ঢাকা ০৭:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মোংলা বন্দরে করোনার প্রভাব-রাজস্ব আদায়ের টার্গেটে পৌঁছাতে পারেনি

বিদায়ী অর্থ বছরে ৪ হাজার ৬শ’ ৯২ কোটি টাকা টার্গেটের বিপরীতে ৩ হাজার ১শ’ ৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে মোংলা কাস্টমস হাউজ। তবে আয়ের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও ৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১শ’ ১৫ কোটি টাকা মুনাফা (লাভ) অর্জন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয় এবং মুনাফা নির্ভর করছে সমুদ্র পথে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ওপর। কিন্তু করোনা মহামারীর কিছুটা প্রভাব পড়লেও আয়ের ক্ষেত্রে বিগত বছরের তুলনায় তেমন একটা তারতম্য হয়নি।

মোংলা কাস্টমস হাউজ ও বন্দর সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উৎপাদিত পাটজাত পণ্য রপ্তানির উপর ভর করে ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় এবং চাহিদার প্রয়োজনে এক সময় আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের প্রসার ঘটে এ বন্দরে। আর কর্মচাঞ্চল্যতায় এগিয়ে যায় সামুদ্রিক এ বন্দরটি। সরকার ও রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতনে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতা ও চড়াই উৎরাই পার করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মোংলা বন্দর।

এ বন্দরের চলমান কর্মচাঞ্চল্যতায় হঠাৎ কিছুটা আঘাত হানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার প্রার্দুভাব। তবে এ মহামারী ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় নানা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে মোংলা কাস্টমস হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর ব্যবহারকারীদের সার্বিক সুবিধাদি প্রদানে করোনার ঝটুকি নিয়ে কর্মতৎপরতায় পিছু হটেননি সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের নিরলস পরিশ্রমে এখনও কর্মচাঞ্চল্য রয়েছে বন্দরের কার্যক্রম। এতো সকল প্রচেষ্টার মধ্যেও করোনার কিছুটা প্রভাব পড়ে এ বন্দরে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এ বন্দরে ৯শ’ ১২টি দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে আসে। হ্যান্ডিলিং হয় ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন বাল্ক কার্গো এবং ৫৭ হাজার ৭শ’ ৩২ টিইউজ কন্টেইনার জাত পণ্য। আর ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৯শ’৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে ভেড়ে এবং ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। একই সঙ্গে ৫৯ হাজার ৪শ’ ৫৭ টিইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।

এদিকে বন্দরে আসা আমদানি-রপ্তানি পণ্যে (বাল্ব কার্গো) সিমেণ্ট, ক্লিংকার এলপিজি গ্যাসের কাচামাল ও রিকন্ডিশন গাড়ি এবং কন্টেইনার জাত পণ্যের ওপর নির্ভর করে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে কাস্টমসের রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১শ’ ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এ আয় ছিল ৩ হাজার ২শ’ ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বিগত অর্থ বছরের তুলনায় গেলো অর্থ বছরে শতকরা ২ দশমিক ৪৭ ভাগ কমেছে রাজস্ব আয়। আর বছরের শুরুতে রাজস্ব আয়ের টার্গেট নির্ধারণ ছিল ৪ হাজার ৬শ’ ৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

এ দিকে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি খাতের পণ্য হ্যান্ডলিং করে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে ৩শ’ ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে ২শ’ ৫ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার পরও (৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে) ১শ’ ১৫ কোটি টাকা মুনাফা (লাভ) অর্জন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৩শ’ ২৯ কোটি ১২ লাখ টাকা আয় এবং ১শ’ ৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার পরও বিগত ওই বছরে ১শ’ ৩৩ কোটি টাকা বন্দরের মুনাফা অর্জন হয়।

রাজস্ব আদায়ে মোংলা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মাদ সেলিম শেখ বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব বাজারে। যে কারনে চীন নির্ভর আমদানি-রপ্তানি কমেছে। এছাড়া আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ি রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত। গাড়ির এখাতে ভাটা পড়ায় রাজস্ব কমেছে।

বিশ্বব্যাপী মারন ঘাতক ভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাজস্ব আয়ের ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকবে। তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বিগত বছরের তুলনায় বিদেশ নির্ভর খাদ্য শস্য আমদানি হ্রাস এবং করোনাকালীন সময় বেশির ভাগ (অধিক ড্রাফটের) বাণিজ্যিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ঘুরে যথা সময় মোংলা পৌঁছাতে পারেনি।

তাই বন্দরের আয় গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গেলো অর্থ বছরে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন’ সমুদ্র এ বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে নিয়ে প্রায় ১০ লাখ টিইউজ কন্টেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবো। আর চলমান বিশ্ব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানায় বন্দর চেয়ারম্যান।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

আপলোডকারীর তথ্য

রাহুল গান্ধীকে পার্লামেন্টে অযোগ্য ঘোষণা

মোংলা বন্দরে করোনার প্রভাব-রাজস্ব আদায়ের টার্গেটে পৌঁছাতে পারেনি

আপডেট সময় : ০৬:০১:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুলাই ২০২০

বিদায়ী অর্থ বছরে ৪ হাজার ৬শ’ ৯২ কোটি টাকা টার্গেটের বিপরীতে ৩ হাজার ১শ’ ৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে মোংলা কাস্টমস হাউজ। তবে আয়ের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও ৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১শ’ ১৫ কোটি টাকা মুনাফা (লাভ) অর্জন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয় এবং মুনাফা নির্ভর করছে সমুদ্র পথে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ওপর। কিন্তু করোনা মহামারীর কিছুটা প্রভাব পড়লেও আয়ের ক্ষেত্রে বিগত বছরের তুলনায় তেমন একটা তারতম্য হয়নি।

মোংলা কাস্টমস হাউজ ও বন্দর সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উৎপাদিত পাটজাত পণ্য রপ্তানির উপর ভর করে ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় এবং চাহিদার প্রয়োজনে এক সময় আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের প্রসার ঘটে এ বন্দরে। আর কর্মচাঞ্চল্যতায় এগিয়ে যায় সামুদ্রিক এ বন্দরটি। সরকার ও রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতনে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতা ও চড়াই উৎরাই পার করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মোংলা বন্দর।

এ বন্দরের চলমান কর্মচাঞ্চল্যতায় হঠাৎ কিছুটা আঘাত হানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার প্রার্দুভাব। তবে এ মহামারী ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় নানা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে মোংলা কাস্টমস হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর ব্যবহারকারীদের সার্বিক সুবিধাদি প্রদানে করোনার ঝটুকি নিয়ে কর্মতৎপরতায় পিছু হটেননি সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের নিরলস পরিশ্রমে এখনও কর্মচাঞ্চল্য রয়েছে বন্দরের কার্যক্রম। এতো সকল প্রচেষ্টার মধ্যেও করোনার কিছুটা প্রভাব পড়ে এ বন্দরে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এ বন্দরে ৯শ’ ১২টি দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে আসে। হ্যান্ডিলিং হয় ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন বাল্ক কার্গো এবং ৫৭ হাজার ৭শ’ ৩২ টিইউজ কন্টেইনার জাত পণ্য। আর ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৯শ’৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে ভেড়ে এবং ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। একই সঙ্গে ৫৯ হাজার ৪শ’ ৫৭ টিইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।

এদিকে বন্দরে আসা আমদানি-রপ্তানি পণ্যে (বাল্ব কার্গো) সিমেণ্ট, ক্লিংকার এলপিজি গ্যাসের কাচামাল ও রিকন্ডিশন গাড়ি এবং কন্টেইনার জাত পণ্যের ওপর নির্ভর করে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে কাস্টমসের রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১শ’ ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এ আয় ছিল ৩ হাজার ২শ’ ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বিগত অর্থ বছরের তুলনায় গেলো অর্থ বছরে শতকরা ২ দশমিক ৪৭ ভাগ কমেছে রাজস্ব আয়। আর বছরের শুরুতে রাজস্ব আয়ের টার্গেট নির্ধারণ ছিল ৪ হাজার ৬শ’ ৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

এ দিকে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি খাতের পণ্য হ্যান্ডলিং করে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে ৩শ’ ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে ২শ’ ৫ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার পরও (৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে) ১শ’ ১৫ কোটি টাকা মুনাফা (লাভ) অর্জন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৩শ’ ২৯ কোটি ১২ লাখ টাকা আয় এবং ১শ’ ৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার পরও বিগত ওই বছরে ১শ’ ৩৩ কোটি টাকা বন্দরের মুনাফা অর্জন হয়।

রাজস্ব আদায়ে মোংলা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মাদ সেলিম শেখ বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব বাজারে। যে কারনে চীন নির্ভর আমদানি-রপ্তানি কমেছে। এছাড়া আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ি রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত। গাড়ির এখাতে ভাটা পড়ায় রাজস্ব কমেছে।

বিশ্বব্যাপী মারন ঘাতক ভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাজস্ব আয়ের ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকবে। তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বিগত বছরের তুলনায় বিদেশ নির্ভর খাদ্য শস্য আমদানি হ্রাস এবং করোনাকালীন সময় বেশির ভাগ (অধিক ড্রাফটের) বাণিজ্যিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ঘুরে যথা সময় মোংলা পৌঁছাতে পারেনি।

তাই বন্দরের আয় গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গেলো অর্থ বছরে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন’ সমুদ্র এ বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে নিয়ে প্রায় ১০ লাখ টিইউজ কন্টেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবো। আর চলমান বিশ্ব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানায় বন্দর চেয়ারম্যান।