মো, জহুরুল ইসলাম খোকন সৈয়দপুর ( নীলফামারীর) প্রতিনিধি
রাজনৈতিক এক নেতার মদদে নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। একইসাথে একাধিক বিল্ডিং তৈরীর কাজ চলছে মহাসমারোহে। শহরের প্রধান সড়কে প্রকাশ্যেই করা হয়েছে এবং হচ্ছে এসব নির্মাণ কাজ। কোন রকম অনুমোদন ছাড়াই এই কর্মযজ্ঞ চললেও নির্বিকার রেলওয়ে প্রশাসনসহ পৌর কর্তৃপক্ষ।
শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কেই চলছে পাঁচটি ভবনের কাজ। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান নিরিবিলি হোটেল। যা পাকিস্তান আমল থেকেই টিনসেড ছিল। এখন সেখানে করা হচ্ছে ৬ তলা ভবন। প্রায় ১০ শতক জায়গায় এই স্থাপনা করা হচ্ছে।
এর সামান্য দূরেই সড়কের বিপরীত পাশে শমশের কটন হাুউজের পিছনে আরেকটি ৫ তলা ভবন করছে ইউসুফ ব্রাদার্স গং। এটিও টিনসেড থেকে বহুতল ভবনে রুপান্তরিত করা হচ্ছে। এর আয়তনও প্রায় ৮ শতক।
এই সড়কেই সাবেক মুক্তিযোদ্ধা অফিস সংলগ্ন আরেকটি স্থাপনা সংষ্কারের নামে সম্প্রতি নতুন ভবন নির্মান করা হয়েছে। এটি করেছেন রেলওয়ের সাবেক ঠিকাদার মৃত নয়মুল চৌধুরীর ছেলে রেজওয়ান। এর সামান্য উত্তরে আল আরাফা ব্যাংকের পাশে আরেকটি বিল্ডিং করেছে শাওন নামে একজন। প্রায় ৮ শতক জায়গায় করা হচ্ছে ৮ তলা ভবন।
এদিকে শহীদ জহুরুল হক সড়কে বহুতল ভবন করেছে ওষুধ ব্যবসায়ী পাপ্পু। এখানে প্রায় ৬ শতক জমির উপর ৫ টি দোকান ছিল। গতমাসে ভোররাতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দোকানগুলো পুড়ে যায়। সেখানে এখন ৬ তলা বিল্ডিং তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়। এই জায়গায় থাকা ২টি বিশালাকৃতির গাছ কেটে বিক্রিও করা হয়েছে । অভিযোগ রয়েছে বিল্ডিং করার জন্যই আগুন লাগার নাটক সাজানো হয়েছে।
ওই সড়কে তোফাজ্জল প্রিন্টিং প্রেস সংলগ্ন আরেকটি বহুতল ভবন করা হচ্ছে। এটিও করছে ইউসুফ ব্রাদার্স গং। এখানেও প্রায় ৪ শতক জায়গাজুড়ে চলছে নির্মান কাজ । সড়কটির উত্তরদিকে কলিম মোড় এলাকায় আরও দুইটি টিনসেড ভেঙে দুইতলা ও তিনতলা ভবন করা হচ্ছে।
ইতোপূর্বে কলাহাটিতে মৃধা প্লাজা, চাউলহাটিতে দুইটি তিনতলা ভবন, শহীদ ডা. সামসুল হক সড়কে তিনটি ভবন, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে পাবনাইয়া ভবন, মুন্সিপাড়ায় রেলওয়ে কোয়াটার ভেঙে দুইতলা বিল্ডিং করেছে ঠিকাদার সাইফুল। গত তিন থেকে ছয়মাসে এগুলো করা হয়েছে।
রাজনৈতিক এক নেতার মদদে এসব বহুতল ভবন নির্মান কাজ চলছে সম্পূর্ণ অনুমোদনহীনভাবে। রেলওয়ে বা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোন বৈধতা ছাড়াই এই কর্মযজ্ঞ চললেও তারা নির্বিকার। অভিযোগ রয়েছে, সৈয়দপুর উপজেলার এক রাজনৈতিক নেতা,রেলওয়ে ও পৌর কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে মৌখিক অনুমোদনের নামে কাজ করছে বিল্ডিং নির্মানকারীরা।
রেলওয়ের ও পৌরসভার মধ্যে মামলা চলমান থাকায় কেউই লিখিত অনুমোদন দিচ্ছেনা। তবে কেউ কাজ করলেও বাধাও দেয়া হচ্ছেনা। একারণেই সবাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে। আর টাকা দিলেই রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় রেলওয়ে বিভাগ নিরব থাকছে। একইভাবে পৌরসভাও নিরবতা পালন করছে।
এছাড়াও রেলওয়ে বাজার এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় রেলওয়ের জমিতে করা হচ্ছে একাধিক ভবনসহ বাড়ি তৈরী। যেন হিড়িক পড়েছে অবৈধ স্থাপনা নির্মানের। সেই সাথে কোয়াটার, বাংলো, জায়গা ও তৈরী বাড়ি ঘর দোকান ক্রয় বিক্রয় হাতবদল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব প্রতিরোধ না করে উল্টো কমিশন নিয়ে অবৈধ অর্থ পকেটস্থ করছে রাজনৈতিক এক নেতা, আইওডাব্লু অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সেইসাথে পরিত্যক্ত বা বরাদ্দহীন দেখিয়ে নিজেদের হেফাজতে নেয়া কোয়াটার বহিরাগত ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি বা ভাড়া দেয়া, খালি জায়গা দখল ও বাড়ি-দোকান তৈরীর সুযোগ করে দেয়া, উদ্ধার করা গাছ, ইট, রেললাইন, জানালা-দরজার কাঠ, এঙ্গেল স্টোরে সংরক্ষণ করার পরিবর্তে বাহিরে বিক্রি করে দিচ্ছে তারা।
এসব বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষ রিপোর্ট করতে ঘটনাস্থল গেলে, রাজনৈতিক দলের এক নেতা সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে চলেছে।
রেলওয়ের ভূসম্পত্তি ও স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষের উপ সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু) শরিফুল ইসলাম বলেন, মূলতঃ রেলওয়ে ২.৭৫ একর জমি যা সৈয়দপুর পৌরসভার অধীন। তাই এবিষয়ে আমাদের কিছুই করার নাই। এটি দেখবে রেলওয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু ওই জমি নিয়ে মামলা আদালতে চলমান। সেকারণে সেখানে হস্তক্ষেপ করা যাচ্ছেনা। তিনি এর দায় পৌর কর্তৃপক্ষের বলে জানান।
তবে এসব বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা হুসাইন সরিফ জানান, রেলওয়ের যে জমি নিয়ে রেলওয়ে ও পৌরসভার মামলা চলমান সে জমিতে কেউই কোন প্রকার স্হাপনা নির্মাণ করতে পারবে না, মামলা চলমান জমিতে স্হাপনা নির্মাণে যদি পৌরসভা নকশা দেয়, তাহলে সেটা হবে অবৈধ।
পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বলেন, রেলওয়ের জায়গায় আমরা কোন বিল্ডিং তৈরীর নকশা পাস বা অনুমোদন দেইনি। তারপরও একাধিক ভবন নির্মান হলে তা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দেখার কথা।
এবিষয়ে স্হানীয়রা জানান, পৌরসভা যদি রেলওয়ের জমিতে স্হাপনা নির্মাণে নকশা না দিয়ে থাকেন, তাহলে মামলা চলমান জমিতে স্হাপনা নির্মাণ হচ্ছে কি ভাবে।
জানতে চাইলে রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন জানান, উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।