ঢাকা ০২:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১১ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

মাছ ধরার সামগ্রী চাই/ডাইরকির চাহিদা বেড়েছে

বর্ষায় টানা বৃষ্টিপাতে দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে নদী-নালা ও জমিতে পানি ভরে গেছে। তাই দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, কাহারোলসহ বিভিন্ন উপজেলায় জমে উঠেছে মাছ ধরার সামগ্রীর বাজার।

বর্ষায় এসব সামগ্রীকে মাছ ধরার ‘চাই’ যা স্থানীয় ভাষায় ডাইরকি কিংবা ভুরঙ্গ বলা হয়। আবার কোন এলাকায় খোলসুন (ভোরং) বলা হয়।
বর্ষায় নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে খাল বিল ডোবা ও নিম্ন অঞ্চল পানির নিচে। কয়েকদিন ধরেই চলছে অবিরাম ধারায় বৃষ্টি। অনেক পুকুর ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে মাছ। ফলে দেশীয় পদ্ধতিতে মাছ ধরায় মেতে উঠেছে ছোট-বড় সব বয়সের মানুষ। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের স্থানীয়ভাবে তৈরির বিভিন্ন জাল ও বাশেঁর তৈরি এসব দিয়ে ছোট মাছ ধরার ধুম পড়েছে।

খানসামার কয়েক গ্রামে দেখা যায়, অবিরাম বর্ষণে গ্রাম অঞ্চলের ছোট ছোট পুকুর ডোবার বিভিন্ন জাতের মাছ ভেসে গেছে। এসব মাছ ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের ফসলি জমিতে। এই সুযোগে গ্রাম অঞ্চলের লোকজন মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। বর্ষার এ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে বাশেঁর তৈরি ডাইরকি কিংবা ভুরঙ্গ। পানির মধ্যে এটি রেখে দেওয়া হয়। চলাচলের সময় ছোট ছোট মাছগুলো বাশেঁর তৈরী এই ফাঁদের ভিতরে আটকা পড়ে। এটি গ্রাম অঞ্চলের মাছ ধরার খুব জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।

খানসামার বড় হাট পাকেরহাটে দেখা যায়, প্রতিটি ডাইরকি কিংবা ভুরঙ্গ আকার ভেদে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া, গোয়ালডিহি, গারপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী নীলফামারী, রাণীরবন্দর, সৈয়দপুর এলাকার ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩/৪ হাজার এসব বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। এছাড়াও আবার অনেকে নিজে হাতে তৈরি করে বিক্রি করছেন।

গোয়ালডিহি গ্রামের গিরিস ও গণেশ রায়, রাণীরবন্দর এলাকার মজিবর জানায়, বছরের বর্ষা মৌসুমের ছয়মাস তারা এ মাছ ধরার এসব তৈরির কাজ করেন। প্রতিটি ডাইরকি কিংবা ভুরঙ্গ তৈরিতে বাঁশ ও সুতা মিলে ১৫০/২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আর বিক্রি হয় ৩০০-৫০০ টাকা মূল্যে। বাশঁ কেনা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ তৈরিতে যে কষ্ট আর খরচ হয় সে তুলনায় লাভ বেশি হয় না।

তবে এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। দিন-দিন খাল-বিল ও নদী নালার সংখ্যা কমে যাওয়ায় মাছ শিকারীর সংখ্যাও কমে গেছে যার কারনে এর চাহিদাও কমেছে। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেশি সে তুলনায় তারা এর ভাল দাম পাচ্ছেন না। এ শিল্প বাচাঁতে স্বল্প সুদে ঋণ দিলে তাদের কার্যক্রম আরো গতিশীল করা যায় বলে জানান তারা।

পাকেরহাটের শেলু মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমি চাই বা ডাইরকি দিয়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কেজি মাছ ধরতাম, তা বিক্রি করতাম ৩ থেকে ৪ শত টাকা। যা দিয়ে আমার সংসার চলতো কিন্তু বর্তমানে খাল-বিল ভরাট থাকলেও দেখা মিলছেনা মাছের তাই অন্য কাজ করে চলতে হচ্ছে।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

মাছ ধরার সামগ্রী চাই/ডাইরকির চাহিদা বেড়েছে

আপডেট সময় : ১২:০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০

বর্ষায় টানা বৃষ্টিপাতে দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে নদী-নালা ও জমিতে পানি ভরে গেছে। তাই দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, কাহারোলসহ বিভিন্ন উপজেলায় জমে উঠেছে মাছ ধরার সামগ্রীর বাজার।

বর্ষায় এসব সামগ্রীকে মাছ ধরার ‘চাই’ যা স্থানীয় ভাষায় ডাইরকি কিংবা ভুরঙ্গ বলা হয়। আবার কোন এলাকায় খোলসুন (ভোরং) বলা হয়।
বর্ষায় নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে খাল বিল ডোবা ও নিম্ন অঞ্চল পানির নিচে। কয়েকদিন ধরেই চলছে অবিরাম ধারায় বৃষ্টি। অনেক পুকুর ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে মাছ। ফলে দেশীয় পদ্ধতিতে মাছ ধরায় মেতে উঠেছে ছোট-বড় সব বয়সের মানুষ। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের স্থানীয়ভাবে তৈরির বিভিন্ন জাল ও বাশেঁর তৈরি এসব দিয়ে ছোট মাছ ধরার ধুম পড়েছে।

খানসামার কয়েক গ্রামে দেখা যায়, অবিরাম বর্ষণে গ্রাম অঞ্চলের ছোট ছোট পুকুর ডোবার বিভিন্ন জাতের মাছ ভেসে গেছে। এসব মাছ ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের ফসলি জমিতে। এই সুযোগে গ্রাম অঞ্চলের লোকজন মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। বর্ষার এ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে বাশেঁর তৈরি ডাইরকি কিংবা ভুরঙ্গ। পানির মধ্যে এটি রেখে দেওয়া হয়। চলাচলের সময় ছোট ছোট মাছগুলো বাশেঁর তৈরী এই ফাঁদের ভিতরে আটকা পড়ে। এটি গ্রাম অঞ্চলের মাছ ধরার খুব জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।

খানসামার বড় হাট পাকেরহাটে দেখা যায়, প্রতিটি ডাইরকি কিংবা ভুরঙ্গ আকার ভেদে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া, গোয়ালডিহি, গারপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী নীলফামারী, রাণীরবন্দর, সৈয়দপুর এলাকার ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩/৪ হাজার এসব বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। এছাড়াও আবার অনেকে নিজে হাতে তৈরি করে বিক্রি করছেন।

গোয়ালডিহি গ্রামের গিরিস ও গণেশ রায়, রাণীরবন্দর এলাকার মজিবর জানায়, বছরের বর্ষা মৌসুমের ছয়মাস তারা এ মাছ ধরার এসব তৈরির কাজ করেন। প্রতিটি ডাইরকি কিংবা ভুরঙ্গ তৈরিতে বাঁশ ও সুতা মিলে ১৫০/২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আর বিক্রি হয় ৩০০-৫০০ টাকা মূল্যে। বাশঁ কেনা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ তৈরিতে যে কষ্ট আর খরচ হয় সে তুলনায় লাভ বেশি হয় না।

তবে এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। দিন-দিন খাল-বিল ও নদী নালার সংখ্যা কমে যাওয়ায় মাছ শিকারীর সংখ্যাও কমে গেছে যার কারনে এর চাহিদাও কমেছে। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেশি সে তুলনায় তারা এর ভাল দাম পাচ্ছেন না। এ শিল্প বাচাঁতে স্বল্প সুদে ঋণ দিলে তাদের কার্যক্রম আরো গতিশীল করা যায় বলে জানান তারা।

পাকেরহাটের শেলু মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমি চাই বা ডাইরকি দিয়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কেজি মাছ ধরতাম, তা বিক্রি করতাম ৩ থেকে ৪ শত টাকা। যা দিয়ে আমার সংসার চলতো কিন্তু বর্তমানে খাল-বিল ভরাট থাকলেও দেখা মিলছেনা মাছের তাই অন্য কাজ করে চলতে হচ্ছে।