প্রচুর ঠান্ডা শরীর কোনভাবে সহ্য করতে পারছেনা। পানিতে নামতেই পারিনি। জাল ফেলতে পারিনি। গত সোমবার দুপুরের পর বিলে জাল ছিল, মাছ ধরতে যায়, নৌকা থেকে পানিতে নামামাত্র ঠান্ডা সহ্য করতে পারিনি। মঙ্গলবার আরো ঠান্ডা। বিলে নামতেই পারিনি, জানিনা কয়দিন এমন অবস্থা চলবে মঙ্গলবার বিকেলের দিকে তানোর পৌর সদর শীতলী পাড়া গ্রামের মৎস্যজীবি আব্দুল মজিদ পরিচিত নাম বিশু কথাগুলো কষ্টে বের করেন। আরেক মৎস্যজীবী একই পাড়ার আজিজুর জানান, মাছ না মারতে পারলে সংসার চলে না। গোল্লাপাড়া হাটের দিন ছিল মঙ্গলবার, হয়নি বাজার করা। বুধবার সারাদিন রাত একই রকম ঠান্ডা সেই সাথে ঝড়ের মত বাতাস, কোন ভাবেই বিলে যাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে সূর্যের আলো দেখা গেলেও বাতাসের কারনে তাপমাত্রা একেবারেই নেই। এতে করে দরিদ্র অসহায় দীন মজুর ও ছিন্নমুল জনগোষ্ঠী চরম বেকায়দায় পড়েছে।
ঘনকুয়াশা ও দমকা হাওয়ার দাপটে কনকনে হাড়কাঁপানো শীত পড়ছে উত্তরের জনপদ রাজশাহীর তানোরে। মৌসুমের প্রথম দফার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এখন নেই। তবে রাত ও দিনের তাপমাত্রার পারদ প্রায় একই থাকছে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদে তেমন একটা ব্যবধান না থাকায় দিনেও কনকনে শীত অনুভব হচ্ছে। এতে বিপর্যস্ত উপজেলার স্বাভাবিক জনজীবন।
মঙ্গলবার ভোরে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তামপাত্রা ১৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার একই রকম আবহাওয়া ছিল। ঘন কুয়াশার ঢাকা ছিল। আর সারা রাত ও দিনজুড়ে দমকা বাতাসের দাপট চলমান রয়েছে। বাতাসের কারণেই শীতের অনুভূতি হাড় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে। এতে ঘরের বাইরে হাড়কাঁপানোর শীতের প্রকোপে জনজীবনে একধরনের স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। এ কয় দিন ঘরের বাইরে মানুষের চলাচল তুলনামূলক অনেক কম ছিল। তবে শ্রমিক ভ্যান অটো চালকরা বাধ্য হয়ে বের হলেও লোকজন না থাকার কারনে তেমন ভাড়া মারতে পারছেন না। যাকে বলে একান্তই প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হয়নি। এ ছাড়া যারা বাইরে বের হয়েছেন তারা মোটা গরম কাপড় শরীরে মুড়িয়ে নিয়েছেন।
সন্ধ্যার পর থেকে দিনের একটি অংশ ঘন কুয়াশার দাপট থাকায় যান চলাচলে অস্থরিবতা দেখা গেছে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলোও গতি কমিয়ে দিনের বেলাতেও হেটলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। এ ছাড়া খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
অটো ভ্যান নিয়ে বের হয়েছিলেন ওহাব । তিনি বলেন, গত তিনদিন শীত বেশি লাগছে। রাতে অতিরিক্ত শীতের কারণে তিনি সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাসায় চলে যান। দিনের বেলাতেই মূলত তিনি গাড়ি চালান। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলায় তেমন ভাড়া হয়নি। মাথায় কিস্তির বোঝা আছে। তাই এক-দুজন যাত্রী নিয়েই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ভাড়া মেরেছেন।
কৃষি শৃমিক মোস্তফা বলেন, উপজেলায় আলুর পরিচর্যা চলছে। সকালে জমিতে যেতে হচ্ছে। শীত থেকে বাচতে একাধিক মোটা কাপড় পরেও রক্ষা হচ্ছেনা। গরমের সময় যেমব ঘামে শরীর ভিজে যায়, ঠিক একই ভাবে কুয়াসা ও বাতাসের কারনে জামা কাপড় ভিজে যাচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে সূর্যের আলোর দেখা মিলেছে। কিন্তু বাতাসের কারনে ঠান্ডা কমেনি।
আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কারও গায়ে লাগছে না। হিমেল হাওয়ার দাপটেই কাঁপছে উত্তর জনপদের মানুষ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আবারও শৈত্যপ্রবাহের ইঙ্গিত দিচ্ছে আবহওয়া দপ্তর।
এদিকে গত সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ছিল ১১ ডিগ্রি
সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, ডিসেম্বরে প্রথম দফার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কেটেছে। জানুয়ারি প্রথম দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেটা তুলনামূলক বেশি। আর দ্বিতীয় দিনে তাপমাত্রা নেমে ১১ দশমিকের ঘরে। মঙ্গলবার ১৩ এর ঘরে থাকলেও শীতের অনুভূতি বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে বেশি। সামনে তাপমাত্রা আরও নিচে নামবে বলেও জানান তিনি।