বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে গভীর রাতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে এক ব্যক্তি ও তার মেয়েকে মারধর করতে করতে থানায় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
কথিত ধর্ষনের ঘটনায় মামলা দায়ের করানোর নামে থানায় নিয়ে নির্যাতন করে তাদের দিয়ে লিখিত অভিযোগ নেয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন ভূক্তভোগীরা। তবে গভীর রাতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ কিংবা কাউকে নির্যাতন করে থানায় নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। যদিও এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কোন বক্তব্য দিতে রাজী হয়নি পুলিশের কর্মকর্তারা।
ভূক্তভোগীরা হলেন ওই উপজেলা সদরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চরহোগলা গ্রামের আক্কাস বেপারী (৫০) ও তার মেয়ে মেয়ে সীমা (১৮)।
আক্কাস বেপারীর ছেলে আব্দুর রহিম বেপারী জানান, গত ১৫ দিন আগে তার বোন প্রতিবেশী জুয়েল শাহ্’র বাড়ি গেলে সেখানে সে তার হাত ধরে টানাটানি করে সে। বোনের মান সন্মান এবং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা দুই পক্ষ স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার দুপুরে থানার এসআই শহিদ স্থানীয় শালিসদার মো. ফিরোজ মাস্টারকে ফোন করে ওই ঘটনায় থানার খরচ বাবদ ১ লাখ টাকা দাবী করেন। টাকা না দিলে সমঝোতা ভেঙ্গে মামলা করার হুশিয়ারী দেন তিনি।
রহিম বেপারী জানান, গত শুক্রবার (২৬ জুন) রাতে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি মো. আবিদুর রহমান তার বাবাকে ফোন দিয়ে থানায় গিয়ে এ ঘটনায় অভিযোগ দিতে বলেন। তার বাবা তাদের কোন অভিযোগ নেই এবং থানায় অভিযোগ দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওসি’র নেতৃত্বে এসআই শহিদ এবং এএসআই অনিমেষ সহ ৪জন পুলিশ সদস্য সাদা পোষাকে তাদের বাড়ি গিয়ে ডাকাডাকি করে। তারা রাতের বেলা দরজা খুলতে রাজী না হওয়ায় পুলিশ তাদের ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে ঘরের ভেতরের আরেকটি দরজা ভেঙ্গে তার বাবাকে আটক করে। এ সময় তারা তার বাবাকে বেদম মারধর করে। পরে তার বাবা এবং বোনকে ওই রাতেই টানাটানি করে থানায় নিয়ে যায়।
শনিবার (২৭ জুন) সকালে আব্দুর রহিম তার বাবা ও বোনের সাথে দেখা করতে থানায় সামনে গেলে তাকেও থানায় নিয়ে মারধর করে আটকে রাখে পুলিশ। পরে তার কাছ থেকেও সাদা কাগজে সাক্ষর নেয় তারা। অপরদিকে তার বাবার কাছ থেকেও জোরপূর্বক অভিযোগে সাক্ষর আদায় করে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য আব্দুর রহিমের।
মুঠোফোনে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি আবিদুর রহমান বলেন, স্থানীয় শালিসদারের কাছে এসআই শহিদের টাকা চাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। মেয়েকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় আক্কাস বেপারী থানায় অভিযোগ দিয়েছে। মামলা রুজু করে পুলিশ ওই মেয়েটির ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেলে পাঠিয়েছে।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক বলেন, ওই গ্রামের একটি মেয়ে পাশের বাড়ি কাজ করতে যেয়ে ধর্ষিতা হয়েছে। এতে মেয়েটি অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে তার অবৈধ গর্ভপাত করা হয়। তারা ভয়ে মামলা করতে পারেনি। খবর পেয়ে পুলিশ ওই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে থানায় মামলা দায়ের হয়। ওই ব্যক্তির ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ কিংবা তাদের মারধর করে জোর পূর্বক অভিযোগ আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয় বলে মুঠোফোনে দাবী করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক।