প্রতিনিধিকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের কাছে আমার একটিই দাবী তিনি যেন আমার প্রয়াত স্বামীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেন যাতে আমার সন্তানরা এই দেশের মাটিতে মাথা উচুঁ করে বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে পরিচয় দিতে পারে।