টানা ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। তিস্তার পানি বিপদ সীমার ৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১২ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ। হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার ৮ ইউনিয়ন রক্ষাকারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়ি বাধ।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বির্স্তীণ জনপদ। উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি হুহু করে বাড়তে থাকায় চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়েছে বেলকা, হরিপুর, কাপাশিয়া, শ্রীপুর, চন্ডিপুর, তারাপুর, শান্তিরাম ও কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের ১২ হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে কাচাপাকা বাড়িঘর ও ফসলি জমি।
সরকারি ভাবে পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই পরিবার পরিজন, গবাদি পশু-পাখি নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বেরি বাঁধ ও উঁচু স্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদি পশু হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা। বন্যার পানিতে বাড়িঘর নিমজ্জিত থাকায় রান্নার অভাবে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন যাপন করছেন তারা।
গৃহহারা হয়ে খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন অনেকেই। বানভাসিদের মধ্যে তীব্র খাদ্যভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। বিশুদ্ধ পানীয়, শুকনা খাবার ও জ্বালানী না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব পরিবার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৭০০ পরিবারের ৪৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে তারাপুর ইউনিয়নে ৬০০, বেলকায় দুই হাজার ৫০০, হরিপুরে ৩ হাজার ৩০০, কঞ্চিবাড়ীতে ২৫০, শ্রীপুরে ৩০০, চন্ডিপুরে ২৫০ ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়েছেন। তবে সরকারি হিসাবের চেয়ে প্রকৃত পানিবন্দীর সংখ্যা আরো বেশী হবে বলে স্থানীয়রা জানান। তারা জানান, ৫০ হাজারের বেশী লোক পানিবন্দী হয়েছে।
দিন দিন পানি বন্দীর সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত ৮৫ মে.টন চাল, ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, শিশু খাদ্য বাবদ এক লাখ টাকা, শুকনো খাবার ৪৫০ প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ জানান,বন্যার পানিতে ৬০০ হেক্টর পাট, ৪০ হেক্টর বীজতলা, ১৭ হেক্টর সবজি ও২৮ হেক্টর আউস নিমজ্জিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গাইবান্ধার কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়,বর্তমানে সুন্দরগঞ্জে তিস্তার পানি বিপদ সীমার ৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী লুতফুল হাসানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোঘ করার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।